ঢাকা 7:43 pm, Sunday, 20 July 2025

বর্ষা এলেই চারদিকে শিশু মৃত্যু : প্রতিরোধে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতার বিকল্প নেই

  • Reporter Name
  • Update Time : 12:48:23 pm, Wednesday, 24 April 2024
  • 7 Time View

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ :

চাঁদপুরে পানিতে ডুবে প্রতিবছর প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিশু প্রাণ হারায়। আর জাতীয় হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৩০টি শিশু মারা যাচ্ছে। যাদের বয়স গড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী এবং পুকুর, ডোবা ও বালতির পানিতে ডুবেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এসব মৃত্যুর ৮০ শতাংশই বাড়ি ও বাড়ি থেকে ২০ মিটারের মধ্যে ঘটে থাকে।

এভাবে পানিতে ডুবে অকালে শিশু মৃত্যুবরণ করলেও এই মৃত্যুর হাত থেকে কোনভাবেই প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ হলো মা-বাবা বা পরিবারের সদস্যদের অসচেতনতা। অথচ শিশুদের একটু দেখভাল করে রাখাসহ পারিবারিক ও সামাজিকভাবে একটু সচেতন হলেই এসব মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব।

দেখা গেছে, বাবারা জীবিকার তাগিদে বেশি সময় বাইরে থাকেন এবং মায়েরা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গৃহস্থালি কাজের ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাচ্চাদেরক সঠিকভাবে দেখাশোনা করতে পারেন না। ফলে একটা বাচ্চা তার মায়ের দৃষ্টিগোচরে বাড়ির পাশে পুকুর বা জলাশয়ে কাছে গিয়ে কৌতূহলবশত পানিতে নেমে যায়।

এছাড়াও শিশুদের সাথে বাড়ি বা বাড়ির বাহিরে খেলতে গিয়েও শিশুরা খেলার ছলে বা কৌতূহলবশত পানিতে নেমে পড়ে। এতে সাঁতার না জানার কারণে শিশুরা পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। পাশাপাশি পুকুর, ডোবা কিংবা অন্যান্য জলাশয়ে শিশুদের খেলতে দেখে বাঁধা না দেওয়ার কারণে অকালেও প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা।

তাই শিশুদের এই অকালমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে পরিবারের সদস্যদের সাথে আমাদের সর্বস্তরের জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে এবং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধ করতে হবে।

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ও ইউনিসেফ’র মতামত অনুযায়ী, কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তোলা, প্রাক-স্কুলের শিশুদের জন্য শিশু যত্ন কেন্দ্রের সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বিনিয়োগ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

এখন গ্রীষ্মকাল। অর্থ্যাৎ বৈশাখ মাস চলছে। আর সামনে আসছে বর্ষাকাল। আষাড়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস এলেই চারদিকে অহরহ পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। তাই, এখন থেকে আমাদের সচেতন হতে হবে। আসুন জেনে নেই, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কি ?

প্রথমত, যেসব পরিবারের ছোট শিশু রয়েছে ওইসব পরিবারে বাবা, মা ও পরিবারের সদস্যদের সচেতনত হতে হবে। শিশু হাঁটতে শিখলে তাকে চোখে চোখে রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, পাঁচ বছর বয়স হলেই শিশুকে সাঁতার শেখাতে হবে। তৃতীয়ত, বাড়ির পাশের পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ের দিকে যেন না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

প্রয়োজনে বাড়ির পাশের পুকুর বা জলাশয়ে যাওয়ার পথে কিংবা পুকুর বা জলাশয়ের চারদিকে বেড়া দিতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় পুকুর বা গর্ত ডোবা থাকলে বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা যারা প্রাপ্তবয়স্ক রয়েছি, তারা পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ে শিশুদের দেখলেই জলাশয় থেকে উঠিয়ে তাদেরকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

আর এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সর্বোপরি পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতার বিকল্প নেই। যা পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক জাতীয় এক ক্যাম্পেইনে আলোচকদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কিডনি দান করা সেই স্ত্রীর বিরুদ্ধেই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ স্বামীর

