ঢাকা 11:42 pm, Friday, 24 October 2025

হাজীগঞ্জে রাতে ডেকে নিলো দুই বন্ধু, দিনে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার: পলাতক বন্ধু, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন !

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:21:50 pm, Friday, 24 October 2025
  • 18 Time View

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্ররা গ্রামে এক তরুণের মৃত্যু ঘিরে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন ও রহস্য। রাতের আঁধারে দুই বন্ধুর ডাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া শাহ আলম (২৭)-এর লাশ মিলল দিনের আলো ফুটতেই ইতালি প্রবাসী সেলিম চৌধুরীর নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ঝুলন্ত অবস্থায়।

দুই মাস কেটে গেলেও মৃত্যুর রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি। এটি কি আত্মহত্যা, নাকি পরিকল্পিত হত্যা—সে প্রশ্ন আজও ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মনে। এদিকে নিহতের ভাই মহসীন হোসেন সজিব বাদী হয়ে আশরাফুল (তনু) ও ফারুক নামের দুইজনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট বিকেলে হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭নং বড়কূল পশ্চিম ইউনিয়নের সাদ্ররা গ্রামের ইতালি প্রবাসী সেলিম চৌধুরীর নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে শাহ আলমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। নিহত শাহ আলম ওই গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে।

ঘটনার পর পুলিশ একটি অপমৃত্যুর মামলা নেয় এবং তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই নূরে আলম। তবে দুই মাস পেরিয়ে গেলেও মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। পুলিশের এই নীরব ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

নিহতের ভাই মহসীন হোসেন সজিব বলেন, “রাতে আমার ভাইকে আশরাফুল ও ফারুক ডেকে নিয়ে যায়। এরপর আর ফেরেনি। সারারাত খুঁজেছি, পাইনি। রাত চারটার দিকে আশরাফুল ও ফারুককে আমাদের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। আমি জিজ্ঞেস করলে তারা কিছুই বলেনি। পরদিন দুপুরে শুনি, আমার ভাইয়ের লাশ কাছের বিল্ডিংয়ে ঝুলছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার ভাই আত্মহত্যা করতে পারে না। আশরাফুল ও ফারুক মিলে তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। তারা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ঘটনার পর থেকেই দু’জনই পালিয়ে যায়। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”

নিহতের মা নূরজাহান বেগমের অভিযোগ, “রাতে আশরাফুল ও ফারুক আমার ছেলেরে ডেকে নিয়ে গেছে। সকালে শুনি সে নাকি আত্মহত্যা করেছে! আমার ছেলে নামাজ পড়ত, কারও সঙ্গে ঝামেলা করত না। এমন ছেলে আত্মহত্যা করবে—এটা বিশ্বাস করা যায় না।”

তিনি আরও প্রশ্ন রাখেন, “ঘটনার পর থেকে আশরাফুল কেন এলাকা থেকে পালাল? যদি নির্দোষ হয়, তাহলে পালিয়ে গেল কেন? পুলিশকেও বলেছি, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশরাফুল ওরফে তনু ও ফারুক চিহ্নিত মাদকসেবী ও ছিটকে চোর। ঘটনার পর থেকেই সে পলাতক। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরাও তার অবস্থান জানে না।
তার মামী বলেন, “লাশ উদ্ধারের দুই দিন পর থেকে আশরাফুলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। সে কোথায় আছে, জানি না।”

অন্যদিকে, অভিযুক্ত ফারুকের মা জানান, “সেদিন ভোর ৪টার সময় আশরাফুল আমার ঘরে এসে আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর কী হয়েছে জানি না। আমি বিশ্বাস করি আশরাফুলই আমার ছেলেকে ফাঁসিয়েছে।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নূরে আলম বলেন, “তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন,

“তাদের থানায় ডাকা হয়েছিল, কিন্তু তারা আসেনি।”

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহিউদ্দিন ফারুক বলেন,
“ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মামলার পরবর্তী ধাপ সম্পন্ন করা হবে।”

গ্রামজুড়ে এখন একটাই গুঞ্জন—রাতে যাদের ডাকে শাহ আলম বাড়ি থেকে বের হয়েছিল, তারা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে কেন? দুই মাসেও পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ কেন? তদন্তে বিলম্ব ও নিস্ক্রিয়তায় প্রশ্ন উঠেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

মতলবে উত্তরে দুই সহস্রাধিক সনাতন ধর্মালম্বী বিএনপিতে যোগদান

হাজীগঞ্জে রাতে ডেকে নিলো দুই বন্ধু, দিনে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার: পলাতক বন্ধু, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন !

