হাজীগঞ্জ বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের এন্নাতলী কৃষি মাঠের জমিসহ বাড়ি-ঘর রক্ষার্থে পৌরসভাধীন আলীগঞ্জ এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের বালুমহাল অপসারণে জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোহাসীন উদ্দিনের দ্বারস্থ হয়েছেন, গ্রামের কৃষকসহ নিরিহ ও অসহায় লোকজন। ওই ইউনিয়নের এন্নাতলী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখিন লোকজনের গণস্বাক্ষরকৃত আবেদন মঙ্গলবার (১৩ মে) বেলা ১১টার দিকে জেলাপ্রশাসকের হাতে তুলে দেন, গ্রামবাসীর পক্ষে মো. তাজুল ইসলাম, মো. জিল্লুর রহমান, মো. আ. রাজ্জাক ও মো. ইমাম হোসেন।
এসময় বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত বলে জানান, জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আবেদনপত্র প্রদানকালে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম বাদশা, সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন, হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান মাহমুদসহ ওই গ্রামের বেশ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন
।
এদিকে আবেদনপত্রের অনুলিপি ভূমি মন্ত্রণলায়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চাঁদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এবং চাঁদপুর ও হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবকে প্রদান করা হয়েছে
আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, ডাকাতিয়া নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড় এবং নদীর চরের পাশে অবস্থিত উপজেলার ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের এন্নাতলী গ্রাম। নদীর উত্তর ও পূর্বপাড় হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৯নং ওয়ার্ড আলীগঞ্জ এলাকা। গত কয়েক বছর ধরে নদীর পূর্বপাড়, আলীগঞ্জ এলাকায় বেশ কয়েকটি বালু মহাল গড়ে উঠেছে। এই বালু ব্যবসার কারণে নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত এন্নাতলি চরের প্রায় সহস্রাধীক শতাংশ কৃষিজমি ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। এতে এন্নাতলীসহ নদী সংশ্লিষ্ট আশপাশের গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক ও দরিদ্র মানুষ ইতিমধ্যে কৃষিজমি এবং ভিটে-মাটিহীন হয়ে পড়েছেন।
এছাড়াও পরিবর্তন হয়েছে, নদীর গতিপথ এবং ভাঙ্গন অব্যাহৃত থাকায় কৃষিজমির পাশাপাশি অনেকের বাড়ি-ঘর এখন অস্বিস্ত সংকটে। পাশাপাশি বাতাসে বালু ওড়ে ফল ও শাকসবজি গাছের উপর পড়ার কারণে বেশ কিছু কৃষিজমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। উল্লেখ্য, ডাকাতিয়া নদীর পূর্বপাড়ে নদীর চরে পৌরসভাধীন আলীগঞ্জ এলাকায় যখন বালুমহাল স্থাপন ও বালু ব্যবসা শুরু হয়। তখন বালু পড়ে চরের জমিগুলো চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে অসহায় কৃষকেরা প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের শেষ সম্বল জমিগুলো কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। ফলে কৃষকসহ অর্ধ-শতাধিক সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এখন আবার অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং ফসল উৎপাদনও ব্যাপক হারে কমেছে।
তাছাড়া, নদীর উত্তর পাড়ে উপজেলা ভূমি অফিসের ভবনটি পুরানো হওয়ায় এমনিতেই জরাজীর্ণ, তার উপর প্রতিনিয়ত নদীর পাড় ভাঙ্গনে ভবনটিও হুমকির মুখে। কারণ, নদীর পূর্বপাড়ে প্রতিনিয়ত ১৫/২০টি ট্রলার অবস্থান করে। এতে চলমান ট্রলারগুলোতে নদীর পশ্চিমপাড় দিয়ে চলাচল করতে হয়। এছাড়াও বালু আনলোডের সময় ট্রলারগুলো যখন ঘোরানো হয়, তখন ট্রলারের ঘুর্ণিয়মান পাখায় নদীর তলদেশের মাটি ক্ষয় হতে থাকে। ফলে নদীর পশ্চিম পাড় ভেঙ্গে জমিগুলো নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে। চলতি বছর নদী ভাঙ্গনে এন্নাতলী কৃষি মাঠের একমাত্র সেচ পাম্পটিও ভেঙ্গে পড়ে। পরবর্তীদের কৃষকদের ক্ষোভের মুখে বালু ব্যবসায়ীরা নতুন করে সেচ পাম্পটি স্থাপন করে দিতে বাধ্য হন। আবার নদীর পূর্বপাড়ে বালু আনলোড করার কারণে প্রতিনিয়ত বালু পড়ে নদীর পূর্বপাড় ভরাট হচ্ছে।
আবেদনপত্রে সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন এলাকায় এসব বালু মহালের ইজারা দেওয়া হয়েছে। এক বছরের (বাংলা সন ১৪৩২) জন্য পৌর ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড এলাকার আলীগঞ্জ-এনায়েতপুর বালুঘাট ও সংযোগ বালুঘাট সমূহ ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় সরকারি মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়। হিসাবমতে, প্রতিটি বালু মহাল গড়ে ৫০/৫৫ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। অথচ ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকার জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে এবং এখনো নদীভাঙ্গন অব্যাহৃত থাকায় একদিকে কৃষিজমি হারিয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ছেন কৃষকরা, অপরদিকে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ-প্রকৃতি ও নদীর জলজ প্রাণী।