বর্ষা এলেই চারদিকে শিশু মৃত্যু : প্রতিরোধে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতার বিকল্প নেই

Update Time : 12:48:23 pm, Wednesday, 24 April 2024

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ :

চাঁদপুরে পানিতে ডুবে প্রতিবছর প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিশু প্রাণ হারায়। আর জাতীয় হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৩০টি শিশু মারা যাচ্ছে। যাদের বয়স গড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী এবং পুকুর, ডোবা ও বালতির পানিতে ডুবেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এসব মৃত্যুর ৮০ শতাংশই বাড়ি ও বাড়ি থেকে ২০ মিটারের মধ্যে ঘটে থাকে।

এভাবে পানিতে ডুবে অকালে শিশু মৃত্যুবরণ করলেও এই মৃত্যুর হাত থেকে কোনভাবেই প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ হলো মা-বাবা বা পরিবারের সদস্যদের অসচেতনতা। অথচ শিশুদের একটু দেখভাল করে রাখাসহ পারিবারিক ও সামাজিকভাবে একটু সচেতন হলেই এসব মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব।

দেখা গেছে, বাবারা জীবিকার তাগিদে বেশি সময় বাইরে থাকেন এবং মায়েরা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গৃহস্থালি কাজের ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাচ্চাদেরক সঠিকভাবে দেখাশোনা করতে পারেন না। ফলে একটা বাচ্চা তার মায়ের দৃষ্টিগোচরে বাড়ির পাশে পুকুর বা জলাশয়ে কাছে গিয়ে কৌতূহলবশত পানিতে নেমে যায়।

এছাড়াও শিশুদের সাথে বাড়ি বা বাড়ির বাহিরে খেলতে গিয়েও শিশুরা খেলার ছলে বা কৌতূহলবশত পানিতে নেমে পড়ে। এতে সাঁতার না জানার কারণে শিশুরা পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। পাশাপাশি পুকুর, ডোবা কিংবা অন্যান্য জলাশয়ে শিশুদের খেলতে দেখে বাঁধা না দেওয়ার কারণে অকালেও প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা।

তাই শিশুদের এই অকালমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে পরিবারের সদস্যদের সাথে আমাদের সর্বস্তরের জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে এবং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধ করতে হবে।

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ও ইউনিসেফ’র মতামত অনুযায়ী, কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তোলা, প্রাক-স্কুলের শিশুদের জন্য শিশু যত্ন কেন্দ্রের সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বিনিয়োগ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

এখন গ্রীষ্মকাল। অর্থ্যাৎ বৈশাখ মাস চলছে। আর সামনে আসছে বর্ষাকাল। আষাড়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস এলেই চারদিকে অহরহ পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। তাই, এখন থেকে আমাদের সচেতন হতে হবে। আসুন জেনে নেই, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কি ?

প্রথমত, যেসব পরিবারের ছোট শিশু রয়েছে ওইসব পরিবারে বাবা, মা ও পরিবারের সদস্যদের সচেতনত হতে হবে। শিশু হাঁটতে শিখলে তাকে চোখে চোখে রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, পাঁচ বছর বয়স হলেই শিশুকে সাঁতার শেখাতে হবে। তৃতীয়ত, বাড়ির পাশের পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ের দিকে যেন না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

প্রয়োজনে বাড়ির পাশের পুকুর বা জলাশয়ে যাওয়ার পথে কিংবা পুকুর বা জলাশয়ের চারদিকে বেড়া দিতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় পুকুর বা গর্ত ডোবা থাকলে বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা যারা প্রাপ্তবয়স্ক রয়েছি, তারা পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ে শিশুদের দেখলেই জলাশয় থেকে উঠিয়ে তাদেরকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

আর এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সর্বোপরি পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতার বিকল্প নেই। যা পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক জাতীয় এক ক্যাম্পেইনে আলোচকদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে।