ঢাকা 12:57 pm, Saturday, 28 June 2025

হাজীগঞ্জে বাবা-মাকে হারিয়ে অবুঝ তিন সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ !

  • Reporter Name
  • Update Time : 03:27:03 pm, Saturday, 15 June 2024
  • 11 Time View

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ :

স্ত্রীকে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে জেলা সদরে যেতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মো. মোজাম্মেল হোসেন (৪০) ও পিংকি বেগম (৩০) দম্পতি। মঙ্গলবার (১১ জুন) বেলা আড়াইটার দিকে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের গোগরা গ্রামের ফারুক মেম্বার বাড়ির সামনে ট্রাক ও সিএনজির মুখোমুখি সংর্ঘষে ওই দম্পতি মারা যান। ওই দুর্ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু ও ২ জন গুরুতর আহত হন।

ওই দিন রাত সাড়ে বারোটার দিকে জানাযা শেষে বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া গ্রামের বেপারি বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে নিহত দম্পতি মোজাম্মেল হোসেন ও পিংকি বেগমের দাফন সম্পন্ন করা হয়। এছাড়া একই দিন রাতে দুর্ঘটনায় অপর নিহত সবুজ হাওলাদারকেও জানাযা শেষে একই ইউনিয়নের গোগরা গ্রামের হাওলাদার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ওই সময়ে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল। তিনি নিহত মোজাম্মেলের বাবা ও শশুরকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন এবং মোজাম্মেলের বাবার হাতে অনুদান তুলে দেন। এসময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) প্রকৌ. মো. জাকির হোসেন ও বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিলনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত প্রবাসী মোজাম্মেল হোসেনের ভগ্নিপতি (বোনের স্বামী) বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ড্রাম ট্রাক চালককে আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ।

জানা গেছে, মো. মোজাম্মেল হোসেন ওমান প্রবাসী। সম্প্রতি তিনি দেশে আসেন। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি অসুস্থ স্ত্রী পিংকি বেগমকে চিকিৎসক দেখানোর উদ্দেশ্যে জেলা সদর চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর তারা বাকিলা বাজারে এসে একটি সিএনজিচালিত স্কুটারে ওঠেন। এসময় আরও দুই যাত্রী সিএনজিতে ছিলেন। চালক ও আরোহীসহ পাঁচজনকে নিয়ে সিএনজিটি চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

পথে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের গোগরা নামক এলাকায় সিএনজিটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে ঘটনাস্থলে সবুজ হাওলাদার নামে এক যাত্রী নিহত হন। স্থানীয়রা চালকসহ অপর চারজন যাত্রীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মোজাম্মেল হোসেন ও তার স্ত্রী পিংকি বেগম মারা যান। পিংকি বেগম চার মাসের অন্ত:সত্ত্বা ছিলেন বলে জানা গেছে।

এদিকে মোজাম্মেল দম্পতির মৃত্যুর খবরে পরিবার শোকে পাথর হয়ে গেছে। এই দম্পতির রয়েছে ৬ বছর বয়সি জমজ তিন শিশু সন্তান। তারা হলেন, মো. আনাছুর রহমান, মো. আমির হামজা ও আলিফা ইসলাম। মা-বাবাকে হারিয়ে ওই তিন শিশু এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের কান্না যেন আর থামছে না। অবুঝ এই শিশু সন্তানকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই স্বজন-প্রতিবেশীদের। বাবা-মা হারা এই শিশুদের ভবিষ্যৎ কী হবে?

এমন ভাবনায় এখন তাদের স্বজন-প্রতিবেশীরা চিন্তিত। শিশু তিনটির কান্নায় চোখ ভিজে উঠছে তাঁদেরও। ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের চোখের জল যেন বাধাহীন ছলছল করছে। কান্নার রোল পুরো পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনসহ পুরো বাড়ি ও এলাকা জুড়ে। তিন শিশু শুধু সবার চোখে-মুখে তাকিয়ে থাকে। শিশুরা কখনো কাঁদছে, আবার কখনো খেলাধূলা করছে।

জানা গেছে, নিহত মোজাম্মেল হোসেনের বাবা ও মা রয়েছেন। তারা মোজাম্মেল দম্পতির তিন শিশু সন্তানকে দেখাশুনা করবেন। পরবর্তীতে মোজাম্মেল হোসেন বাবা ও শশুরের পরিবারের লোকজন বসে শিশুদের সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে বাবা-মা হারা এতিম তিন শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত পরিবারের লোকজন।

এ বিষয়ে কথা হয় বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিলনের সাথে। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি বড় নির্মম, কষ্টের। একটি দুর্ঘটনা তিনটি অবুঝ শিশুর সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। এই বাচ্চাদের সামনে গেলে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

হাজীগঞ্জে ইসকনের আয়োজনে রথ যাত্রায় হাজার হাজার ভক্তবৃন্দের অংশগ্রহণ

হাজীগঞ্জে বাবা-মাকে হারিয়ে অবুঝ তিন সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ !

Update Time : 03:27:03 pm, Saturday, 15 June 2024

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ :

স্ত্রীকে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে জেলা সদরে যেতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মো. মোজাম্মেল হোসেন (৪০) ও পিংকি বেগম (৩০) দম্পতি। মঙ্গলবার (১১ জুন) বেলা আড়াইটার দিকে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের গোগরা গ্রামের ফারুক মেম্বার বাড়ির সামনে ট্রাক ও সিএনজির মুখোমুখি সংর্ঘষে ওই দম্পতি মারা যান। ওই দুর্ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু ও ২ জন গুরুতর আহত হন।

ওই দিন রাত সাড়ে বারোটার দিকে জানাযা শেষে বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া গ্রামের বেপারি বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে নিহত দম্পতি মোজাম্মেল হোসেন ও পিংকি বেগমের দাফন সম্পন্ন করা হয়। এছাড়া একই দিন রাতে দুর্ঘটনায় অপর নিহত সবুজ হাওলাদারকেও জানাযা শেষে একই ইউনিয়নের গোগরা গ্রামের হাওলাদার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ওই সময়ে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল। তিনি নিহত মোজাম্মেলের বাবা ও শশুরকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন এবং মোজাম্মেলের বাবার হাতে অনুদান তুলে দেন। এসময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) প্রকৌ. মো. জাকির হোসেন ও বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিলনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত প্রবাসী মোজাম্মেল হোসেনের ভগ্নিপতি (বোনের স্বামী) বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ড্রাম ট্রাক চালককে আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ।

জানা গেছে, মো. মোজাম্মেল হোসেন ওমান প্রবাসী। সম্প্রতি তিনি দেশে আসেন। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি অসুস্থ স্ত্রী পিংকি বেগমকে চিকিৎসক দেখানোর উদ্দেশ্যে জেলা সদর চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর তারা বাকিলা বাজারে এসে একটি সিএনজিচালিত স্কুটারে ওঠেন। এসময় আরও দুই যাত্রী সিএনজিতে ছিলেন। চালক ও আরোহীসহ পাঁচজনকে নিয়ে সিএনজিটি চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

পথে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের গোগরা নামক এলাকায় সিএনজিটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে ঘটনাস্থলে সবুজ হাওলাদার নামে এক যাত্রী নিহত হন। স্থানীয়রা চালকসহ অপর চারজন যাত্রীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মোজাম্মেল হোসেন ও তার স্ত্রী পিংকি বেগম মারা যান। পিংকি বেগম চার মাসের অন্ত:সত্ত্বা ছিলেন বলে জানা গেছে।

এদিকে মোজাম্মেল দম্পতির মৃত্যুর খবরে পরিবার শোকে পাথর হয়ে গেছে। এই দম্পতির রয়েছে ৬ বছর বয়সি জমজ তিন শিশু সন্তান। তারা হলেন, মো. আনাছুর রহমান, মো. আমির হামজা ও আলিফা ইসলাম। মা-বাবাকে হারিয়ে ওই তিন শিশু এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের কান্না যেন আর থামছে না। অবুঝ এই শিশু সন্তানকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই স্বজন-প্রতিবেশীদের। বাবা-মা হারা এই শিশুদের ভবিষ্যৎ কী হবে?

এমন ভাবনায় এখন তাদের স্বজন-প্রতিবেশীরা চিন্তিত। শিশু তিনটির কান্নায় চোখ ভিজে উঠছে তাঁদেরও। ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের চোখের জল যেন বাধাহীন ছলছল করছে। কান্নার রোল পুরো পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনসহ পুরো বাড়ি ও এলাকা জুড়ে। তিন শিশু শুধু সবার চোখে-মুখে তাকিয়ে থাকে। শিশুরা কখনো কাঁদছে, আবার কখনো খেলাধূলা করছে।

জানা গেছে, নিহত মোজাম্মেল হোসেনের বাবা ও মা রয়েছেন। তারা মোজাম্মেল দম্পতির তিন শিশু সন্তানকে দেখাশুনা করবেন। পরবর্তীতে মোজাম্মেল হোসেন বাবা ও শশুরের পরিবারের লোকজন বসে শিশুদের সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে বাবা-মা হারা এতিম তিন শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত পরিবারের লোকজন।

এ বিষয়ে কথা হয় বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিলনের সাথে। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি বড় নির্মম, কষ্টের। একটি দুর্ঘটনা তিনটি অবুঝ শিশুর সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। এই বাচ্চাদের সামনে গেলে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না।