ঢাকা 10:35 pm, Friday, 14 November 2025

মতলবে অর্থ আত্মসাৎ করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি

মতলব পৌরসভার পশ্চিম বাইশপুর গ্রামে অর্থ আত্মসাৎ করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই এলাকার বেপারী বাড়ির প্রবাসী ইকবাল হোসেনের স্ত্রী রিনা বেগমের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে জানা যায়, বেপারী বাড়ির মৃত মমিন বেপারীর ছেলে সালমা আক্তার তার নামীয় বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের বইয়ের মাধ্যমে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এক লক্ষ টাকার বিপরীতে প্রতি মাসের কিস্তি পরিশোধের শর্তে সেই টাকা নেওয়া প্রবাসী ইকবাল হোসেনের স্ত্রী রিনা বেগম। আর ২০ হাজার টাকার কিস্তি পরিশোধ করে সালমা আক্তার। রিনা বেগম তিন কিস্তি পরিশোধ করার পর এলাকা ছেড়ে মতলব সদরে ভাড়া বাসায় ওঠেন। এদিকে কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সালমাকে চাপ প্রয়োগ করলে সেও নিরুপায় হয়ে পড়ে। টাকার জন্য বারবার রিনার কাছে ধরনা দিলেও কোনো সমাধান হয়নি, উল্টো হুমকি পেতে হয়েছে রিনার কাছ থেকে।
অপরদিকে গ্রামের বাড়িতে থাকার সময় রিনা বেগম একই বাড়ির প্রবাসী নূর নবীর স্ত্রী সোনিয়াকে জিম্মাদার হিসেবে ব্যবহার করে তারই ননদ কুলসুমার নামে থাকা এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক থেকে ওই একই সময়ে দুই লক্ষ টাকা উত্তোলন করে। শর্ত একটাই, প্রতি মাসের কিস্তি রিনা বেগম পরিশোধ করবে। এখানেও রিনা বেগম একটি মাত্র কিস্তি পরিশোধ করার পরে বিভিন্ন অযুহাত দেখাতে থাকে। পরে কুলসুমার কিস্তির টাকা একবারে পরিশোধের কথা বলে সোনিয়া আক্তাকে জিম্মাদার হিসেবে ব্যবহার করে রিনার তার প্রবাসী ভাসুরের স্ত্রী নাছরিনের নামে এনজিও প্রতিষ্ঠান উদ্দীপন থেকে ২০২৪ সালে দুই লক্ষ টাকা উত্তোলন করে। এখানেও রিনা এই টাকার প্রতি মাসের কিস্তি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে। টাকা উত্তোলনের পর রিনা তার ভাসুরের স্ত্রী নাছরিনের সামনেই বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে এক লক্ষ টাকা নিয়ে নেয় এবং বাকি এক লাখ টাকা সোনিয়াকে দেয় কুলসুমা নামে থাকা ঋণের কিস্তি দেওয়ার জন্য।
এদিকে রিনা বেগম সালমার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে পরিশোধ করেছে মাত্র ২০ হাজার টাকা এবং সোনিয়ার জিম্মায়  কুলসুমা ও নাছরিনের নামে চার লক্ষ টাকা নিয়ে পরিশোধ করেছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে সালমা বেগম তার নামীয় ঋণের বিপরীতে মূল টাকা পাবে ৮০ হাজার এবং জিম্মাদার হিসেবে সোনিয়া পায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এই বিষয়ে বেপারী বাড়ির মোশারফ হোসেন বেপারী, বারেক বেপারী, ইয়াবুক আলী বেপারীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ঋণের কিস্তি জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সালমা ও সোনিয়াকে চাপ দিতে থাকে। আর তারা টাকার জন্য রিনাকে বলে। কিন্তু রিনা টাকা দিবে-দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকে। এই নিয়ে গ্রামের বাড়িতে শালিশী বৈঠক হয়েছে। কিন্তু টাকার কোনো সমাধান হয়নি। উল্টো প্রবাসী ইকবাল হোসেনের স্ত্রী রিনা বেগম মিথ্যা তথ্য দিয়ে যারা টাকা পাবে এবং টাকা নেওয়ার স্বাক্ষী হিসেবে যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে পরপর দুইটি মামলা দেয়।
ভুক্তভোগী সালমা বেগম বলেন, রিনা ভাবী আমার বই দিয়ে টাকা উঠায়, কিন্তু দুই কিস্তি চালানোর পর আর টাকা দেয় না। আর এনজিও লোকেরা আমাকে টাকার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। সে (রিনা) আমাকে ও আমার স্বামীর নামে মামলা দিয়েছে।
মামলার বিষয়ে সোনিয়া বলেন, জিম্মাদার হিসেবে আমি তার কাছে টাকা পাই, কিন্তু সে উল্টো আমার নামে মামলা দিয়েছে। যখন টাকা নিয়েছিল তখন সে বলেছে, ‘যদি টাকা দিতে না পারি তবে বাড়ির জায়গাসহ ঘর তোমাদের নামে লিখে দিব’। কিন্তু এখন আমরা তার মিথ্যা মামলার আসামী।
সরেজমিনে রিনা বেগমের করা দুই মামলার স্বাক্ষীদের মধ্যে রোজিনা বেগম, নাছরিন বেগম, ইমরান হোসেনের  সাথে কথা বললে তারা সকলেই এক বাক্যে জানায় যে, মামলায় স্বাক্ষীর বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। তবে রিনার কাছ থেকে যারা টাকা পাবে তাদের বিরুদ্ধে নাকি মামলা হয়েছে বলে শুনেছেন তারা।
মামলার বিষয়ে বাদী রিনা বেগমের স্বামীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে (০১৭২০৪৮৭১৮৫) গত ৯ ও ১০ নভেম্বর দুই দিন একাধিক বার কল দিলেও সে রিসিভ না করায় এই বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

মতলবে অর্থ আত্মসাৎ করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি

মতলবে অর্থ আত্মসাৎ করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি

Update Time : 10:34:47 pm, Friday, 14 November 2025
মতলব পৌরসভার পশ্চিম বাইশপুর গ্রামে অর্থ আত্মসাৎ করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই এলাকার বেপারী বাড়ির প্রবাসী ইকবাল হোসেনের স্ত্রী রিনা বেগমের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে জানা যায়, বেপারী বাড়ির মৃত মমিন বেপারীর ছেলে সালমা আক্তার তার নামীয় বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের বইয়ের মাধ্যমে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এক লক্ষ টাকার বিপরীতে প্রতি মাসের কিস্তি পরিশোধের শর্তে সেই টাকা নেওয়া প্রবাসী ইকবাল হোসেনের স্ত্রী রিনা বেগম। আর ২০ হাজার টাকার কিস্তি পরিশোধ করে সালমা আক্তার। রিনা বেগম তিন কিস্তি পরিশোধ করার পর এলাকা ছেড়ে মতলব সদরে ভাড়া বাসায় ওঠেন। এদিকে কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সালমাকে চাপ প্রয়োগ করলে সেও নিরুপায় হয়ে পড়ে। টাকার জন্য বারবার রিনার কাছে ধরনা দিলেও কোনো সমাধান হয়নি, উল্টো হুমকি পেতে হয়েছে রিনার কাছ থেকে।
অপরদিকে গ্রামের বাড়িতে থাকার সময় রিনা বেগম একই বাড়ির প্রবাসী নূর নবীর স্ত্রী সোনিয়াকে জিম্মাদার হিসেবে ব্যবহার করে তারই ননদ কুলসুমার নামে থাকা এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক থেকে ওই একই সময়ে দুই লক্ষ টাকা উত্তোলন করে। শর্ত একটাই, প্রতি মাসের কিস্তি রিনা বেগম পরিশোধ করবে। এখানেও রিনা বেগম একটি মাত্র কিস্তি পরিশোধ করার পরে বিভিন্ন অযুহাত দেখাতে থাকে। পরে কুলসুমার কিস্তির টাকা একবারে পরিশোধের কথা বলে সোনিয়া আক্তাকে জিম্মাদার হিসেবে ব্যবহার করে রিনার তার প্রবাসী ভাসুরের স্ত্রী নাছরিনের নামে এনজিও প্রতিষ্ঠান উদ্দীপন থেকে ২০২৪ সালে দুই লক্ষ টাকা উত্তোলন করে। এখানেও রিনা এই টাকার প্রতি মাসের কিস্তি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে। টাকা উত্তোলনের পর রিনা তার ভাসুরের স্ত্রী নাছরিনের সামনেই বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে এক লক্ষ টাকা নিয়ে নেয় এবং বাকি এক লাখ টাকা সোনিয়াকে দেয় কুলসুমা নামে থাকা ঋণের কিস্তি দেওয়ার জন্য।
