শিরোনাম:
আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবেনা, অপরাধীদের বিচার রাষ্ট্র করবে-ইঞ্জি. মমিনুল হক টঙ্গীতে সেই দুই শিশুকে বঁটি দিয়ে কু পিয়ে হ ত্যা করেছে তাদের মা নোয়াদ্দা শুহাদায়ে কারবালা জামে মসজিদের কমিটি গঠন হাজীগঞ্জে ব্যবসায়ী, পরীক্ষার্থী ও জানমালের ক্ষতিসাধন ঠেকাতে মেলা বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

মেলার নামে অনিয়ম, চাঁদাবাজী এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির দায় বিএনপি বহন করবে না-আলহাজ্ব ইমাম হোসেন দেশগাঁও জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ  হাজীগঞ্জে সাড়ে ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ হাজীগঞ্জের রামপুরে সংঘর্ষে রণক্ষেত্র, জড়িয়ে পড়লো কয়েকটি গ্রাম হাজীগঞ্জে সিগারেট পান করাকে কেন্দ্র করে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ: আহত অর্ধশতাধিক উৎসবমূখর পরিবেশে হাজীগঞ্জে পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর উৎসবমুখর পরিবেশে চাঁদপুরেও উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর

ঘুম থেকে তুলে নিয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসান ওসি!

ত্রিনদী অনলাইন
ত্রিনদী অনলাইন
আপডেটঃ : বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

ত্রিনদী অনলাইন:

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শিশু তাউসিফুল করিম রাফিকে একটি অস্ত্র মামলায় গ্রেফতারের ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, ভোররাতে ঘুমন্ত রাফিকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর তিন লাখ টাকা ঘুস চাইলে তা দিতে অস্বীকার করায় তাকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয়। পুলিশের এজাহার, সাক্ষীদের বক্তব্য এবং পরিবারের অভিযোগে উঠে আসা তথ্য একে-অন্যের সঙ্গে মেলে না।

স্থানীয় মানুষ ও মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, টেকনাফ মডেল থানার ওসি গিয়াস উদ্দিন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশের কুখ্যাত পথেই হাঁটছেন। মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি করেছেন।

শিশুটির সঙ্গে ঘটে যাওয়া অমানবিক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবি তুলেছেন মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতারা।

ঘুমন্ত ছেলেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ

২৬ নভেম্বর ভোররাত। টেকনাফ উপজেলার যুবলীগ নেতা রেজাউল করিমের বাড়িতে অভিযান চালায় টেকনাফ মডেল থানার ওসি গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল। পুলিশের দাবি, অভিযানের সময় রেজাউল করিম পালিয়ে যান। তখন তার সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে রাফিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

কিন্তু রাফির মা নাসিমা আক্তার বলছেন ভিন্নকথা। তিনি জানান, ভোর ৪টার দিকে পুলিশের একটি দল দরজা ধাক্কাতে শুরু করে। দরজা খুলতেই তারা আমার স্বামীকে খুঁজতে থাকে কিন্তু তিনি বাড়িতে ছিলেন না। পরে তারা ঘরের ভেতর ঢুকে ঘুমন্ত রাফিকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায়। পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়, কিন্তু কোনো কারণ বলেনি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, আমার ছেলেকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর এক পুলিশ কর্মকর্তা ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। পুলিশ আমাদের জানায়, তারা পাশের বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে। অথচ পরে শুনি, সেই অস্ত্র রাফির কাছে পাওয়া গেছে বলে দেখানো হয়েছে।

জোরপূর্বক সাক্ষী বানানো হয়েছে

মামলার প্রধান সাক্ষী হ্নীলা এলাকার স্থানীয় মসজিদের খতিব ও ইমাম জামাল হোসেন। তিনি জানান, ফজরের নামাজ পড়ানোর জন্য মসজিদে যাচ্ছিলাম। পথে আমাকে থামিয়ে ওসি গিয়াস উদ্দিন পরিচয় দিয়ে একটি বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে সিঁড়ির পাশে একটি কালো রঙের জিনিস দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি কিছু দেখেছি কিনা; কিন্তু আমি কিছুই দেখিনি।

জামাল হোসেন আরও বলেন, পুলিশ আমাকে জোর করে একটি খালি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেছে। আমি কোনো অপরাধমূলক কিছু দেখিনি। অথচ আমাকে সাক্ষী বানানো হয়েছে।

মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ভোররাতে নারী পুলিশ সদস্যরা আমার ঘরে ঢুকে আলমারি তল্লাশি করে। পরে বলে- তারা অস্ত্র পেয়েছে। কিন্তু পরদিন শুনি, সেই অস্ত্র আমার ঘর থেকে নয়, রাফির কাছ থেকে উদ্ধার দেখানো হয়েছে।

পুলিশের দাবি, সন্ত্রাসী বাবার ছেলের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার

টেকনাফ মডেল থানার ওসি গিয়াস উদ্দিন বলেন, রাফির বাবা রেজাউল করিম একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং মাদক কারবারি। আমরা তার বাসায় অভিযান চালাই। অভিযানকালে রাফির কাছ থেকে একটি নীল রঙের ব্যাগে বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি এবং ৪০ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য এই অস্ত্র মজুদ রাখা হয়েছিল।

তবে পুলিশের বিবৃতি এবং এজাহারের মধ্যে অসঙ্গতি রয়েছে। এজাহারে বলা হয়েছে, রাফির ডান হাতে থাকা ব্যাগ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। অথচ সাক্ষীরা বলছেন, সেই অস্ত্র পাশের বাড়ির আলমারি থেকে উদ্ধার দেখানো হয়েছে।

লোক ভাড়া করে ওসির পক্ষে মানববন্ধন

এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে টেকনাফ মডেল থানা। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওসি গিয়াস উদ্দিন মাদক মামলায় গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন ব্যক্তিকে দিয়ে রাফির পরিবারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কয়েকজন ব্যক্তি এর আগে ইয়াবাসহ র্যাব ও পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল্লাহ বলেন, ওসি মাত্র দুই মাস হলো টেকনাফ থানায় দায়িত্ব নিয়েছেন। এত অল্প সময়ে তার এমন কোনো কৃতিত্ব নেই, যার জন্য সাধারণ মানুষ তার পক্ষে মানববন্ধন করবে। এটি পুরোপুরি সাজানো একটি নাটক।

মানবাধিকার কর্মীদের প্রতিক্রিয়া

জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর জেলা কমিটির সভাপতি সুবিমল পাল পান্না বলেন, একটি শিশুকে এভাবে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। এটি শিশু সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের বড় উদাহরণ। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত।

তিনি আরও বলেন, টেকনাফে প্রদীপ কুমার দাশের কুখ্যাত কর্মকাণ্ডের যে ধারা ছিল, তা আবার ফিরে আসছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। নইলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

স্থানীয়রা বলছেন, ওসি গিয়াস উদ্দিন টেকনাফ থানায় দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। সাধারণ মানুষের অধিকার লঙ্ঘন করে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।

তারা প্রশ্ন তুলছেন, শিশু রাফি এবং তার পরিবার কী ন্যায়বিচার পাবে? পুলিশ প্রশাসন কি টেকনাফে আবারও প্রদীপের মতো অপরাধের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে চাইছে?

টেকনাফের এ ঘটনায় দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে বলছে, নিরপেক্ষ বিচার না হলে টেকনাফের সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারাবে। (যুগান্তর)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুক

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০