ঢাকা 5:53 pm, Sunday, 27 July 2025

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে থাকলে ইউরোপের পতন হবেই, হুঁশিয়ারি নোয়াম চমস্কির

  • Reporter Name
  • Update Time : 01:28:23 pm, Friday, 2 June 2023
  • 18 Time View

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের অধীনে থাকলে ইউরোপের পতনের আশঙ্কা করেছেন বিখ্যাত মার্কিন চিন্তাবিদ এবং গবেষক নোয়াম চমস্কি।

তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “ইউরোপ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে থাকে তাহলে সম্ভবত এটি পতনের সম্মুখীন হবে এবং শিল্পহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে চমস্কি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, ইউরোপকে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর তা হল তারা কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের অধীনে থাকবে, যার ফলে তাদেরকে সম্ভবত পতনের মুখোমুখি হতে হবে এবং এমনকি কিছু ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে শিল্পহীন হয়ে পড়বে। অথবা এটি কোনওভাবে পূর্ব ইউরোপ অর্থাৎ রাশিয়ার প্রাকৃতিক অর্থনৈতিক অংশীদারের সাথে জড়িত থাকবে যেখানে ইউরোপের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ সম্পদ উভয়ই রয়েছে এবং লাভজনক চীনা বাজারের প্রবেশদ্বার রয়েছে?

ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বর্তমান প্রবণতা নিয়ে ইউরোপে আমেরিকার আধিপত্য বিস্তারের পরিণতি সম্পর্কে বিখ্যাত এই মার্কিন চিন্তাবিদের সতর্কবার্তাটি সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষে দিকে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি ট্রান্সআটলান্টিক কনভারজেন্সকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালান যাতে ইউরোপকে আবারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ে স্থাপন করা যায় এবং ওয়াশিংটন তার নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ইউরোপীয়দেরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ও রাশিয়ার মোকাবেলা এবং মস্কোর বিরুদ্ধে সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক চুক্তি বা জেসিপিও ইস্যুতে আমেরিকা ও ইউরোপের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান সেই ট্রান্সআটলান্টিক কনভারজেন্সের প্রতিই ইঙ্গিত করে।

চমস্কি এ সম্পর্কে বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন আমেরিকার জন্য সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। কারণ আমেরিকা ইউরোপকে এক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং একটি একতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ার তার আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করছে।

এদিকে, ইউরোপ এবং আমেরিকার মধ্যে ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন (আইআরএ) এর মতো পরিকল্পনা অনুমোদন ও অনুসরণ করে ওয়াশিংটন আসলে ইউরোপের জন্য একটি দুর্দান্ত প্রতিযোগী হয়ে উঠেছে এবং প্রকৃতপক্ষে ইউরোপীয় অর্থনীতিকে দুর্বল করার ভূমিকায় নেমেছে। দেখে মনে হচ্ছে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বাইডেন সরকারের পদক্ষেপ এবং কার্যক্রম, যেমন মুদ্রাস্ফীতি আইন যার ভিত্তিতে বড় বড় মার্কিন সংস্থাগুলোর উপর কর হ্রাস করা হয়েছে এবং একই সাথে বিদেশি সংস্থা এবং পণ্যের উপর কর আরোপ করা হয়েছে। আর এর ফলে ইউরোপের অর্থনীতির জন্য এটি মারাত্মক প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

যদিও হোয়াইট হাউস আইআরএ আইনকে মার্কিন উৎপাদন পুনরুজ্জীবিত করার এবং নবায়নযোগ্য প্রযুক্তির প্রচারের একটি উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো বিশ্বাস করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সবুজ অর্থনীতি খাতে ভর্তুকি দিয়ে ইউরোপের সাথে একটি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে। একই সময়ে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর পণ্যের উপর ট্যাক্স আরোপ করার ফলে ইউরোপীয়দেরকে মার্কিন প্রতিযোগীদের সাথে ন্যায্যভাবে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে।

পরিশেষে এটি দেখা যাচ্ছে যে ওয়াশিংটন তার স্লোগান সত্ত্বেও সে তার মিত্রদের স্বার্থের প্রতি কোনও মনোযোগ দেয়নি এবং আমেরিকা তার মিত্রদেরকে নিজের স্বার্থে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে ওয়াশিংটনের এই নীতি আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিখ্যাত স্লোগান “আমেরিকা ফার্স্ট” এর উপর ভিত্তি করে একতরফাবাদের ধারাবাহিকতার প্রতিনিধিত্ব করে। তথ্যসূত্র: স্পুটনিক নিউজ, প্রেসটিভি, লুমি নিউজ, তাগরিব নিউজ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

