নাম যাই হোক বাঙ্গি একটি স্বাস্থ্যকর ফল। পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং অনেক উপকারী ফল এটি। হুট বা বাঙ্গি এক রকমের শশা জাতীয় ফল। তবে বাঙ্গি শশার চেয়ে বেশ বড় হয়। কাঁচা বাঙ্গি সবুজ, পাকলে হলুদ রঙের হয়। এর বাইরের দিকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো হালকা ডোরাকাট খাজযুক্ত এবং ভেতরের দিকটা ফাঁকা।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের চরপাড়া ও কালোচো দক্ষিণ ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের এবার ভাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলন ভাল হয়েছে বলে জানান কৃষকেরা। বাঙ্গি চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা বাঙ্গি চাষে ঝুঁকছে। তবে এ বছর ফলন বেশী হওয়ায় বাঙ্গির দাম পাচ্ছেনা কৃষকরা।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে গত বছর এ উপজেলায় ১২ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে। উপজেলার দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের চরপাড়া, রাজারগাঁও ইউনিয়নের কির্তনখোলা, কালোচোঁ উত্তর ইউনিয়নের রাজাপুরা গ্রামে দিগন্তজোড়া মাঠে শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ। এই সবুজের মাঝে থরে থরে সাজানো আছে বড় বড় বাঙ্গি। দেখলে শুধু চোখ নয়, মনও জুড়িয়ে যায়।
এ সব গ্রামে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় প্রখর রৌদ্র উপেক্ষা করে কেহ বিক্রীর জন্য ক্ষেত থেকে বাঙ্গি তুলছে, কেহ আবার বাঙ্গি ক্ষেতের পরিচর্যা করছে।
আলাপকালে বাঙ্গি চাষি আবদুল খালেক জানান, প্রায় কানি জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। গত বছর একই পরিমান জমির বাঙ্গি সাড়ে ৪ লাখ টাকায় বিক্রী করেছেন। এবার তিনি ৪ হাজার গর্তে ১৬ হাজার চারা লাগিয়েছেন। এক্ষেত্রে একটি গর্তে ৬টি করে বাঙ্গি হলেও ৯৬ হাজার বাঙ্গি বিক্রীর আশা করছেন তিনি।
আরেক চাষীর স্ত্রী জোহরা খাতুন বলেন, এবার প্রায় ৩ একর জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। প্রতি পিস বাঙ্গি পাইকারী দামে বড় হলে ৫০ টাকা আর ছোট হলে ১৫ টাকা আবার মাঝারী চাইসের বাঙ্গি ২৫/৩০টাকায় বিক্রয় করা হয়।
হাজীগঞ্জ থেকে বাঙ্গি কিনতে আসা বেপারী আব্দুল লতিফ বলেন চরপাড়া অঞ্চলের ভাঙ্গি মানে ভাল। তাই তিনি এখানে ভাঙ্গি কিনতে এসেছেন।
লতিফ বেপারী আরো জানান, তিনি কৃষকের ক্ষেত থেকে ৪০/৫০ টাকা দরে প্রতিটি ভাঙ্গি কিনেছেন। ক্ষেত থেকে এনে গাড়ীতে উঠানো এবং গাড়ী ভাড়া দিয়ে হাজীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত পৌছাতে ভাঙ্গি প্রতি আরো প্রায় ৭/৮ টাকা খরচ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, উপজেলার দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের মাটি বাঙ্গি চাষের উপযোগী।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এ উপজেলায় ১২ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে। এ বছর আমাদেরর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে।
আগামীতে আরো বেশি পরিমান জমিতে বাঙ্গি চাষের আশা করছি। প্রথমে বাঙ্গির দাম কম থাকলেও প্রচণ্ড গরম পড়ায় বাঙ্গির কদর বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাঙ্গি উপকারী একটি ফল। বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। এতে খাদ্য উপাদান হিসাবে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম প্রচুর পরিমানে আছে। তাই গ্রীষ্মকালে এবং ইফতারিতে বাঙ্গি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, অ্যাসিডিটি, আলসার, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধা মন্দাসহ অনেক রোগের প্রতিকার করে থাকে। বাঙ্গি দেহের ওজন কমাতে ও ত্বকের নানা রকমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।