জুমার নামাজের খুতবার আলোচনায় সুদ-ঘুষ ও বেপর্দার বিরুদ্ধে বয়ান করায় মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আউয়ালকে চাকরি ছাড়তে বলা হয়েছে এমন তথ্য সঠিক নয় বলে দাবী করেছেন খোদ ভাইরাল হওয়া ওই ইমাম।
এমন অভিযোগের খবর ভাইরাল হলে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বাদ জোহর সরেজমিনে কথা হয় চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের আলোনিয়া গ্রামের বাইতুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আব্দুল আউয়ালের সাথে। মসজিদ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে জড়িয়ে যে সংবাদটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয় বলে দাবী করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, মসজিদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পুলিশ কর্মকর্তা ইমরান শাহীন চৌধুরীকে কখনো সরাসরি দেখিনি এবং তিনিও আমাকে দেখেননি। আমি তাকে ফোন করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনি কমিটির অনুমতি না নিয়ে হুজরা খানায় আপনার স্ত্রীকে কেন উঠালেন? আপনার স্ত্রীর কাপড় মসজিদের ওজু খানার সামনে শুকাতে কেন দেন? আপনি চাকুরি ছেড়ে দিবেন। এ ঘটনায় আমি অপমানিত হয়েছি। কারন এগুলো আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করা হয়েছে। আমি ঘটনাটি শুনে শানে সাহাবা জাতীয় খতিব ফাউন্ডেশন চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আনাছ আমিনীকে জানালে তিনি গত সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ফরিদগঞ্জ থানায় ইমামের পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
মাওলানা আব্দুল আউয়ালের দাবী ‘ইমাম সাহেব সুদ-ঘুষ ও হারামের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এটাই তার দোষ’ এমন গুজব পাড়া মহল্লায় ছড়িয়েছেন মূলত ওই মসজিদের মুসুল্লী নিশান, রিপন চৌধুরী ও ফারুক সহ আরো অনেকে।
এদিকে মসজদি কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও পুলিশ কর্মকর্তা ইমরান শাহীন চৌধুরী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইমাম আব্দুল আউয়ালকে আমি সরাসরি কখনো দেখিনি এবং তিনিও আমাকে দেখেননি। আমি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছি। সুদ-ঘুষ আর পুলিশ শব্দ যোগ করলে বিষয়টি দ্রুত ভাইরাল হবে এ জন্য একটি কু-চক্রী মহল গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে আমাকে হেয় করার চেস্টা করেছে। উপরোক্ত ঘটনার সাথে আমার নূন্যতম সম্পর্ক নেই।
এদিকে মসজিদ কমিটির সদস্য ফিরোজ চৌধুরী বলেন, আমি ইমাম সাহেবকে চলে যেতে বলেছি। কারণ, আমরা মসজিদে দুজন নতুন হুজুর নিয়োগ দিবো। সে জন্যে হুজুরকে চলে যেতে বলেছি। ওনাকে রেখে আমাদের পোষায় না। ইমাম আব্দুল আউয়ালকে নিয়োগের সময় শর্ত দেয়া হয়েছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান ও নামাজ, জুমার নামাজ, মসজিদ পরিষ্কার, ওযুখানা-টয়লেট পরিস্কার করতে হবে। তিনি সব শর্ত মেনে তখন ১০ হাজার টাকা বেতনে এখানে ইমামতি করতে রাজি হয়েছেন। এখন তিনি মাসের ১০ দিনই থাকেন বাড়িতে। এজন্য গত ১ বছর পূর্বেই তাকে চাকুরি ছেড়ে দিতে বলেছি। কিন্তু তিনি চাকুরি ছেড়ে না দিয়ে উল্টো মসজিদ কমিটি সহ মুসল্লিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে বসেছে। আমরা আর এই ইমামকে রাখতে চাইনা।
থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত পক্ষকে থানায় আসতে বলা হয়েছে।
এসকল বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত আড়াই বছর যাবত মাওলানা আব্দুল আউয়াল উক্ত মসজিদে পেশ ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মসজিদ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির বরাত দিয়ে ফিরোজ চৌধুরী ইমামকে মসজিদ থেকে চলে গিয়ে অন্যত্র চাকরি খোঁজার কথা বলেন। ভুক্তভোগী ইমাম বিষয়টি শানে সাহাবা জাতীয় খতিব ফাউন্ডেশনকে জানালে সংগঠনের পক্ষ থেকে মসজিদ সভাপতি সহ ৬ জনকে বিবাদী করে ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
অভিযোগ দায়েরকারী খতিব ফাউন্ডেশন চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আনাছ আমিনী জানান, ইমামের বিষয়ে আমাদের জানানোর পর আমরা বিষয়টি তদন্ত করেছি। আমাদের কাছে তদন্তকালে মনে হয়েছে ইমামের কোনো দোষ নেই। আমরা বললে ওই ইমাম সাহেব চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে। তবে এই মসিজদ থেকে ইতিপূর্বে আরো কয়েকজন ইমামকে কমিটির খামখেয়ালি আচরণের কারণে চাকুরি ছেড়ে যেতে হয়েছে। আমরা চাই যে কোনো ইমামের স্থায়ীকরণ, কোনো ইমামের সাথে অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যতি নয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ওই মসজিদের আরো কয়েকজন মুসল্লি বলেন, মসজিদ কমিটির সদস্য ফিরোজ ইতিপূর্বে আরো কয়েকজন ইমামকে অন্যায়ভাবে মসজিদ থেকে চাকরিচ্যুত করেছে। তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই হুজুরদের বিদায় করে দেয়া হয়। এদিকে ওই মসজিদের সাবেক দুই ইমামের চাকরিচ্যুত করার কারণও তুলে ধরেন মুসল্লীরা। সাবেক এক ইমাম স্থানীয় এক কিশোরীর সাথে অপকর্মে লিপ্ত হয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই ইমাম বেশ কিছু পুরনো ইমামদের সংঘঠিত করে মসজিদের মুসল্লীদের বিভক্ত করতে উঠে পড়ে লাগেন।