আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রের এবারের এ মধ্যবর্তী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভোট শেষে গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই কোন আসনে কারা এগিয়ে? কে কাকে টপকে গেলেন?
কোন প্রার্থী জয়লাভ করলে পরবর্তী রাজনীতির সমীকরণ কেমন হবে? কে জিতলে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কার লাভ হবে- এসব নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
সেইসঙ্গে অভিজ্ঞ-পোড়খাওয়া আর উঠতি রাজনীতিকদের তুমুল বিশ্লেষণ। এখন পর্যন্ত ভোটের ফলাফলে প্রতিনিধি পরিষদে এগিয়ে আছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান।
রিপাবলিকানের এ ‘গণেশ উলটানো’ জয়ে দলে খুশির জোয়ার আনলেও সুখ নেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে পরবর্তী নির্বাচনের টিকিট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার ভয় দানা বেঁধেছে তার আশার অন্দরমহলে।
বুধবারের বেসরকারি ফলাফলে রিপাবলিকান প্রার্থী রন ডিস্যান্টিস গভর্নর পদে ফ্লোরিডায় বিরাট ব্যাবধানে জয়ের খবরেই মুষড়ে পড়েছেন তিনি। মুখে লোক দেখানো হাসির ঝলক থাকলেও ভেতর ভেতর গুমরে ফুঁসছেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্টের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন লড়তে চান তিনি- ‘মুখ পাতলা’ স্বভাবের দরুন সারা বিশ্ব জানে এ খবর। অজানা নয় তার ‘ঘরের শত্রু’দের কাছেও। শোনা যাচ্ছে দলের আরেক প্রভাবশালী নেতা রন ডিস্যান্টিস তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে পারেন।
রিপাবলিকান শিবিরের বাতাসে ছড়িয়ে পড়া এ গুঞ্জন-কানাঘুষার মধ্যেই রনের বড় জয় তাকে আরও উৎসাহিত করতে পারে প্রেসিডেন্টের দৌড়ে নামার জন্য। যা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না আর এই চিন্তাতেই কপাল ঘামছে-সেটা চাচ্ছেন না ট্রাম্প।
দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে রন ডিস্যান্টিস যেন কোনোভাবেই না শামিল হন, সেজন্য তাকে একবার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। সোমবার, মধ্যবর্তী নির্বাচনি প্রচারের শেষ দিনে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, স্যান্টিস যদি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেন, তবে নিজের বড় ক্ষতি করবেন। আমি মনে করি না যে এটা দলের জন্য ভালো কিছু হবে।
তার সম্পর্কে আমার কাছে এমন কিছু তথ্য আছে, যেগুলো ‘যথেষ্ট তৃপ্তিদায়ক’ হবে না। তার সম্পর্কে আমি শুধু তার স্ত্রী বাদ দিয়ে সবার চেয়ে বেশি জানি। আমার ধারণা অন্য কেউ আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হবে।
যদিও নিজের বিজয়ী বক্তৃতায় ২০২৪ সালের নির্বাচনে লড়ার বিষয়ে কিছু বলেননি রন। বুধবার জয়ের খবর শুনে বলেছেন-আমরা নির্বাচনে শুধু জিতিনি
। আমরা নির্বাচনি মানচিত্র নতুন করে এঁকেছি। অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত ১৫ নভেম্বর নিজের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেবেন। স্পষ্ট করে না জানালেও তিনি বলে রেখেছেন, ওই দিন বড় ঘোষণা আসছে। শুধু স্যান্টিস নয়, রিপাবলিকানে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন আরও বেশ কয়েকজন। মধ্যবর্তী নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন করে হাওয়া লেগেছে সেই পালে। তাদের মধ্যে মাইক পেন্স ও নিকি হ্যালি অন্যতম।
মাইক পেন্স : সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন অনুগত কর্মী ছিলেন সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। চার বছর সময়ের পুরোটাই তার প্রতি অনুগত ছিলেন পেন্স। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি ট্রাম্পের কথা শোনেননি। মাইক পেন্সের মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল পালটে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন ট্রাম্প। এ নিয়ে ট্রাম্পের রোষানলে পড়েন মাইক পেন্স।
নিকি হ্যালি : রিপাবলিকান পার্টির সবচেয়ে উজ্জ্বল তরুণ সম্ভাবনার একজন হিসাবে বিবেচিত হয় নিকি হ্যালি। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দলে তার অবস্থান যথেষ্ট ম্লান দেখা গেছে।
দক্ষিণ ক্যারোলিনায় পাঞ্জাবি শিখ অভিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণকারী হ্যালি ২০০৯ সালে দেশের সর্বকনিষ্ঠ গভর্নর হয়েছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে দক্ষিণ ক্যারোলিনা ক্যাপিটল থেকে কনফেডারেট পতাকা অপসারণের আহ্বান জানিয়ে আলোচনায় আসেন।
২০১৬ সালে তিনি ট্রাম্পের ‘ভক্ত নন’ বলা সত্ত্বেও জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হওয়ার জন্য তার মনোনয়ন গ্রহণ করেছিলেন। হ্যালি তিনি এখনও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন করেন কিনা তা নিয়ে বেশ সন্দেহ আছে।