Update Time : 10:21:50 pm, Friday, 24 October 2025

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্ররা গ্রামে এক তরুণের মৃত্যু ঘিরে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন ও রহস্য। রাতের আঁধারে দুই বন্ধুর ডাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া শাহ আলম (২৭)-এর লাশ মিলল দিনের আলো ফুটতেই ইতালি প্রবাসী সেলিম চৌধুরীর নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ঝুলন্ত অবস্থায়।

দুই মাস কেটে গেলেও মৃত্যুর রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি। এটি কি আত্মহত্যা, নাকি পরিকল্পিত হত্যা—সে প্রশ্ন আজও ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মনে। এদিকে নিহতের ভাই মহসীন হোসেন সজিব বাদী হয়ে আশরাফুল (তনু) ও ফারুক নামের দুইজনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট বিকেলে হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭নং বড়কূল পশ্চিম ইউনিয়নের সাদ্ররা গ্রামের ইতালি প্রবাসী সেলিম চৌধুরীর নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে শাহ আলমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। নিহত শাহ আলম ওই গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে।

ঘটনার পর পুলিশ একটি অপমৃত্যুর মামলা নেয় এবং তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই নূরে আলম। তবে দুই মাস পেরিয়ে গেলেও মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। পুলিশের এই নীরব ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

নিহতের ভাই মহসীন হোসেন সজিব বলেন, “রাতে আমার ভাইকে আশরাফুল ও ফারুক ডেকে নিয়ে যায়। এরপর আর ফেরেনি। সারারাত খুঁজেছি, পাইনি। রাত চারটার দিকে আশরাফুল ও ফারুককে আমাদের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। আমি জিজ্ঞেস করলে তারা কিছুই বলেনি। পরদিন দুপুরে শুনি, আমার ভাইয়ের লাশ কাছের বিল্ডিংয়ে ঝুলছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার ভাই আত্মহত্যা করতে পারে না। আশরাফুল ও ফারুক মিলে তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। তারা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ঘটনার পর থেকেই দু’জনই পালিয়ে যায়। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”

নিহতের মা নূরজাহান বেগমের অভিযোগ, “রাতে আশরাফুল ও ফারুক আমার ছেলেরে ডেকে নিয়ে গেছে। সকালে শুনি সে নাকি আত্মহত্যা করেছে! আমার ছেলে নামাজ পড়ত, কারও সঙ্গে ঝামেলা করত না। এমন ছেলে আত্মহত্যা করবে—এটা বিশ্বাস করা যায় না।”

তিনি আরও প্রশ্ন রাখেন, “ঘটনার পর থেকে আশরাফুল কেন এলাকা থেকে পালাল? যদি নির্দোষ হয়, তাহলে পালিয়ে গেল কেন? পুলিশকেও বলেছি, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশরাফুল ওরফে তনু ও ফারুক চিহ্নিত মাদকসেবী ও ছিটকে চোর। ঘটনার পর থেকেই সে পলাতক। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরাও তার অবস্থান জানে না।
তার মামী বলেন, “লাশ উদ্ধারের দুই দিন পর থেকে আশরাফুলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। সে কোথায় আছে, জানি না।”

অন্যদিকে, অভিযুক্ত ফারুকের মা জানান, “সেদিন ভোর ৪টার সময় আশরাফুল আমার ঘরে এসে আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর কী হয়েছে জানি না। আমি বিশ্বাস করি আশরাফুলই আমার ছেলেকে ফাঁসিয়েছে।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নূরে আলম বলেন, “তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন,

“তাদের থানায় ডাকা হয়েছিল, কিন্তু তারা আসেনি।”

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহিউদ্দিন ফারুক বলেন,
“ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মামলার পরবর্তী ধাপ সম্পন্ন করা হবে।”

গ্রামজুড়ে এখন একটাই গুঞ্জন—রাতে যাদের ডাকে শাহ আলম বাড়ি থেকে বের হয়েছিল, তারা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে কেন? দুই মাসেও পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ কেন? তদন্তে বিলম্ব ও নিস্ক্রিয়তায় প্রশ্ন উঠেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও।