ঢাকা 1:09 am, Saturday, 28 June 2025

বিদেশে বেনজীর ও তার পরিবারের কোন সম্পদ আছে কি না, সেই খোঁজ শুরু করেছে দুদক

  • Reporter Name
  • Update Time : 04:44:55 pm, Wednesday, 29 May 2024
  • 4 Time View

সম্প্রতি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পতি ক্রোকের নির্দেশ দেয় আদালত। এবার পুলিশের এই সাবেক মহাপরিদর্শক ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিদেশে কোন সম্পদ আছে কি না, সেই খোঁজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের পক্ষ থেকে বেনজীর আহমেদের বিদেশে সম্পদের খোঁজ নিতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা বলেন, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর আগে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আদেশ কার্যকর করা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছিল দুদক।

এদিকে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে আগামী ৬ জুন এবং ৯ জুন তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কমিশনের কাছে আবেদন করেছিল সংস্থাটির অনুসন্ধান দল। মঙ্গলবার (২৮ মে) তাদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় কমিশন।

দুদক কমিশনার জহিরুল হক জানান, ‘কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়, তার বক্তব্য জানতে হয়। আইনও সেটা বলে।’

এর আগে দুদক বিভিন্ন সংস্থাকে বেনজীরের ও তার পরিবারের সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বেনজীর পরিবারের ৬২১ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) পেয়েছে দুদক। আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

এছাড়াও প্রাথমিকভাবে বেনজীর ও তার পরিবারের অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে সম্পদ থাকতে পারে বলে ধারণা করছে দুদক। এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতেই বিএফআইইউকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে দুদক থেকে জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব এবং র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাঁদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।

বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানে কমিটি করে দুদক।

বিএফআইইউর একটি সূত্রের দাবি, সম্পদের তথ্য অনুসন্ধানের বিষয়টি আগেই টের পেয়ে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়। ফলে যে ৩৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলোতে তেমন কোনো অর্থ নেই।

দুদকের অনুসন্ধান ও সম্পদ জব্দের বিষয়ে বেনজীর আহমেদের মুঠোফোনে গতকাল যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। গত সোমবার এই প্রতিবেদক যান রাজধানীর গুলশানের র্যানকন আইকন টাওয়ারে, যেখানে বেনজীর পরিবারের চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যদিও বেনজীর পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিদেশে চলে যাওয়া ঠেকাতে দুদক আদালতে নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে দুদকের কারও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে সংস্থাটির আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি অনুসন্ধানকারী দল মনে করে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিদেশে যাওয়া রোধ করা দরকার, তাহলে আদালতে আবেদন করতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কচুয়ায় বৃদ্ধাকে হত্যার ঘটনায় একজন গ্রেফতার, মোবাইল উদ্ধার

বিদেশে বেনজীর ও তার পরিবারের কোন সম্পদ আছে কি না, সেই খোঁজ শুরু করেছে দুদক

Update Time : 04:44:55 pm, Wednesday, 29 May 2024

সম্প্রতি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পতি ক্রোকের নির্দেশ দেয় আদালত। এবার পুলিশের এই সাবেক মহাপরিদর্শক ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিদেশে কোন সম্পদ আছে কি না, সেই খোঁজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের পক্ষ থেকে বেনজীর আহমেদের বিদেশে সম্পদের খোঁজ নিতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা বলেন, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর আগে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আদেশ কার্যকর করা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছিল দুদক।

এদিকে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে আগামী ৬ জুন এবং ৯ জুন তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কমিশনের কাছে আবেদন করেছিল সংস্থাটির অনুসন্ধান দল। মঙ্গলবার (২৮ মে) তাদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় কমিশন।

দুদক কমিশনার জহিরুল হক জানান, ‘কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়, তার বক্তব্য জানতে হয়। আইনও সেটা বলে।’

এর আগে দুদক বিভিন্ন সংস্থাকে বেনজীরের ও তার পরিবারের সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বেনজীর পরিবারের ৬২১ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) পেয়েছে দুদক। আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

এছাড়াও প্রাথমিকভাবে বেনজীর ও তার পরিবারের অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে সম্পদ থাকতে পারে বলে ধারণা করছে দুদক। এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতেই বিএফআইইউকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে দুদক থেকে জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব এবং র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাঁদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।

বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানে কমিটি করে দুদক।

বিএফআইইউর একটি সূত্রের দাবি, সম্পদের তথ্য অনুসন্ধানের বিষয়টি আগেই টের পেয়ে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়। ফলে যে ৩৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলোতে তেমন কোনো অর্থ নেই।

দুদকের অনুসন্ধান ও সম্পদ জব্দের বিষয়ে বেনজীর আহমেদের মুঠোফোনে গতকাল যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। গত সোমবার এই প্রতিবেদক যান রাজধানীর গুলশানের র্যানকন আইকন টাওয়ারে, যেখানে বেনজীর পরিবারের চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যদিও বেনজীর পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিদেশে চলে যাওয়া ঠেকাতে দুদক আদালতে নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে দুদকের কারও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে সংস্থাটির আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি অনুসন্ধানকারী দল মনে করে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিদেশে যাওয়া রোধ করা দরকার, তাহলে আদালতে আবেদন করতে পারে।