• শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
পুলিশ প্রশাসনের কোন দপ্তরে ঘুষ বা দুর্নীতি থাকবে না-পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব চাঁদপুর সদর থানায় ঢুকে পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করলেন শিক্ষার্থীরা, ওসি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি চাঁদপুরে ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড, শহরে জলাবদ্ধতা পুলিশ সুপারেরর সাথে বৈশম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সাথে সদর উপজেলা ইউএনও’র মতবিনিময় সভা চাঁদপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা কচুয়ায় রাস্তার পাশ থেকে অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার নোয়াখালীর সাবেক এমপি স্ত্রী ও সন্তানসহ আটক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান কিনা রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে যা বললেন নাহিদ কচুয়ায় সড়কে যানজট নিরসনে স্কাউট সদস্য ও সাধারন শিক্ষার্থী

বীর মুত্তিযোদ্ধা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৩ জনের তালিকা চূড়ান্ত

ত্রিনদী অনলাইন
ত্রিনদী অনলাইন
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০২৪

বীর মুত্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নে বড় বাধা হচ্ছে যাচাই-বাছাই কমিটি। উপজেলা পর্যায়ে কমিটির বাছাই করা তালিকা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্ভুল হয় না। ফলে পুনরায় যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। অপরদিকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) উপজেলা কমিটির বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানিতে বিলম্ব করে।

এছাড়া সরকার পরিবর্তনের পর তালিকা থেকে বাদ পড়ে অনেকের নাম। যার বা যাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় তারা প্রতিকারের জন্য উচ্চ আদালতের দারস্থ হয়। আদালতের রায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে তালিকা প্রকাশে নির্দেশনা আসে। তখন আবার তালিকায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির নাম সংযোজন করতে হয়। এভাবে ৫৩ বছর ধরে ঝুলছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের কাজ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক  বলেন, আমাদের যাচাই-বাছাই যা হওয়ার হয়ে গেছে। তবে কিছু আবেদনের আপিল শুনানি এখনো বাকি রয়েছে।
মামলা বা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধের কারণে যেসব উপজেলায় যাচাই-বাছাই শেষ হয়নি সে বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, মামলার বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় চূড়ান্ত। যাচাই-বাছাই আর হবে না। তাহলে কবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত হবে-এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৩ জনের তালিকা চূড়ান্ত। এর বাইরে আপিল আবেদন থেকে আরও ১০০ জন যোগ হতে পারে। আর বাড়বে না। মামলায় যারা জয়ী হয়ে আসবে তাদেরগুলো কী হবে-এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আদালতের আদেশ মানতে আমরা আইনগতভাবেই বাধ্য।

 ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, যার কাজ তাকে দিয়ে না করলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। আমলানির্ভর হয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করা অসম্ভব। কারণ আমলাদের অনেকেই আছেন, যারা স্বাধীনতাবিরোধী আদর্শ লালন করেন। আমাদের দাবি ছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যারা অতীতে লিখেছেন এখনো লিখছেন যারা গবেষণা করছেন-এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিটি করতে হবে। কিন্তু তা করা হয়নি। কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে কিন্তু ফলাফল শূন্য।

তিনি আরও বলেন, ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৩ জনের যে তালিকা বর্তমানে প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে অনেক অমুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। অনেক কোটিপতি টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ক্রয় করেছে। আমাদের দাবি ছিল অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করে তাদের সাহায্য করতে হবে। কিন্তু সচ্ছল কোটিপতিরাও এখন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা নিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে একটি পূর্ণাঙ্গ বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা কখনো পাওয়ার আশা করা যায় না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর দেশের কোথাও কোনো মুক্তিযোদ্ধা তালিকার বাইরে থেকে গেছে কিনা-তা নিশ্চিত করতে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়। তখন বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদন আহ্বান করা হয়। ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর আবেদন গ্রহণ করা হয়। ওই সময় করা আবেদনগুলো ক, খ ও গ তালিকা নাম দিয়ে ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি যাচাই-বাছাই কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

এক্ষেত্রে বিধান করা হয়, উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আবেদনকারীকে শনাক্ত করবেন। যদি সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা এই মর্মে সাক্ষ্য দেন যে, আবেদনকারী একজন মুক্তিযোদ্ধা, তাহলে তার আবেদন ক-তালিকাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশে জামুকায় বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়। জামুকার সুপারিশসহ মন্ত্রণালয় গেলে তা গেজেট প্রকাশ করা হয়।

এছাড়া উপজেলা পর্যায়ের যাচাই-বাছাইয়ে যদি ৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাক্ষ্য দেন আবেদনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবার ৪ জন যদি সাক্ষ্য দেন আবেদনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা না, তা হলে সে আবেদনটি খ-তালিকাভুক্ত করা হয়। এই তালিকার আবেদনকারী জামুকায় আপিল করেন। আর কারও আবেদনের বিষয়ে উপজেলা পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধারা যদি সাক্ষ্য দেন সে অ-মুক্তিযোদ্ধা, তাহলে তার আবেদন গ-তালিকাভুক্ত করা হয় এবং সে জামুকায় আপিল করেন। বাছাই কমিটিতে টাকা লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।

