খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার জিয়ালতলা এলাকায় মহামায়া আশ্রমের ধর্মগুরু নারায়ণ চন্দ্র রায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার মামলায় কারাগারে রয়েছেন। আশ্রমের ধর্মগুরু ধর্ষণচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তারের পর আশ্রমে ভক্তের সংখ্যা কমেছে।
আশ্রমের ভক্ত ও এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মঙ্গলবার জিয়ালতলা মহামায়া আশ্রমে ৪-৫ হাজার ভক্তের সমাগম হতো। সেখানে সারা রাত চলত গানবাজনা, কীর্তন, আরাধনা ইত্যাদি অনুষ্ঠান।
আশ্রমের ধর্মগুরু নারায়ণ চন্দ্র রায় গ্রেপ্তার হন গত ২৭ আগস্ট (বুধবার)। নারায়ণ চন্দ্র গ্রেপ্তারের পর গতকাল মঙ্গলবার ছিল সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান। আগে ৪-৫ হাজার ভক্তের সমাগম হলেও গতকাল ছিল মাত্র ৫০-৬০ জন।
বর্তমানে ওই আশ্রমের দায়িত্বে থাকা নারায়ণ চন্দ্র রায়ের ছেলে পরিতোষ কুমার জানান, সন্ধ্যার আগে ভক্তরা ধীরে ধীরে আশ্রমে প্রবেশ করতে শুরু করেন। শুরুতে উপস্থিত সংখ্যা কম ছিল, তবে ধীরে ধীরে ৫০-এর বেশি ভক্ত আশ্রমে মিলিত হন। ভক্তরা ধুপ-দীপ জ্বালিয়ে মহাত্মা শ্রী হরিপদ গোস্বামীজীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
রাত ৯টার পর ভক্তদের উদ্যোগে আশ্রমে ধর্মীয় অনাড়ম্বরে আলোচনা, ভজন ও কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। আশ্রমে বিশৃঙ্খলা এড়াতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
আশ্রমে উপস্থিত ভক্ত দিপালী রায়, মনিকা হালদার, ভগবতী গোলদারসহ কয়েকজন ভক্ত বলেন, তাঁরা প্রতি মঙ্গলবার আসেন মায়ের মন্দিরে। ধর্মগুরু নারায়ণ চন্দ্র রায়কে না পেয়ে তাঁরা মর্মাহত।
রবীন্দ্রনাথ গোলদার নামের এক ভক্ত অভিযোগ করে বলেন, নারায়ণ চন্দ্র রায়কে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফাঁসানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা ভিডিও ছড়ানো হয়েছে। তিনি তাঁর মুক্তি ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
জিয়েলতলা গ্রামের ওই আশ্রমের পাশেই অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক তমিজ হাওলাদারের বাড়ি। তিনি বলেন, গতকাল রাতে ৫০-৬০ জন ভক্ত এসেছিলেন। তাঁরা গান-বাজনা করে চলে গেছেন। সেখানে কেউ রাত্রী যাপন করেননি।
জানতে চাইলে ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ রানা জানান, আশ্রমে অনুষ্ঠান চলাকালে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। ধর্মীয় স্থানে যাতে ক্ষতি বা অনুভূতিতে আঘাত হানতে না পারে, তার জন্য কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার মামলায় গত ২৭ আগস্ট নারায়ণ চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার নারায়ণ চন্দ্র রায় ভুক্তভোগীর পরিবারের পূর্বপরিচিত। ভুক্তভোগীর চাচি অসুস্থ থাকায় গত ১৬ জুলাই রাতে নারায়ণ চন্দ্র রায় ভুক্তভোগীর অসুস্থ চাচিকে দেখতে যান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভুক্তভোগীর পরিবার ঘরোয়াভাবে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান শেষ হতে অনেক রাত হওয়ায় ভুক্তভোগী উক্ত বসতঘরের মাঝের রুমের ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়ে। অনুষ্ঠান রাত দেড়টার দিকে শেষ হয়।
ভুক্তভোগী ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়ায় এবং রাত অনেক হওয়ায় তাকে রুমে রেখে সবাই যার যার কক্ষে চলে যান এবং গ্রেপ্তার নারায়ণ চন্দ্র রায় উক্ত ঘরের খাটের ওপর ঘুমিয়ে পড়েন। পরে ওই রাতে সাড়ে ৩টা থেকে ৬টার মধ্যে নারায়ণ চন্দ্র রায় সুযোগ বুঝে ভুক্তভোগীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। কিন্তু ভুক্তভোগীর ঘুম ভেঙে যাওয়ায় ব্যর্থ হন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে ডুমুরিয়া থানায় এজাহার করেন।
মেয়ের বাবা বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে মেয়ে আমাদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে।’