সম্প্রতি ওই এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে ইউনিয়নের উত্তর এলাকার ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মাদকের ভয়াবহতার চিত্র। এসব এলাকার পাশে মতবল দক্ষিণ উপজেলা থেকে মাদক এনে বিক্রি করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের বড় ধরণের অভিযানের পর কয়েক বছর বন্ধ থাকলেও আবার মাদকের ভয়াবহতা বাড়তে থাকে এই এলাকায়। একটি সংঘবদ্ধ মাদক কারবারি চক্র গ্রামের প্রতিটি বাড়ি বড়িতে মাদক প্রবেশ করাচ্ছে। যার ফলে মাদক সেবী ও বিক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ইউনিয়ন জুড়ে মাদক কারবারি আছে। তবে সম্প্রতি সময়ে দক্ষিণ রালদিয়া থেকে পশ্চিম হোসনপুর গ্রামের বডুর বাজার সংলগ্ন মোল্লা কান্দি এবং দক্ষিণ রালদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ইউনিয়ন পারিবারিক স্বাস্থ্য ক্লিনিক পর্যন্ত মাদক কারবারিদের আনাগোনা বেশি। বিকেল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত এসব এলাকায় চলে মাদক সেবন ও কেনাবেচা।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মাদক কারবারিদের ধরতে না পারায় সম্প্রতি সোচ্চার হয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল। তারা এলাকায় মাদকবিরোধী কমিটি করে প্রতিবাদ শুরু করেছে। এই কমিটির সদস্যরা অভিভাবকদের সচেতন করার চেষ্টা করছে।
কমিটির লোকজন জানান, পশ্চিম হোসেনপুর গ্রামের নান্নু মিজির ছেলে নয়ন মিজি মাদক মামলার ওয়ারেন্টুভুক্ত পলাতক আসামী। নয়ন এখন পর্যন্ত এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। এছাড়াও এলাকায় খুচরা মাদক বিক্রেতা হচ্ছে-পশ্চিম হোসেনপুর গ্রামের ওসমান মিজির ছেলে এমরান মিজি, পশ্চিম হোসেনপুর মোল্লা কান্দির মৃত মহর আলী মোল্লার ছেলে তাজল মোল্লা, একই গ্রামের মৃত আলী আশ্বাদের ছেলে বোরহান মোল্লা, নাছির মোল্লার ছেলে মহসিন মোল্লা, হারুন পাটোয়ারীর ছেলে রাজন পাটোয়ারী ও দক্ষিণ রালদিয়া ওমর মাল বাড়ির জলিল পাটোয়ারীর ছেলে মামুন পাটোয়ারী।
তারা আরো জানান, একটি সংঘবদ্ধ চক্র এলাকার যুব সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকদেরকে মাদকের সাথে জড়াচ্ছে। চক্রের সদস্যদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পশ্চিম হোসেনপুর গ্রামের হাসিম গাজীর ছেলে রুবেল গাজী ওরফে গাজী কালু। সে এলাকায় মাদক এনে খুচরা বিক্রি করে। তার বাবা হাসিম গাজীও অনেক পুরনো চিহ্নিত মাদক কারবারি।
এছাড়াও প্রকাশ্যে মাদক সেবন বিক্রিতে জড়িত আছে দক্ষিণ রালদিয়া গ্রামের আনোয়ার খানের ছেলে কামরুল খান। মাদকের কারবার তার অনপুস্থিতিতে চালায় তার স্ত্রী। একইভাবে প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও বিক্রিতে জড়িত পশ্চিম হোসেনপুর গ্রামের আলফু গাজীর ছেলে মাসুদ গাজী। কামরুল খান ও মাসুদ গাজীর প্রকাশ্যে মাদক সেবনের চিত্র এখন মানুষের হাতে হাতে। তবে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তারা কিছুদিন আড়ালে থাকলেও এখন আবার প্রকাশ্যে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এসব এলাকায় মাদক প্রবেশ করানোর কাজ করেন দক্ষিণ রালদিয়া গ্রামের মৃত এনায়েত খানের ছেলে আবুল খায়ের খান। মূলত সে একজন মাদক পাচারকারী।
এই ইউনিয়নে গত প্রায় ৪ বছর পূর্বে মাদক কারবারে জড়িত ছিলো পতিত সরকারের বিভিন্ন দলীয় পদে থাকা কতিপয় ব্যাক্তি। তাদেরকে মাদক থেকে সরিয়ে আনতে সদর মডেল থানা পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সতর্ক করে দেয়। অভিভাবকদেরকে সতর্ক করে দেয়ার পর দেড় থেকে দুই বছর মাদকের ভয়াবহতা কম ছিলো। তবে গেল বছর ৫ আগস্টের পর মাদকের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক বলেন, সন্তানদের নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কারণ মাদকে জড়িতদের সাথে মিশে তারাও বিপদগামী হচ্ছে। প্রশাসন এদের আইনের আওতায় না আনলে এই এলাকায় লোকজন সন্তানদের নিয়ে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হবেন। একই সাথে এলাকায় অপরাধমূলক কাজ বৃদ্ধি পাবে।
তারা আরো বলেন, আমরা এসব বিষয় চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. রবিউল হাসান, সদর সার্কেল ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ে কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। মাদকের এই ভয়াবহতা থেকে পরিত্রান চাই। এলাকাবাসী তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান বলেন, আশিকাটি এলাকা আমাদের নজরদারীতে আছে। ইতোমধ্যে ওই এলাকায় গিয়ে অভিভাবকদের সচেতন করা হয়েছে। সমাবেশ করে সদরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও মাদকের বিরুদ্ধে বলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। মাদকের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
চাঁদপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর গোয়েন্দা পুলিশ ওই এলাকায় একাধিকবার গিয়েছে। হাতেনাতে কাউকে পাওয়া যায়নি। আরো অভিযান পরিচালনা করা হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজন সহযোগিতা করলে মাদকে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. রবিউল হাসান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অনেকেই অভিযোগ করে। আমাদের রুটিন কাজেও ব্যস্ত থাকতে হয়। তারপরেও সুনির্দিষ্টভাবে যারা মাদকের সাথে জড়িত, তাদেকে আইনের আওতায় আনার জন্য গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হবে।
নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ 