শহীদ হান্নানের একমাত্র সন্তান বাবার মুখ দেখেনি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে থাকলে ইউরোপের পতন হবেই, হুঁশিয়ারি নোয়াম চমস্কির

Update Time : 01:28:23 pm, Friday, 2 June 2023

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের অধীনে থাকলে ইউরোপের পতনের আশঙ্কা করেছেন বিখ্যাত মার্কিন চিন্তাবিদ এবং গবেষক নোয়াম চমস্কি।

তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “ইউরোপ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে থাকে তাহলে সম্ভবত এটি পতনের সম্মুখীন হবে এবং শিল্পহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে চমস্কি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, ইউরোপকে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর তা হল তারা কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের অধীনে থাকবে, যার ফলে তাদেরকে সম্ভবত পতনের মুখোমুখি হতে হবে এবং এমনকি কিছু ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে শিল্পহীন হয়ে পড়বে। অথবা এটি কোনওভাবে পূর্ব ইউরোপ অর্থাৎ রাশিয়ার প্রাকৃতিক অর্থনৈতিক অংশীদারের সাথে জড়িত থাকবে যেখানে ইউরোপের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ সম্পদ উভয়ই রয়েছে এবং লাভজনক চীনা বাজারের প্রবেশদ্বার রয়েছে?

ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বর্তমান প্রবণতা নিয়ে ইউরোপে আমেরিকার আধিপত্য বিস্তারের পরিণতি সম্পর্কে বিখ্যাত এই মার্কিন চিন্তাবিদের সতর্কবার্তাটি সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষে দিকে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি ট্রান্সআটলান্টিক কনভারজেন্সকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালান যাতে ইউরোপকে আবারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ে স্থাপন করা যায় এবং ওয়াশিংটন তার নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ইউরোপীয়দেরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ও রাশিয়ার মোকাবেলা এবং মস্কোর বিরুদ্ধে সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক চুক্তি বা জেসিপিও ইস্যুতে আমেরিকা ও ইউরোপের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান সেই ট্রান্সআটলান্টিক কনভারজেন্সের প্রতিই ইঙ্গিত করে।

চমস্কি এ সম্পর্কে বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন আমেরিকার জন্য সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। কারণ আমেরিকা ইউরোপকে এক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং একটি একতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ার তার আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করছে।

এদিকে, ইউরোপ এবং আমেরিকার মধ্যে ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন (আইআরএ) এর মতো পরিকল্পনা অনুমোদন ও অনুসরণ করে ওয়াশিংটন আসলে ইউরোপের জন্য একটি দুর্দান্ত প্রতিযোগী হয়ে উঠেছে এবং প্রকৃতপক্ষে ইউরোপীয় অর্থনীতিকে দুর্বল করার ভূমিকায় নেমেছে। দেখে মনে হচ্ছে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বাইডেন সরকারের পদক্ষেপ এবং কার্যক্রম, যেমন মুদ্রাস্ফীতি আইন যার ভিত্তিতে বড় বড় মার্কিন সংস্থাগুলোর উপর কর হ্রাস করা হয়েছে এবং একই সাথে বিদেশি সংস্থা এবং পণ্যের উপর কর আরোপ করা হয়েছে। আর এর ফলে ইউরোপের অর্থনীতির জন্য এটি মারাত্মক প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

যদিও হোয়াইট হাউস আইআরএ আইনকে মার্কিন উৎপাদন পুনরুজ্জীবিত করার এবং নবায়নযোগ্য প্রযুক্তির প্রচারের একটি উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো বিশ্বাস করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সবুজ অর্থনীতি খাতে ভর্তুকি দিয়ে ইউরোপের সাথে একটি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে। একই সময়ে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর পণ্যের উপর ট্যাক্স আরোপ করার ফলে ইউরোপীয়দেরকে মার্কিন প্রতিযোগীদের সাথে ন্যায্যভাবে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে।

পরিশেষে এটি দেখা যাচ্ছে যে ওয়াশিংটন তার স্লোগান সত্ত্বেও সে তার মিত্রদের স্বার্থের প্রতি কোনও মনোযোগ দেয়নি এবং আমেরিকা তার মিত্রদেরকে নিজের স্বার্থে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে ওয়াশিংটনের এই নীতি আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিখ্যাত স্লোগান “আমেরিকা ফার্স্ট” এর উপর ভিত্তি করে একতরফাবাদের ধারাবাহিকতার প্রতিনিধিত্ব করে। তথ্যসূত্র: স্পুটনিক নিউজ, প্রেসটিভি, লুমি নিউজ, তাগরিব নিউজ