ঢাকা ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফরিদগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যুর অভিযোগ

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:৫১:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
  • ১২২ Time View

ছবি-ত্রিনদী

ফরিদগঞ্জে ফারিয়া আক্তার নামের গর্ভবতী এক মায়ের মৃত্যু হয়েছে। গর্ভধারণ থেকে একই চিকিৎসকের অধীনে প্রায় ৯ মাস থাকার পরও ‘প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা’ শনাক্ত করতে না পারার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসক নুসরাত জাহান বিন্তির বিরুদ্ধে।

এর আগে গত ২০শে জুলাই লাইফ জেনারেল হাসপাতালে রোগীর সিজারিয়ান অপারেশনের পর প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা শনাক্ত হয়। পরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ঢামেকে রেফার করা হলে গত ২৩শে জুলাই সেখানে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রোগীর স্বজন, এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এদিকে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন বলেছেন, সময়মতো রোগ শনাক্ত ও সঠিকভাবে চিকিৎসা হলে নবজাতক ও মা দু’জনকে বাঁচানো সম্ভব হতো। জানা যায়, উপজেলার গজারিয়া গ্রামের খান বাড়ির শাহপরান রাব্বির স্ত্রী ফারিয়া আক্তার (২৩) লাইফ জেনারেল হাসপাতালে ৯ মাসের অধিক ডাক্তার বিন্তির তত্ত্বাবধানে ছিলেন।

গত ২০শে জুলাই অপারেশনের জন্য ফারিয়াকে ওটিতে নেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার রোগীর শ্বশুরকে ডেকে ওটিতে নিয়ে বলেন, পেটের চামড়া কেটে দেখা যাচ্ছে রোগীর জরায়ুতে টিউমার আছে। তাড়াতাড়ি ঢামেকে নিয়ে যান। তারা ঢামেকে নিলে অপারেশন করে জীবিত বাচ্চা বের করেন। পরে ২৩শে জুলাই বিকালে প্রসূতি মারা যান। রোগীর শ্বশুর মাহবুবুল আলম বলেছেন, দু’টি কক্ষ পেরিয়ে ৩য় কক্ষে ওটি।

তিনটি কক্ষের ফ্লোরে রক্ত মাড়িয়েছি। ডাক্তার আমাকে বলেছে, রোগীর পেটে টিউমার আছে। ঢামেকে টিউমার পাওয়া যায়নি। ডা. বিন্তি বলেছেন, এর আগে একটি সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। ওই রোগীর কিছু রক্ত মেঝেতে পড়েছিল। ওটি কক্ষ পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত না করে পরবর্তী অপারেশন কীভাবে করলেন। এমন প্রশ্নের তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। নিহতের স্বামী বলেছেন, ডা. বিন্তি শুরু থেকে নিজে অন্তত ১৫-১৬টি আল্ট্রা করেছেন। প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা ধরতে পারলেন না কেন? তিনি অদক্ষ।

তিনি বলেন, ঢামেকের সনদে লেখা রয়েছে ‘প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা’জনিত গর্ভাবস্থার জটিল পরিস্থিতিতে জরুরি অপারেশনের পর সেপটিক শক, হাইপোভলিউমিক শক মৃত্যুর কারণ। ডাক্তার নুসরাত জাহান বিন্তি বলেন, আমি আল্ট্রা করে অস্বাভাবিক কিছু দেখিনি। চামড়া কেটে দেখলাম জরায়ুর পজিশন প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা পর্যায়ে আছে। রোগীর শ্বশুরকে ওটিতে এনে দেখাই এবং চামড়া সেলাই করে ঢামেক হাসপাতালে রেফার করে দেই।

এ বিষয়ে গাইনি বিশেষজ্ঞসহ একাধিক চিকিৎসক জানান, শত/হাজার রোগীর মধ্যে ২/১ জনের ‘প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা’, ‘প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা ও ‘প্লাসেন্টা পেনক্রিয়েটা-এ তিনটি অস্বাভাবিক পজিশন দেখা যায়। সঠিক সময়ে শনাক্তকরণ, বিশেষায়িত হাসপাতাল, যেমন ঢামেক ও পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা ও অপারেশন হলে রোগী ও নবজাতককে বাঁচানো সম্ভব হতো। এ অবস্থায়, ১৬-১৮ সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে শনাক্ত করা ও পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়।

ডা. বিন্তি বলেছেন, আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ‘প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা’ পাইনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আল্ট্রাতে সব সময় ‘প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা’ ধরা পড়ে না! আপনি পাস না করেও ভিজিটিং কার্ড ও প্যাডে ‘এফসিএস-শেষ পর্ব, গাইনি অ্যান্ড অবস লিখেছেন কেন?

ফরিদগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যুর অভিযোগ

উত্তরে তিনি বলেন, পড়ালেখা অবস্থায় লেখা যায়। হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. পরেশ চন্দ্র বলেছেন, সব সময় আল্ট্রাতে ধরা না-ও পড়তে পারে। আমাদের হাসপাতালের কোনো ব্যর্থতা নেই। তা হলে, রোগ শনাক্ত হবে কীভাবে-এমন প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার নুর আলম বলেছেন, আল্ট্রাতে প্লাসেন্টার পজিশন ধরা পড়ে। সময়মতো শনাক্ত করে, বিশেষায়িত হাসপাতালে নবজাতক ও মাকে বাঁচানো সম্ভব। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা-এটাই বড় প্রশ্ন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

মতলবে জমি সংক্রান্ত বিরোধে, প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত ২, থানায় অভিযোগ 

ফরিদগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যুর অভিযোগ

Update Time : ১০:৫১:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

ফরিদগঞ্জে ফারিয়া আক্তার নামের গর্ভবতী এক মায়ের মৃত্যু হয়েছে। গর্ভধারণ থেকে একই চিকিৎসকের অধীনে প্রায় ৯ মাস থাকার পরও ‘প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা’ শনাক্ত করতে না পারার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসক নুসরাত জাহান বিন্তির বিরুদ্ধে।

এর আগে গত ২০শে জুলাই লাইফ জেনারেল হাসপাতালে রোগীর সিজারিয়ান অপারেশনের পর প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা শনাক্ত হয়। পরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ঢামেকে রেফার করা হলে গত ২৩শে জুলাই সেখানে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রোগীর স্বজন, এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এদিকে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন বলেছেন, সময়মতো রোগ শনাক্ত ও সঠিকভাবে চিকিৎসা হলে নবজাতক ও মা দু’জনকে বাঁচানো সম্ভব হতো। জানা যায়, উপজেলার গজারিয়া গ্রামের খান বাড়ির শাহপরান রাব্বির স্ত্রী ফারিয়া আক্তার (২৩) লাইফ জেনারেল হাসপাতালে ৯ মাসের অধিক ডাক্তার বিন্তির তত্ত্বাবধানে ছিলেন।

গত ২০শে জুলাই অপারেশনের জন্য ফারিয়াকে ওটিতে নেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার রোগীর শ্বশুরকে ডেকে ওটিতে নিয়ে বলেন, পেটের চামড়া কেটে দেখা যাচ্ছে রোগীর জরায়ুতে টিউমার আছে। তাড়াতাড়ি ঢামেকে নিয়ে যান। তারা ঢামেকে নিলে অপারেশন করে জীবিত বাচ্চা বের করেন। পরে ২৩শে জুলাই বিকালে প্রসূতি মারা যান। রোগীর শ্বশুর মাহবুবুল আলম বলেছেন, দু’টি কক্ষ পেরিয়ে ৩য় কক্ষে ওটি।

তিনটি কক্ষের ফ্লোরে রক্ত মাড়িয়েছি। ডাক্তার আমাকে বলেছে, রোগীর পেটে টিউমার আছে। ঢামেকে টিউমার পাওয়া যায়নি। ডা. বিন্তি বলেছেন, এর আগে একটি সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। ওই রোগীর কিছু রক্ত মেঝেতে পড়েছিল। ওটি কক্ষ পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত না করে পরবর্তী অপারেশন কীভাবে করলেন। এমন প্রশ্নের তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। নিহতের স্বামী বলেছেন, ডা. বিন্তি শুরু থেকে নিজে অন্তত ১৫-১৬টি আল্ট্রা করেছেন। প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা ধরতে পারলেন না কেন? তিনি অদক্ষ।

তিনি বলেন, ঢামেকের সনদে লেখা রয়েছে ‘প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা’জনিত গর্ভাবস্থার জটিল পরিস্থিতিতে জরুরি অপারেশনের পর সেপটিক শক, হাইপোভলিউমিক শক মৃত্যুর কারণ। ডাক্তার নুসরাত জাহান বিন্তি বলেন, আমি আল্ট্রা করে অস্বাভাবিক কিছু দেখিনি। চামড়া কেটে দেখলাম জরায়ুর পজিশন প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা পর্যায়ে আছে। রোগীর শ্বশুরকে ওটিতে এনে দেখাই এবং চামড়া সেলাই করে ঢামেক হাসপাতালে রেফার করে দেই।

এ বিষয়ে গাইনি বিশেষজ্ঞসহ একাধিক চিকিৎসক জানান, শত/হাজার রোগীর মধ্যে ২/১ জনের ‘প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা’, ‘প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা ও ‘প্লাসেন্টা পেনক্রিয়েটা-এ তিনটি অস্বাভাবিক পজিশন দেখা যায়। সঠিক সময়ে শনাক্তকরণ, বিশেষায়িত হাসপাতাল, যেমন ঢামেক ও পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা ও অপারেশন হলে রোগী ও নবজাতককে বাঁচানো সম্ভব হতো। এ অবস্থায়, ১৬-১৮ সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে শনাক্ত করা ও পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়।

ডা. বিন্তি বলেছেন, আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ‘প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা’ পাইনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আল্ট্রাতে সব সময় ‘প্লাসেন্টা ইনক্রিয়েটা’ ধরা পড়ে না! আপনি পাস না করেও ভিজিটিং কার্ড ও প্যাডে ‘এফসিএস-শেষ পর্ব, গাইনি অ্যান্ড অবস লিখেছেন কেন?

ফরিদগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যুর অভিযোগ

উত্তরে তিনি বলেন, পড়ালেখা অবস্থায় লেখা যায়। হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. পরেশ চন্দ্র বলেছেন, সব সময় আল্ট্রাতে ধরা না-ও পড়তে পারে। আমাদের হাসপাতালের কোনো ব্যর্থতা নেই। তা হলে, রোগ শনাক্ত হবে কীভাবে-এমন প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার নুর আলম বলেছেন, আল্ট্রাতে প্লাসেন্টার পজিশন ধরা পড়ে। সময়মতো শনাক্ত করে, বিশেষায়িত হাসপাতালে নবজাতক ও মাকে বাঁচানো সম্ভব। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা-এটাই বড় প্রশ্ন।