ত্রিনদীন অনলাইন:
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় স্বামী লোনের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় দুই দুগ্ধ শিশুসহ স্ত্রীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। একটি ব্যাংকের সাভার শাখা থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ নেন আশুলিয়ার বাইদগাঁও এলাকার ব্যবসায়ী মনির হোসেন। ব্যবসা ভালো থাকার সময় ঠিকমতো ঋণ পরিশোধ করেছেন তিনি।
পরিশোধের টাকার পরিমাণ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা; কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় প্রায় এক লাখ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন তিনি। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন।
ঋণ গ্রহীতা মনির হোসেনের স্ত্রী হানিয়া আক্তারকেও আসামি করা হয়। ওই মামলায় পুলিশ মনিরকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে। পুলিশ তার স্ত্রীর সঙ্গে তাদের দুই সন্তান আড়াই বছরের রায়হান আর ১৪ মাস বয়সের মাশরাফকে থানায় নিয়ে আসে।
মায়ের সঙ্গে ছোট ছোট দুই শিশুকে থানায় নিয়ে আসার বিষয়টি জানাজানি হলে নিন্দা জানিয়েছেন অনেকে। তবে পুলিশ বলছে- তার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে আশুলিয়া থানা থেকে তাকে ঢাকার আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আশুলিয়ার বাইদগাঁও তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতার হানিয়া আক্তার ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বাইদগাঁও এলাকার মনির হোসেনের স্ত্রী।
গ্রেফতার মনিরের স্ত্রী বলেন, আমি জানি না কেন তারা আমাকে গ্রেফতার করেছে। শুধু শুনেছি আমার স্বামী নাকি কিস্তি দিতে পারে নাই। তাই তারা আমার নামে মামলা দিয়েছে। অথচ আমি কোনো এনজিও থেকে টাকাই তুলিনি। তারা স্বামীকে কিছু না বলে আমাকে ধরে এনেছেন।
ঋণ গ্রহীতা এবং গ্রেফতারকৃত ওই নারীর স্বামী মনির হোসেন বলেন, ঋণ নিয়েছি আমি, আমাকে গ্রেফতার না করে তারা আমার স্ত্রী সন্তানকে থানায় নিয়ে গেছে। ছোট্ট ব্যবসা করতাম লোকসানের মুখে পড়ায় কিস্তি দিতে কিছুটা সময় নিচ্ছি।
গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া আশুলিয়া থানার এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, হানিয়া বেগমের নামে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে, তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মায়ের সঙ্গে দুই শিশুসহ নিয়ে আসার কারণ সম্পর্কে পুলিশের এই এসআই বলেন, ছোট ছোট বাচ্চা দুটিকে মায়ের সঙ্গে নিয়ে এসেছি যাতে সে দ্রুত জামিন পান। এটাতো অন্যায় কিছু হয়নি। তাকে এনে হাজতেও রাখা হয়নি। মুন্সির রুমে বিছানা করে রাখা হয়েছিল। কারণ বাচ্চারাতো আর অপরাধ করেনি। এছাড়া তাকে প্রিজনভ্যানেও পাঠানো হয়নি। একটা সিএনজি ভাড়া করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংকটির সেকেন্ড অফিসার তাপস সরকারের কাছে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে তিনি জানান, ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ১০ মাস মেয়াদি ৩ লাখ টাকা মাইক্রোক্রেডিট লোন নেন মনির হোসেন। ওই লোনের জামিনদার ছিলেন তার স্ত্রী হানিয়া আক্তার। প্রতিদিন ১ হাজার ৮শ টাকা কিস্তিতে তাকে লোন দেওয়া হয়। তার কাছে এখনো ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫০ টাকা পাওনা রয়েছে। এই টাকা দীর্ঘ দিনেও পরিশোধ না করায় হেড অফিস থেকে দুটি মামলা করা হয়। যার একটি মামলায় ওই নারীকে গ্রেফতার করা হয়।
লোন নিয়েছেন তার স্বামী, তাহলে কেন স্ত্রীর নামে মামলা দেওয়া হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তার স্ত্রী লোনের জামিনদার ছিল তাই তার নামেও মামলা হয়েছে।
দুটি শিশু বাচ্চাসহ তাকে রাতে ধরে এনে থানায় রাখা হলো মানবিক দৃষ্টিতে এটা কিভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা পুলিশের ব্যাপার, এ ব্যাপারে আমি কোনো কমেন্টস করতে পারব না।