মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ :
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক না থাকায় এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্তে হাজীগঞ্জে বাড়তে পারে প্রার্থীর সংখ্যা। ফিরে আসতে পারে জাকজমকপুর্ণ ভোটের পরিবেশ। হতে পারে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচন। প্রথম ধাপে তপসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থী ও ভোটারের মাঝে চলে এসেছে ভোটের আমেজ। যদিও হাজীগঞ্জে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২১ মে এসব উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে। গত সোমবার (১ এপ্রিল) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এ নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম তফসিল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় নির্বাচন হবে, সেখানে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২১ এপ্রিল। মনোনয়ন বাছাই হবে ২৩ এপ্রিল, আপিল ২৪-২৬ এপ্রিল ২৭ থেকে ২৯ এপ্রিল । মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল ও প্রতীক বরাদ্দ ২ মে এবং ভোট গ্রহণ ২১ মে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এদিন হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি ও চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ দিকে তপসিল ঘোষণার আগ থেকেই হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। তফসিল ঘোষণার পূর্বেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই নেমে পড়েছেন প্রচার-প্রচারণায়। ইতিমধ্যে এক ডজনেরও বেশি সম্ভাব্য প্রার্থী তাদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। তবে তফসিল ঘোষণার পর থেকে কারা প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বেশির ভাগ নেতা এখনো নীরব রয়েছেন। তবে দলটির কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছেন নিজেদের মতো করে। যেমন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সদস্য মো. মিজানুর রহমান লিটন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবু সুফিয়ান রানা ও উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মো. আকতার হোসেন দুলাল রয়েছেন।
নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্ধীতা করবেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা মোজাম্মেল হোসেন মজুমদার পরান। তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।
অপর দিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কাউকে প্রার্থী করছে না। নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার কৌশল নিয়েছে দলটি। অর্থ্যাৎ দল থেকে কাউকে সুনির্দিষ্ট বা মৌন সমর্থন দেওয়া হবে না। যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে আসছে না, তাই একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করতেই কৌশল হিসেবে দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ রাখা হচ্ছে না। যার ফলে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মাঈনুদ্দিন আবারও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। তার সাথে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ রোটা. আহসান হাবিব অরুন, উপজেলা সভাপতি হেলাল উদ্দিন মিয়াজী ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী জসিম উদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ সৈয়দ আহাম্মদ খসরু।
এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে আবারও নির্বাচন করবেন, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক মুরাদ। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জানান দিয়েছেন, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মো. মাসুদ ইকবাল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক মো. ফরিদুল ইসলাম ও সাবেক ছাত্রনেতা মো. কামরুজ্জামান সুমন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করনে, বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মির্জা শিউলী পারভীন মিলি। তবে এ পদে এখন পর্যন্ত অন্য কাউকে প্রচার-প্রচারণায় দেখা যায়নি।
সব কথার শেষ কথা, সময় যত যাচ্ছে ততই জোরালো হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের এ তালিকা নিয়ে আলোচনা। শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে কারা ভোটের মাঠে থাকবেন, নাকি এ তালিকা আরো দীর্ঘ হবে এ দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সবাই। তবে সবার ধারনা, যেহেতু দলীয় প্রতীক থাকছেনা এবং ইভিএমে ভোটগ্রহণ, সেহেতু এবারের নির্বাচন অনেক জাকজমকপুর্ন ও প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হতে চলছে।