গত ৬ অগাস্ট সানাই মাহবুব আদালতে মূসার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। আসামিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করে আদালত। এরপর মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন মূসা।
মূসার পক্ষে জামিন শুনানি করেন ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম।
শুনানিতে তিনি বলেন, আপনি (আদালত) মামলা আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করেছিলেন। আদালতের নির্দেশে আত্মসমর্পণ করেছি। আমরা একটা হলফনামা দিয়েছে যে আমরা সংসার করতে চাই। আমরা বিষয়টি আপস করে ফেলব। তার জামিন প্রার্থনা করছি।
সানাই মাহবুবের আইনজীবী মিঠুন সাহা জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, যৌতুক দাবির পাশাপাশি আসামি বাদীর কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা নিয়েছে। সেই টাকার কী হবে? টাকা পয়সা নিয়েছে, আবার যৌতুক চাচ্ছে। তাছাড়া তিনি অপরাধ তো করেছেন।
উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক মূসার কাছে জানতে চান তিনি কি করেন?
মূসা জানিয়েছেন তিনি ব্যাংকে চাকরি করতেন। তবে কয়েক মাস আগে তার চাকরি চলে গেছে।
এরপর আদালতের আরও কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দেন মূসা। তিনি আদালতের কাছে সানাই মাহবুবের সঙ্গে সংসার করার ইচ্ছার কথাও প্রকাশ করেন।
আদালতে কথা বলেন সানাই মাহবুবও। এখন কি করছেন? আদালতের প্রশ্নে সানাই মাহবুব বলেন, আমার বাবা ২০১৮ সালে মারা গেছেন। গ্রামে মা থাকেন। মাঝে মধ্যে তার কাছে গ্রামে যাওয়া হয়।
তিনি আদালতকে বলেন, আমি আমার শাশুড়িকে সম্মান করি। নিজের মাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীকেও দেখভাল করতে হয়। আমার বাবাও হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। আমার দায়িত্ব কে নেবে? আমরা দুইটা বোন, কোনো ভাই নেই। আমার দায়িত্ব যদি আমার স্বামী না নেয়, অন্য ছেলে নেবে? সে স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে না। এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ায়।
কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সানাই মাহবুব বলেন। আসামি তো সংসার করতে চায়।
সানাই মাহবুব বলেন, ও যদি চায় আমি সংসার করবো। তবে আমার ভরণপোষণ নিতে হবে। স্বামীরা যেভাবে স্ত্রীকে দেখাশোনা করে যেভাবে দেখভাল করতে হবে। আমি বাসা ভাড়ার অর্ধেকের বেশি টাকা দিয়ে আসছি।
উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত বলেন, এটা আপোসযোগ্য মামলা। আসামি সংসার করতে চায়। তাকে সুযোগ দিতে হবে।
তখন সানাই মাহবুব বলেন, সে আবার কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা নিয়েছে। ভয়েস রেকর্ড আছে। সে আমার টাকা না দিলে, কোথায় টাকা পাবো? আবার বাবা মারা গেছে। আমি কোথায় টাকা পাবো? আমার কাছে টাকা চাইবে কেন?’
আপোসের শর্তে আদালত মূসার জামিনের আদেশ দিয়েছেন বলে সানাই মাহবুবের আইনজীবী মিঠুন সাহা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আগামি মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে আমরা দুইপক্ষ বসবো।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২২ সালের ২৭ মে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের সময়ে সানাই মাহবুবের পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আসবাবপত্র ও ১৫ ভরি সোনা দেওয়া হয়। পরে চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করবে জানিয়ে স্বামী আবূ সালেহ মূসা টাকা চান। সেসময় সানাই নিজের ১২ লাখ টাকা ও বাবার কাছ থেকে আরও ৭ লাখ টাকা এনে দেন। কিন্তু সেই টাকা সালেহ মুসা খরচ করে ফেলেন। পরবর্তীতে তিনি সানাইয়ের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। সেটি দিতে অস্বীকার করলে সানাইয়ের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালান। টাকা না দিলে সংসার না করার হুমকি দেন।
সানাইয়ের অভিযোগ, সংসার টিকিয়ে নিতে বিষয়টি একাধিকবার পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার স্বামী ২২ লাখ টাকা দাবি করেই যাচ্ছেন। সংসার চালিয়ে নিতে গত ৭ ও ২২ জুলাই স্বামীকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান তিনি। নোটিশ পাওয়ার পরও সানাইয়ের আফতাবনগরের বাসায় গিয়ে মূসা টাকা দাবি করেন এবং না দিলে সংসার করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
পরিচালক গাজী মাহবুবের হাত ধরে ‘ভালোবাসা ২৪×৭’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শোবিজে পা রেখেছিলেন মডেল সানাই মাহবুব। বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনায় ছিলেন তিনি।