ঢাকা ০৭:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আমাদের খুশি করলে, আপনার স্বামীকে ছেড়ে দেব’ আসামির স্ত্রীকে বললেন পুলিশ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:৩০:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ৫৮ Time View

ইমা আক্তার হ্যাপী

পুলিশের নির্যাতনে বডিবিল্ডার ফারুক হোসেনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রাজধানীর বংশাল থানার ওসি মাইনুল ইসলামসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে এ মামলাটি করেন ফারুক হোসেনের স্ত্রী ইমা আক্তার হ্যাপী। এ মামলার অপর আসামিরা হলেন— বংশাল থানার এসআই ইমদাদুল হক, আবু সালেহ, মাসুদ রানা ও বুলবুল আহমেদ।

এদিকে ফারুকের স্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, কায়েতটুলি ফাঁড়ি থেকে স্বামীকে ছেড়ে দিতে প্রথমে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। পরে দেওয়া হয় কুপ্রস্তাব। এ কুপ্রস্তাব দেন বংশাল থানার এসআই ইমদাদুল হক ও মাসুদ রানা।

ইমা আক্তার বলেন, ওরা (ইমদাদুল ও মাসুদ রানা) আমাকে বলছে— আমাদের দিকে একটু দেখেন, আমাদের খুশি করেন, আমরা আপনার স্বামীকে ছেড়ে দেব।

মামলার অভিযোগে ফারুকের স্ত্রী উল্লেখ করেন, গত ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফারুক হোসেন খাজা দেওয়ান সিং লেন লালবাগের বাসা থেকে ব্যক্তিগত কাজে বের হন। এর এক ঘণ্টা পর ফারুক হোসেন স্ত্রী হ্যাপীকে ফোন দিয়ে জানান, তাকে সন্দেহজনকভাবে কায়েতটুলী ফাঁড়ির কতিপয় পুলিশ গ্রেফতার করে আটকে রেখে নির্যাতন করছে। দুই বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে হ্যাপী সেখানে ছুটে যান। দেখেন— ফারুককে পুলিশ সদস্যরা মারধর করে আটকে রেখেছে। হ্যাপী সেখানে উপস্থিত এসআই ইমদাদুল হক, মাসুদ রানা, বুলবুল আহমেদসহ অন্যদের পা ধরে তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানান।

তখন ইমদাদুল হক তাকে বলেন, ফারুক অনেক বড় ক্রিমিনাল, তাদের গালিগালাজ করেছে। এমনিতে ছাড়া যাবে না। ওকে ছাড়তে হলে এক লাখ টাকা লাগবে।

আরো পড়ুন- ইমরান ও বুশরার আরো ৭ বছরের কারাদণ্ড

তখন হ্যাপী জানান, তার স্বামী সিটি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েবের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। আগে বডিবিল্ডার ছিলেন মিস্টার বাংলাদেশ হিসেবে। তিনটি ছোট ছোট সন্তান, তার ইনকামেই সংসার চলে। তাকে ছেড়ে দিন। পরে এক লাখ থেকে কমিয়ে তারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তাকে কুপ্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় আসামিরা ফারুককে ব্যাপক মারধর করেন।

আসামিরা জানান, সে (ফারুক) একজন মাদক ব্যবসায়ী। তারা কিছু করতে পারবে না। তাদের বড় স্যার জানে কী করবে। এর কিছুক্ষণ পর ফারুককে মোটরসাইকেলে করে বংশাল থানার দিকে নিয়ে যায়।

অভিযোগে বাদী আরও উল্লেখ করেন, তিনি তখন মাইনুল হোসেনের হাত-পা ধরে আকুতি-মিনতি করে স্বামীকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। তারা তাকে পর দিন সিএমএম আদালতে যোগাযোগ করতে বলেন। পর দিন হ্যাপী কোর্টে যান স্বামীর খবর নিতে। সেখানে অনেক কষ্টে স্বামীর সাক্ষাৎ পান। স্ত্রীকে মারধরের কথা জানান ফারুক। তার কিছু হলে আদালতে বিচার চাইতে বলেন। ফারুকের বিরুদ্ধে ১৫০ গ্রাম গাজার মামলা দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পারেন হ্যাপী। বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে যান। ১৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক ব্যক্তি হ্যাপীকে জানান, ফারুক মারা গেছেন।

হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তিনি স্বামীর লাশ দেখতে পান। ফারুকের গলায়, বুকে, পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান তিনি।

আদালত অভিযোগটি তদন্ত করতে ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী ২৮ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

