ঢাকা ০৩:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুরে ব্যবসায়ী নারায়ন হত্যা মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৩৩:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪
  • ৫৯ Time View

চাঁদপুর শহরের ঘোষ পাড়ার দই-মিষ্টি ব্যাবসায়ী নারায়ন চন্দ্র ঘোষকে (৬০) গলা কেটে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় একমাত্র আসামী রাজীব ওরপে রাজু চন্দ্র শীলকে (৩০) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। রবিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে চাঁদপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মহসিনুল হক এই রায় দেন।

কারাদন্ডপ্রাপ্ত রাজু কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার ফতেহাবাদ গ্রামের সুভাষ চন্দ্র শীলের ছেলে। ঘটনার সময় তিনি চাঁদপুর শহরের বিপনীবাগ বাজারের টিপটপ হেয়ার কার্টি সেলুনে কাজ করতেন। হত্যার শিকার নারায়ন চন্দ্র ঘোষ শহরের ঘোষ পাড়ার বাসিন্দা। তিনি শহরের বিপনীবাগসহ বিভিন্ন দোকানে দই ও মিষ্টি বিক্রি করে জীবীকা নির্বাহ করতেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানাগেছে, ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে নারায়ন চন্দ্র ঘোষ আসামী রাজুর সেলুনে যান। কারণ নারায়ন চন্দ্র ঘোষ সুদে টাকা ঋন দিতেন। রাজু তার কাছ থেকে দৈনিক ২০ টাকা সুদের বিনিময়ে ২ হাজার টাকা ঋন নেন। নিয়মিত ওই সুদ পরিশোধ করলেও ঘটনার দিন করতে পারেননি। রাজু নারায়ন চন্দ্র ঘোষকে চলে যেতে বলেন এবং পরে আসতে বলেন। পরে রাত ১২টার দিকে আবার আসলে তার চুল কাটতে এবং সেভ করতে বলেন। ঠিক ওই সময় রাজু ক্ষিপ্ত হয়ে সেভ করার এক পর্যায় ধারালো খুর দিয়ে তার গলা কাটেন এবং তাকে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে তার মরদেহ বিপনীবাগ বাজারের শরীফ স্টিলের নিকট বস্তায় করে রেখে আসেন।

পরদিন ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টায় স্বজনরা স্থানীয়দের মাধ্যমে নারায়ন চন্দ্র ঘোষের মরদেহের খোঁজ পান। পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে আইনী পক্রিয়া শেষ করেন।

এই ঘটনায় নারায়ন চন্দ্র ঘোষের ছেলে রাজীব ঘোষ ১৭ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর সদর মডেল থানায় রাজীব ওরপে রাজু চন্দ্র শীলকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ ২১ সেপ্টেম্বর আসামী রাজুকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন।

মামলাটি তদন্ত করেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুল ইসলাম। তিনি তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ১৪ মার্চ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।

রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রনজিত রায় চৌধুরী বলেন, মামলাটি দুই বছরের অধিক সময় আদালতে চলাকালীন ২১ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। আসামী নিজের অপরাধ স্বীকার, স্বাক্ষ্য ও প্রমাণ এবং মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে বিচারক এই রায় দেন। রায়ের সময় আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আসামী কারাগারে থাকা অবস্থায় ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম হন। তার বর্তমান নাম আবদুর রহমান বলে সে নিজেই আইনজীবীকে জানায়।

আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন লিগ্যাল এইডের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

সীমান্তে বিজিবির হাতে বিএসএফ সদস্য আ’ট’ক

চাঁদপুরে ব্যবসায়ী নারায়ন হত্যা মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড

Update Time : ০৮:৩৩:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪

চাঁদপুর শহরের ঘোষ পাড়ার দই-মিষ্টি ব্যাবসায়ী নারায়ন চন্দ্র ঘোষকে (৬০) গলা কেটে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় একমাত্র আসামী রাজীব ওরপে রাজু চন্দ্র শীলকে (৩০) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। রবিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে চাঁদপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মহসিনুল হক এই রায় দেন।

কারাদন্ডপ্রাপ্ত রাজু কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার ফতেহাবাদ গ্রামের সুভাষ চন্দ্র শীলের ছেলে। ঘটনার সময় তিনি চাঁদপুর শহরের বিপনীবাগ বাজারের টিপটপ হেয়ার কার্টি সেলুনে কাজ করতেন। হত্যার শিকার নারায়ন চন্দ্র ঘোষ শহরের ঘোষ পাড়ার বাসিন্দা। তিনি শহরের বিপনীবাগসহ বিভিন্ন দোকানে দই ও মিষ্টি বিক্রি করে জীবীকা নির্বাহ করতেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানাগেছে, ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে নারায়ন চন্দ্র ঘোষ আসামী রাজুর সেলুনে যান। কারণ নারায়ন চন্দ্র ঘোষ সুদে টাকা ঋন দিতেন। রাজু তার কাছ থেকে দৈনিক ২০ টাকা সুদের বিনিময়ে ২ হাজার টাকা ঋন নেন। নিয়মিত ওই সুদ পরিশোধ করলেও ঘটনার দিন করতে পারেননি। রাজু নারায়ন চন্দ্র ঘোষকে চলে যেতে বলেন এবং পরে আসতে বলেন। পরে রাত ১২টার দিকে আবার আসলে তার চুল কাটতে এবং সেভ করতে বলেন। ঠিক ওই সময় রাজু ক্ষিপ্ত হয়ে সেভ করার এক পর্যায় ধারালো খুর দিয়ে তার গলা কাটেন এবং তাকে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে তার মরদেহ বিপনীবাগ বাজারের শরীফ স্টিলের নিকট বস্তায় করে রেখে আসেন।

পরদিন ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টায় স্বজনরা স্থানীয়দের মাধ্যমে নারায়ন চন্দ্র ঘোষের মরদেহের খোঁজ পান। পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে আইনী পক্রিয়া শেষ করেন।

এই ঘটনায় নারায়ন চন্দ্র ঘোষের ছেলে রাজীব ঘোষ ১৭ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর সদর মডেল থানায় রাজীব ওরপে রাজু চন্দ্র শীলকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ ২১ সেপ্টেম্বর আসামী রাজুকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন।

মামলাটি তদন্ত করেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুল ইসলাম। তিনি তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ১৪ মার্চ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।

রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রনজিত রায় চৌধুরী বলেন, মামলাটি দুই বছরের অধিক সময় আদালতে চলাকালীন ২১ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। আসামী নিজের অপরাধ স্বীকার, স্বাক্ষ্য ও প্রমাণ এবং মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে বিচারক এই রায় দেন। রায়ের সময় আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আসামী কারাগারে থাকা অবস্থায় ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম হন। তার বর্তমান নাম আবদুর রহমান বলে সে নিজেই আইনজীবীকে জানায়।

আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন লিগ্যাল এইডের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া।