ঢাকা ০৯:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাত্র ৫ বছরের শিশুকে বিষপান করিয়ে হত্যা করলো সৎ মা

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:১২:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
  • ৭৩ Time View

মাহমুদা

মাত্র ৫ বছরের এক শিশুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে সৎমায়ের বিরুদ্ধে। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ঘাস নিধনের বিষ খাইয়ে সাড়ে ওই শিশুকে হত্যা করা হয়। ৬ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার মাহমুদা নামে ওই শিশুর মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাতে শিশুর বাবা শাহিন আলম বাদী হয়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রী হুমাইরা বেগমের (২২) নামে মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত মাহমুদার দাদা আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাহমুদা আমার ছেলে শাহিন আলমের একমাত্র সন্তান। মাহমুদার জন্মের সময় তার মা মারা যায়। মা মরা শিশুটি ছিল আমাদের পরিবারের সবার চোখের মনি।

তিনি জানান, মাহমুদার মায়ের অভাব পূরণ করতে ছেলে শাহিন আলমকে একই গ্রামের মৃত মুনছুর আলীর মেয়ে হুমাইরার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম। হুমাইয়রার আগেও দুইবার বিয়ে হয়েছিল। তবে সে ছিল নিঃসন্তান। এ কারণেই তাকে পুত্রবধূ বানিয়ে বাড়িতে এনেছিলাম যাতে সেও একটি মেয়ে পায়, আর আমার নাতনিটাও মা পায়।
গত এক বছর ভালোই চলছিল। ফুটফুটে শিশুটিকে মায়ের আদরে যত্ন নিতো হুমাইরা।

আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, সেদিন (১ মার্চ) আমার আদরের নাতনিটা মায়ের কাছে সরবত খেতে চেয়েছিল। সন্ধ্যায় মাহমুদাকে আরসি’র সঙ্গে ঘাস নিধনের বিষ মিশিয়ে তাকে খেতে দেয় হুমাইরা। আরসি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার নাতনি ছটফট করতে থাকে।

তখন হুমাইরা পরিবারের সদস্যদের জানায় ‘আরসি ভেবে ঘাস পোড়ানো ওষুধ খেয়ে ফেলেছে মাহমুদা’।

সেদিন মাহমুদাকে উদ্ধার করে প্রথমে কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পেরে তিনদিন পর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মাহমুদাকে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শনিবার হেরে যায় শিশু মাহমুদা।

আবুল কালাম আরো জানান, মৃত্যুর আগে শিশু মাহমুদা বলে গেছে সৎমা তাকে আরসি খেতে দিয়েছিল। সেটা খেয়েই তার এ অবস্থা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কথাগুলো বলার সময় পরিবারের লোকজন ভিডিও ধারণ করে রেখেছে।

শিশুর বাবা শাহিন আলম অভিযোগ করে বলেন, হত্যার রহস্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ঘটনার ৫ দিন পর হুমাইরা ‘আত্মহত্যা চেষ্টার নাটক’ সাজায়। পরে কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালে একদিন ভর্তিও থাকে সে। তবে মাহমুদার মৃত্যুর খবর পেয়ে সপরিবারে পালিয়ে গেছেন তাঁরা। তাঁদের বাড়িতে এখন তালা ঝুলছে।

এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর বলেন, শিশু হত্যার অভিযোগ মামলা হয়েছে। আমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে কিছু আলামত উদ্ধার করেছি। হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আশা করছি দ্রুতই তাকে আটক করতে পারব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

১০ম গ্রেডসহ ৫ দফা দাবী বাস্তবায়নে ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের স্মারকলিপি প্রদান

মাত্র ৫ বছরের শিশুকে বিষপান করিয়ে হত্যা করলো সৎ মা

Update Time : ১২:১২:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

মাত্র ৫ বছরের এক শিশুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে সৎমায়ের বিরুদ্ধে। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ঘাস নিধনের বিষ খাইয়ে সাড়ে ওই শিশুকে হত্যা করা হয়। ৬ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার মাহমুদা নামে ওই শিশুর মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাতে শিশুর বাবা শাহিন আলম বাদী হয়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রী হুমাইরা বেগমের (২২) নামে মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত মাহমুদার দাদা আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাহমুদা আমার ছেলে শাহিন আলমের একমাত্র সন্তান। মাহমুদার জন্মের সময় তার মা মারা যায়। মা মরা শিশুটি ছিল আমাদের পরিবারের সবার চোখের মনি।

তিনি জানান, মাহমুদার মায়ের অভাব পূরণ করতে ছেলে শাহিন আলমকে একই গ্রামের মৃত মুনছুর আলীর মেয়ে হুমাইরার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম। হুমাইয়রার আগেও দুইবার বিয়ে হয়েছিল। তবে সে ছিল নিঃসন্তান। এ কারণেই তাকে পুত্রবধূ বানিয়ে বাড়িতে এনেছিলাম যাতে সেও একটি মেয়ে পায়, আর আমার নাতনিটাও মা পায়।
গত এক বছর ভালোই চলছিল। ফুটফুটে শিশুটিকে মায়ের আদরে যত্ন নিতো হুমাইরা।

আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, সেদিন (১ মার্চ) আমার আদরের নাতনিটা মায়ের কাছে সরবত খেতে চেয়েছিল। সন্ধ্যায় মাহমুদাকে আরসি’র সঙ্গে ঘাস নিধনের বিষ মিশিয়ে তাকে খেতে দেয় হুমাইরা। আরসি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার নাতনি ছটফট করতে থাকে।

তখন হুমাইরা পরিবারের সদস্যদের জানায় ‘আরসি ভেবে ঘাস পোড়ানো ওষুধ খেয়ে ফেলেছে মাহমুদা’।

সেদিন মাহমুদাকে উদ্ধার করে প্রথমে কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পেরে তিনদিন পর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মাহমুদাকে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শনিবার হেরে যায় শিশু মাহমুদা।

আবুল কালাম আরো জানান, মৃত্যুর আগে শিশু মাহমুদা বলে গেছে সৎমা তাকে আরসি খেতে দিয়েছিল। সেটা খেয়েই তার এ অবস্থা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কথাগুলো বলার সময় পরিবারের লোকজন ভিডিও ধারণ করে রেখেছে।

শিশুর বাবা শাহিন আলম অভিযোগ করে বলেন, হত্যার রহস্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ঘটনার ৫ দিন পর হুমাইরা ‘আত্মহত্যা চেষ্টার নাটক’ সাজায়। পরে কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালে একদিন ভর্তিও থাকে সে। তবে মাহমুদার মৃত্যুর খবর পেয়ে সপরিবারে পালিয়ে গেছেন তাঁরা। তাঁদের বাড়িতে এখন তালা ঝুলছে।

এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর বলেন, শিশু হত্যার অভিযোগ মামলা হয়েছে। আমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে কিছু আলামত উদ্ধার করেছি। হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আশা করছি দ্রুতই তাকে আটক করতে পারব।