বরগুনার তালতলীতে এক তরুণীর সঙ্গে দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও এক ছাত্রলীগ নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা বাদে ভিডিও ভাইরাল হওয়া দুই ইউপি চেয়ারম্যানই আবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। তবে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনও কারও বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এদিকে ভাইরাল হওয়া তিনটি ভিডিওতে আমতলী উপজেলা দক্ষিণ আমতলী এলাকার বাহাদুর আকনের মেয়ে ইসরাত জাহান লামিয়ার সঙ্গে তালতলীর নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু, পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ. রাজ্জাক হাওলাদার এবং তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদিন মিঠুকে দেখা গেছে।
এসব ভিডিও ভাইরালের আগে গত ১২ এপ্রিল রাতে ইসরাত জাহান লামিয়া এবং তার সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে জাহিদুল ইসলাম সবুজ ফকির নামে এক যুবকের তালতলী থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চু। এ মামলায় আবার অপর দুটি ভিডিও ভাইরাল হওয়া চেয়ারম্যান আ. রাজ্জাক হাওলাদার ও মিনহাজুল আবেদিন মিঠুকে সাক্ষী করা হয়েছে। পরবর্তীতে আসামিদের গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।
মামলার বিবরণে বাদী কামরুজ্জামান বাচ্চু উল্লেখ করেন, ঘটনার প্রায় এক বছর আগে অভিযুক্ত নারী ইসরাত আমার মোবাইল ফোনের হোয়াটস অ্যাপে কল করে। প্রথমে আমি বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও পরবর্তীতে কল রিভিস করি এবং ওই নারী আমাকে বলে, ‘আমার এক পরিচিত মনে করে ভুলবশত ফোন চলে গেছে’। এ সময় নারী পরিচয় দেন তিনি বরিশালে থাকেন এবং ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে এলএলবি অধ্যায়নরত।
তিনি বলেন, পরিচয়ের কয়েক দিন পর ঢাকায় কাজের জন্য গেলে ওই নারী (১নং আসামি) আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে আমরা একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করি। এরপর থেকে সে আমার হোয়াটসঅ্যাপে কল করতো এবং কুশলাদি বিনিময় হতো। যার ফলে আমাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর অনেক দিন পর অফিসিয়াল কাজ শেষে ঢাকা থেকে ফেরার পথে লঞ্চে আমার কেবিনের পাশে সেও কেবিন ভাড়া নেয়। পথিমধ্যে রাতে এক সময় সে আমার কেবিনে প্রবেশ করে বলে ‘রাতের খাবার খাই নাই’। সরল বিশ্বাসে আমি খাবার অর্ডার এবং দুজনে একসঙ্গে বসে রাতের খাবার খাই। খাওয়া শেষে আমি তাকে কেবিনে যেতে বললে সে সুকৌশলে আমার কেবিনে শুয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে তার মোবাইলের মাধ্যমে গোপন ভিডিও ধারণ করে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, লামিয়ার ধারণ করা গোপন সেই ভিডিও গত বছরের ২৮ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান তনুর হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আমার মোবাইলে পাঠানো হয়। লামিয়া নিজেই সুকৌশলে ওই ভিডিও আমাকে পাঠায়।
একই সময়ে সে পচাকোড়ালিয়া চেয়ারম্যান আ. রাজ্জাক হাওলাদার ও উপজেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি মিনহাজুল আবেদীন মিঠুর দুটি ভিডিও আমাকে পাঠানো হয়। পরে সে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে আমাকে বলে, ‘আমার বড় ভাই মনিরুজ্জামান মিন্টুর পক্ষে উপজেলা নির্বাচন না করলে তোমাদের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেব’। এ সময় লামিয়া আমার কাছে মোটা অংকের টাকাও দাবি করে।
তালতলী থানায় দায়েরকৃত ওই মামলা সূত্রে জানা গেছে পর্নোগ্রাফি আইনের ৮(১)(২)(৩)(৫) এর (ক) (৭) ধারায় মামলা দায়ের করেছেন চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চু। মামলাটি অধিকতর তদন্তের স্বার্থে বরগুনা জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখায় পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. বশিরুল আলম বলেন, চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চু পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত আবেদন করলে আমরা ওই নারী ও তার সহযোগী সবুজ ফকিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসি। জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন এবং আমরা ইতোমধ্যে কিছু আলামত উদ্ধার করেছি।
জেলার আমতলী ও তালতলীতে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইসরাত জাহান লামিয়া একজন পেশাদার ব্লাকমেইলার। জনপ্রতিনিধি, সমাজের গণ্যমান্য ও ধনী ব্যক্তিদের টার্গেট করতে তিনি। এরপর কৌশলে তাদেরকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে গোপন ভিডিও ধারণের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতই তার নেশা ও পেশা।
নাম পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তির স্ত্রী অভিযোগ করে গণমাধ্যমকে বলেন, আমার স্বামীর সাথেও ফেসবুকে লামিয়ার পরিচয় হয়েছিল। শুরুতে লামিয়া নিজেকে অসহায় হিসেবে উপস্থাপন করে এবং কৌশলে আমার স্বামীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ছবি ও স্ক্রিনশট নিয়ে আমার স্বামীকে একের পর এক ব্লাকমেইল করতে থাকে এবং টাকা দাবি করে। এ সময় আমার স্বামী টাকা না দিয়ে লামিয়ার নামে মামলা করেন। ওই মামলায় অনেক দিন জেলে ছিলেন লামিয়া।
এদিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ইসরাত জাহান লামিয়া ও তার সহযোগী জাহিদুল ইসলাম সবুজ ফকির আমাদের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে একজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করেছেন। এই জনপ্রতিনিধিই তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে তাদের দাবি।