এদিকে রিনা বেগম সালমার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে পরিশোধ করেছে মাত্র ২০ হাজার টাকা এবং সোনিয়ার জিম্মায়  কুলসুমা ও নাছরিনের নামে চার লক্ষ টাকা নিয়ে পরিশোধ করেছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে সালমা বেগম তার নামীয় ঋণের বিপরীতে মূল টাকা পাবে ৮০ হাজার এবং জিম্মাদার হিসেবে সোনিয়া পায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এই বিষয়ে বেপারী বাড়ির মোশারফ হোসেন বেপারী, বারেক বেপারী, ইয়াবুক আলী বেপারীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ঋণের কিস্তি জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সালমা ও সোনিয়াকে চাপ দিতে থাকে। আর তারা টাকার জন্য রিনাকে বলে। কিন্তু রিনা টাকা দিবে-দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকে। এই নিয়ে গ্রামের বাড়িতে শালিশী বৈঠক হয়েছে। কিন্তু টাকার কোনো সমাধান হয়নি। উল্টো প্রবাসী ইকবাল হোসেনের স্ত্রী রিনা বেগম মিথ্যা তথ্য দিয়ে যারা টাকা পাবে এবং টাকা নেওয়ার স্বাক্ষী হিসেবে যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে পরপর দুইটি মামলা দেয়।
ভুক্তভোগী সালমা বেগম বলেন, রিনা ভাবী আমার বই দিয়ে টাকা উঠায়, কিন্তু দুই কিস্তি চালানোর পর আর টাকা দেয় না। আর এনজিও লোকেরা আমাকে টাকার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। সে (রিনা) আমাকে ও আমার স্বামীর নামে মামলা দিয়েছে।
মামলার বিষয়ে সোনিয়া বলেন, জিম্মাদার হিসেবে আমি তার কাছে টাকা পাই, কিন্তু সে উল্টো আমার নামে মামলা দিয়েছে। যখন টাকা নিয়েছিল তখন সে বলেছে, ‘যদি টাকা দিতে না পারি তবে বাড়ির জায়গাসহ ঘর তোমাদের নামে লিখে দিব’। কিন্তু এখন আমরা তার মিথ্যা মামলার আসামী।
সরেজমিনে রিনা বেগমের করা দুই মামলার স্বাক্ষীদের মধ্যে রোজিনা বেগম, নাছরিন বেগম, ইমরান হোসেনের  সাথে কথা বললে তারা সকলেই এক বাক্যে জানায় যে, মামলায় স্বাক্ষীর বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। তবে রিনার কাছ থেকে যারা টাকা পাবে তাদের বিরুদ্ধে নাকি মামলা হয়েছে বলে শুনেছেন তারা।
মামলার বিষয়ে বাদী রিনা বেগমের স্বামীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে (০১৭২০৪৮৭১৮৫) গত ৯ ও ১০ নভেম্বর দুই দিন একাধিক বার কল দিলেও সে রিসিভ না করায় এই বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।