শরীফুল ইসলাম:
জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে নিজের পিতার পক্ষে সুবিধা না দেয়ায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার কর্তৃক পৌরমেয়র ও এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে পৌরপরিষদের নেতৃবৃন্দ।
৫ নভেম্বর সকালে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ জাহিদুল আজহার আলম বলেন, গত ৩১ অক্টোবর বিকালে মিনু আক্তার তার নিজের ফেইজবুক আইডির মাধ্যমে পৌরসভার মেয়র ও ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজি মনিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। যা অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে শৃঙ্খলা পরিপন্থি। একটি মহল হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে হাজীগঞ্জ পৌরসভা এবং মেয়রের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য তার পেছনে এ জঘন্য কাজে ইন্ধন যোগাচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রকৃত ঘটনার সূত্রপাত সম্পত্তিগত বিরোধের অভিযোগের সূত্র ধরে কাউন্সিলর মিনু আক্তারের পিতার আনোয়ার হোসেন ছিডার বিরুদ্ধে ৩১ জুলাই পৌরসভার মেয়র বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় আমান উল্যাহ মৃধাসহ ৫ জন ব্যক্তি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেয়র বিষয়টি সমাধানকল্পে ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজি মনির এবং ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মো. কবির হোসেনকে দায়িত্ব দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলরগণ বিরোধীয় বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বাদী ও বিবাদীকে পরপর ৩টি লিখিত নোটিশ জারি করে শুনানী গ্রহণ করেন। এ শুনানিতে বাদীপক্ষ প্রত্যেক তারিখে উপস্থিত থাকলেও বিবাদীপক্ষ দু’টি তারিখে উপস্থিত থাকেন। পরবর্তীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলরগণ বিরোধী বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি বলে একটি লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন মেয়রের কাছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কাউন্সিলর মিনু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন। এমনকি গত ৩১ অক্টোবর পৌরপরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় উপস্থিত হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হাজিরা শীটে স্বাক্ষর না করেই চলে যান। এরই মধ্যে আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের সাথে কাউন্সিলর মিনুর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের সূত্র ধরে ইলিয়াস হোসাইন তার ফেইসবুক ফেইজে মেয়রকে হেয় করে একটি স্ট্যাটাস দেন।
এছাড়া গত ২ নভেম্বর ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজি মনিরকে জড়িয়ে কাউন্সিলর মিনু আক্তার তার ফেইজবুক ফেইজে একটি মিথ্যা স্ট্যাটাস দেন। সেটি তিনি পরবর্তীতে সরিয়ে নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মেয়রকে দায়ি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন না করে কাউন্সিলর মিনু আক্তারের এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত এবং শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকার্তা আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সেই সাথে তার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ইন্ধনকারীদের শাস্তি দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহসিন ফারুক বাদল বলেন, কাউন্সিলর মিনুর স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার কারণে হাজীগঞ্জ পৌরসভার সুনাম ক্ষুন্ন করার অপেচেষ্টা করছেন। তার এ ধরনের ভিত্তিহীন ও মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তিনি একেক সময় একেক ধরনের কথা বলছেন। তার আগের কথার সাথে পরের কথার মিল নেই। প্রথম দিন তার ফেইসবু আইডি থেকে যে পোস্ট দেয়া হয়েছিল সেখানে তিনি অভিযোগ করেছিলেন মেয়রের পক্ষে অনৈতিক কুপ্রস্তাব দেন ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। পরের দিন তিনি আবার লাইভে এসে ভিন্ন কথা বলেছেন। আবার সাংবাদিক সম্মেলনে এসে দাবি করেন, মেয়র তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল এবং সে রক্ষা পেয়েছে।
তিনি বলেন, ৮ তারিখে যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটতো তাহলে সাথে সাথেই এর প্রতিবাদ তিনি করতেন। তার সাথে আরও তিন জন নারী কাউন্সিলর দায়িত্বে আছেন। আমরা ১২ জন কাউন্সিলর তার সহকর্মী। আমাদের বিষয়টি জানাতেন। অথবা তিনি পুলিশ বা প্রশাসনকে জানাতে পারতেন। তিনি সেসব কিছুই করেননি।
তিনি আরও বলেন, তার অসদাচরণের জন্য ২২ আগস্ট হাজীগঞ্জ পৌরপরিষদের পক্ষে মেয়র তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। ২৫ আগস্ট তার জবাব দাখিলের শেষ দিন তিনি মেয়র মহোদয়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পৌরসভায় সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে কোন ধরনের অর্থ নেবেন না।
তিনি আরও বলেন, তার কথিত যৌন হয়রানির দিন থেকে হাজীগঞ্জ পৌরসভার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেও তার মিথ্যা অভিযোগ সম্পর্কে জানা যাবে। কাউন্সিলর মিনু যেসব অভিযোগ করছেন তার সবটাই মিথ্যা। হাজীগঞ্জ পৌরসভার দুইবারের সফল মেয়র আ.স.ম. মাহবুব উল আলম লিপনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে তাকে ঘায়েল করার জন্য এ ধরনের বক্তব্য দেয়া হয়েছে। আমরা তার এ ধরনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। যারা জনমনে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে হাজীগঞ্জ পৌরসভার সুনাম ক্ষুন্ন করতে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান তিনি।
কাউন্সিলর জানান, মিনুর মিথ্যা বক্তব্যের প্রতিবাদে হাজীগঞ্জের বিভিন্নস্তরের মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমরা পৌরপরিষদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনও মহোদয়কে স্মারকলিপি দিয়েছি। এছাড়া ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনির কাজি আদালতে মানহানির মামলা দায়ের করেছেন।
মূল ঘটনা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে কাউন্সিলর কাজী মনির বলেন, আমাদের পৌর পরিষদের বর্তমান বয়স ২০ মাস। গত ১৭ মাস ধরে তার সাথে আমাদের কারোরই কোন বিরোধ ছিল না। কিন্তু যখন জমি সংক্রান্ত একটি বিষয়ে তার বাবাসহ ৪ জনকে বিবাদী করে পৌরসভার মেয়র বরাবর অভিযোগ জমা পড়ে এবং সেটি সমাধানের জন্য আমাদের দায়িত্ব দেন মেয়র। এরপর আমরা নিয়মানুযায়ী দু’পক্ষকে নোটিশ দেই। পরবর্তীতে তাদেরকে কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য বলি। দ্বিতীয় বৈঠকের তারিখে বাদীপক্ষ কাগজপত্র নিয়ে এলেও কাউন্সিলর মিনুর বাবা অর্থাৎ বিবাদীপক্ষ কোন কাগজপত্র আনেননি। এমনকি বাদীপক্ষকে গালমন্দ করে বৈঠক থেকে চলে যান। এরপর আমরা তৃতীয় বৈঠকের জন্য দু’পক্ষকে নোটিশ দিলেও বিবাদীপক্ষ আর হাজির হননি। এর প্রেক্ষিতে পৌরসভার বিধিমোতাবেক আমরা একটি প্রতিবেদন দাখিল করি। এরপর প্রতিবেদনটি পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে গেলে সেখান থেকে কাউন্সিলর মিনু সেটি জোর করে ছিনিয়ে নেন।মূলতঃ মিনু আক্তারের পক্ষে প্রতিবেদন না দেয়ায় এ নিয়েই নারী কাউন্সিলর মিনু প্রতিশোধের বশবর্তী হয়ে মেয়র মাহবুব আলম লিপন ও কাউন্সিলর কাজি মনিরের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ করে ফেসবুক ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তিনি।
এ সময় চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, স্থানীয় ও জাতীয় গনমাধ্যমের বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।