মতলবে পশ্চিম নাগদা মুন্সিবাড়িতে দুইদিন ব্যাপী বার্ষিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত

‘আমাদের খুশি করলে, আপনার স্বামীকে ছেড়ে দেব’ আসামির স্ত্রীকে বললেন পুলিশ

Update Time : ০৯:৩০:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

পুলিশের নির্যাতনে বডিবিল্ডার ফারুক হোসেনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রাজধানীর বংশাল থানার ওসি মাইনুল ইসলামসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে এ মামলাটি করেন ফারুক হোসেনের স্ত্রী ইমা আক্তার হ্যাপী। এ মামলার অপর আসামিরা হলেন— বংশাল থানার এসআই ইমদাদুল হক, আবু সালেহ, মাসুদ রানা ও বুলবুল আহমেদ।

এদিকে ফারুকের স্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, কায়েতটুলি ফাঁড়ি থেকে স্বামীকে ছেড়ে দিতে প্রথমে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। পরে দেওয়া হয় কুপ্রস্তাব। এ কুপ্রস্তাব দেন বংশাল থানার এসআই ইমদাদুল হক ও মাসুদ রানা।

ইমা আক্তার বলেন, ওরা (ইমদাদুল ও মাসুদ রানা) আমাকে বলছে— আমাদের দিকে একটু দেখেন, আমাদের খুশি করেন, আমরা আপনার স্বামীকে ছেড়ে দেব।

মামলার অভিযোগে ফারুকের স্ত্রী উল্লেখ করেন, গত ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফারুক হোসেন খাজা দেওয়ান সিং লেন লালবাগের বাসা থেকে ব্যক্তিগত কাজে বের হন। এর এক ঘণ্টা পর ফারুক হোসেন স্ত্রী হ্যাপীকে ফোন দিয়ে জানান, তাকে সন্দেহজনকভাবে কায়েতটুলী ফাঁড়ির কতিপয় পুলিশ গ্রেফতার করে আটকে রেখে নির্যাতন করছে। দুই বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে হ্যাপী সেখানে ছুটে যান। দেখেন— ফারুককে পুলিশ সদস্যরা মারধর করে আটকে রেখেছে। হ্যাপী সেখানে উপস্থিত এসআই ইমদাদুল হক, মাসুদ রানা, বুলবুল আহমেদসহ অন্যদের পা ধরে তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানান।

তখন ইমদাদুল হক তাকে বলেন, ফারুক অনেক বড় ক্রিমিনাল, তাদের গালিগালাজ করেছে। এমনিতে ছাড়া যাবে না। ওকে ছাড়তে হলে এক লাখ টাকা লাগবে।

আরো পড়ুন- ইমরান ও বুশরার আরো ৭ বছরের কারাদণ্ড

তখন হ্যাপী জানান, তার স্বামী সিটি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েবের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। আগে বডিবিল্ডার ছিলেন মিস্টার বাংলাদেশ হিসেবে। তিনটি ছোট ছোট সন্তান, তার ইনকামেই সংসার চলে। তাকে ছেড়ে দিন। পরে এক লাখ থেকে কমিয়ে তারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তাকে কুপ্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় আসামিরা ফারুককে ব্যাপক মারধর করেন।

আসামিরা জানান, সে (ফারুক) একজন মাদক ব্যবসায়ী। তারা কিছু করতে পারবে না। তাদের বড় স্যার জানে কী করবে। এর কিছুক্ষণ পর ফারুককে মোটরসাইকেলে করে বংশাল থানার দিকে নিয়ে যায়।

অভিযোগে বাদী আরও উল্লেখ করেন, তিনি তখন মাইনুল হোসেনের হাত-পা ধরে আকুতি-মিনতি করে স্বামীকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। তারা তাকে পর দিন সিএমএম আদালতে যোগাযোগ করতে বলেন। পর দিন হ্যাপী কোর্টে যান স্বামীর খবর নিতে। সেখানে অনেক কষ্টে স্বামীর সাক্ষাৎ পান। স্ত্রীকে মারধরের কথা জানান ফারুক। তার কিছু হলে আদালতে বিচার চাইতে বলেন। ফারুকের বিরুদ্ধে ১৫০ গ্রাম গাজার মামলা দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পারেন হ্যাপী। বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে যান। ১৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক ব্যক্তি হ্যাপীকে জানান, ফারুক মারা গেছেন।

হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তিনি স্বামীর লাশ দেখতে পান। ফারুকের গলায়, বুকে, পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান তিনি।

আদালত অভিযোগটি তদন্ত করতে ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী ২৮ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।