প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশের আজকের শিশু-কিশোরদের জীবন নিরাপদ হোক, সুন্দর হোক। কারণ, আজকের শিশু-কিশোররাই তো আগামী দিনের কাণ্ডারি। বাংলাদেশের কর্ণধার হবে তারা। তাই আমি চাই, আমাদের সকল শিশু সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক স্কাউট প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক ও একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরির সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের যে বাংলাদেশ ২০২২ সালে এসে দেখছি, তা এরকম ছিল না। প্রতিনিয়তই সংঘাত খুনো-খুনি, অগ্নিসংযোগসহ, দুর্নীতি, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা, নানা ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর থেকে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমি চাই আমাদের দেশটা আরো চমৎকারভাবে গড়ে উঠুক। যেখানে মাদক সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, জঙ্গিবাদ স্থান পাবে না, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের আওতায় বর্তমানে তিনটি প্রকল্প চলমান আছে। ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ স্কাউটিং সম্প্রসারণ ও স্কাউটস শতাব্দি ভবন নির্মাণ প্রকল্প চলছে। ৪৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সিলেট অঞ্চল ও মৌলভীবাজার জেলায় স্কাউটস ভবন নির্মাণ প্রকল্প এবং ৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আঞ্চলিক স্কাউটস প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৩৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব স্কাউট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কাউট কাব দল গঠন এবং কাব স্কাউট প্রশিক্ষণের জন্য জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মৌচাকের অনুকূলে ৯৫ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল পৌনে ১১টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। সকালে প্রধানমন্ত্রী স্কাউট প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পৌঁছলে তাকে স্কার্প ও টুপি পরিয়ে সম্মান জানানো হয়। এরপর তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের স্কাউটদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্কাউট প্রশিক্ষণকেন্দ্রের এই ভূমিতে বনায়ন ধ্বংস করা যাবে না। সৌন্দর্য রক্ষা করতে হবে। একটি স্টুডিও নির্মাণ করা হয়েছে। আধুনিক সুইমিং পুল নির্মাণকাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে রোভার স্কাউটদের জন্য একটি অ্যাডভেঞ্চার ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের লক্ষ্যে ১৮৮ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছি। দেশের সকল জেলা উপজেলায় স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র আমরা নির্মাণ করে দেবো। আমাদের লক্ষ্য, দেশের স্কাউটিং সম্প্রসারণের মাধ্যমে শিশু-কিশোর-যুবাদের আত্মনির্ভরশীল ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা হোক। আমরা দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুটি করে কাব স্কাউট ও রোভার স্কাউট দল করার নির্দেশ দিয়েছি।
আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি চাই, আমাদের প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাইমারি স্কুল থেকে উচ্চ লেভেল পর্যন্ত স্কাউটিং হবে। এখন আমাদের ২২ লাখ সদস্য আছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ লাখ করা হবে। কিন্তু আমার লক্ষ্যটা থাকবে, যেন প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন স্কাউট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয় এবং সেই ব্যবস্থাটা যেন করা হয়। তাহলে আমি বিশ্বাস করি আমার দেশে সোনার বাংলা গড়ার বা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উপযুক্ত নাগরিক তৈরি হবে।
সমাপনি অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাত, কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ কবির, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আজাদ প্রমুখ।