জামুকার হিসাব মতে, দেশের ২৮টি উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন এখনো যাচাই-বাছাই শেষ হয়নি। ক-তালিকা অন্তর্ভুক্তির ৮টি আবেদন অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। খ ও গ তালিকার ২১ হাজার ৪৮৩টি আপিল আবেদন এখনো যাচাই করা সম্ভব হয়নি। বন্ধ ভাতা চালুর আপিল অনিষ্পন্ন রয়েছে ৬৩৯টি। গেজেটভুক্তির জন্য পুলিশের ১ হাজার ১৩৮টি আবেদন এখনো পেন্ডিং রয়েছে। এছাড়া উচ্চ আদালতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

জানতে চাইলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল যুগান্তরকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা চূড়ান্তকরণের কাজ প্রায় শেষ। তবে কিছু কিছু জেলার আপিল আবেদনে শুনানি চলছে। জামুকা এখন আপিল শুনানি করছে। জামুকার সুপারিশের পরও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম কেন বাদ যাচ্ছ-এমন প্রশ্নের উত্তরে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, অনেক সময় কাগজপত্রে ত্রুটি থাকে। তথ্যের অভাবে যাদের নামে গেজেট হয় না-এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাই এবং তখন তাদের নাম গেজেটে প্রকাশ হয়।

জানা গেছে, জামুকা দেশের ৮ বিভাগের জন্য আটজন খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধাকে প্রধান করে আটটি কমিটি গঠন করে ২০১৯ সাল থেকে তালিকাভুক্তির জন্য করা মুক্তিযোদ্ধাদের আপিল শুনানি করছেন। শুনানিতে তারা জানতে বা দেখতে চান, কোথায় যুদ্ধ করেছেন, কত দিন ট্রেনিং করেছেন। কী কী অস্ত্রের ট্রেনিং নিয়েছেন। যুদ্ধে কী কী অস্ত্র ব্যবহার করেছেন। কোথায় ট্রেনিং নিয়েছেন। সামরিক না বেসামরিক ক্যাম্পে ট্রেনিং নিয়েছেন। কমান্ডারের নাম কী। কোথায় যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। যুদ্ধ কতদিন স্থায়ী হয়েছিল। সহযোদ্ধা হিসাবে কেউ আহত কিংবা নিহত হয়েছেন কিনা। জীবিতদের মধ্যে কেউ বেঁচে আছেন কিনা? জীবিত সহযোদ্ধাদের তারা চেনেন কিনা। এছাড়া জন্মতারিখ, শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে সনদপত্র এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যেসব কাগজপত্র রয়েছে তা যাচাই করা হয়।

সোমবার জামুকায় গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ঘুরাঘুরি করছেন। তাদের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বশির আহমেদ। তার বাড়ি চাঁদপুর উত্তর থানা।  তার ভাই সিপাহি মো. আবুল বাশার ইপিআর-এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম হালিশহর ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বাড়িতে আসেন। বাড়িতে এসে আবুল বাশার চেঙ্গার চরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তার সহযোদ্ধা হিসাবে ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম, এমএ ওয়াদুদ এবং আব্দুল লতিফ বাঘ। যুদ্ধ শেষে সে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে অস্ত্র জমা দেন।
এরপর মো. আবুল বাশার সৌদি আরবে চলে যান এবং কয়েক বছর পর মারা যান। কিন্তু তার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পায়নি। সব কাগজপত্র থাকার পরও তিনি বছরের পর বছর ঘুরছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা বশির আহমদের অভিযোগ জামুকার কর্মচারীরা টাকা চায়। অনেক টাকা।

চাঁদপুরের মতলব উপজেলার নূরনবী খলিফা যুগান্তরকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ডা. আব্দুল লতিফের সঙ্গে থেকে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিয়েছেন। ১৯৯৮ সালে তিনি সৌদি আরব যান এবং ২০ বছর পর দেশে ফেরেন। ইতোমধ্যে ডা. আব্দুল লতিফও ইন্তেকাল করেন। উপজেলা থেকে তার আবেদন যাচাই-বাছাই হয়ে এসেছে কিন্তু গত কয়েক বছর তার নামে গেজেট প্রকাশ হয়নি। তার অভিযোগ জামুকার কর্মচারীরা টাকা চায়।

পাবনার সাঁথিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মান্নান । সব কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তার নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। তিনিও অভিযোগ করে বলেন, এখানে কর্মচারীরা টাকা চায়। অপর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহ আলম যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পাওয়ার এক পর্যায়ে ২০১৫ সালে হঠাৎ ৪৬ জনের ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করি এবং সব শেষ গত ২৩ জুন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ আমাদের পক্ষে রায় দিয়ে ২০১৫ সাল থেকে এরিয়ারসহ ভাতা প্রদানের নির্দেশ দেন। কিন্তু গত ছয় মাসেও সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ কার্যকর হয়নি। জামুকা শুধু ঘুরাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ২০ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা দিচ্ছে সরকার। এছাড়া ঈদ উপলক্ষ্যে ১০ হাজার করে দুটি বোনাস, বিজয় দিবসে ৫ হাজার টাকা এবং নববর্ষের ২ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন তারা। খেতাবপ্রাপ্ত, শহিদ ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ১১ হাজার ৯৯৮ জন। তারা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সম্মানীভাতা পাচ্ছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুক

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০