ঢাকা 3:34 am, Monday, 1 September 2025

১৮ বছর চেষ্টা করেও দম্পতির সন্তান হয়নি, এআই সম্ভব করল মাত্র ১ ঘণ্টায়

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ফার্টিলিটি সেন্টারের একটি প্রতীকী ছবি

এক দম্পতি ১৮ বছর ধরে সন্তান লাভের নানা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। বহুবার তাঁরা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) করেও ফল পাননি। শেষ পর্যন্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সাহায্যে সেই দম্পতি প্রথমবারের মতো সন্তান লাভ করতে যাচ্ছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সিএনএন জানিয়েছে, ওই দম্পতির মধ্যে স্বামীটি ‘অ্যাজুসপারমিয়া’ নামে এক বিরল অসুখে ভুগছেন। এটি এমন এক শারীরিক অবস্থা, যেখানে বীর্যে কোনো দৃশ্যমান শুক্রাণু থাকে না। একজন সুস্থ পুরুষের বীর্যে শত শত কোটি শুক্রাণু থাকে, কিন্তু অ্যাজুসপারমিয়াতে তা প্রায় শূন্য হয়ে যায়। ফলে সাধারণ আইভিএফও তাঁদের ক্ষেত্রে কাজ করছিল না।

অবশেষে সেই দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ফার্টিলিটি সেন্টারে যান। সেখানকার একটি নতুন এআইনির্ভর প্রযুক্তি ‘এসটিএআর’ (স্পার্ম ট্রেকিং অ্যান্ড রিকভারি) ব্যবহার করে চিকিৎসকেরা তাঁদের জন্য একটি অভূতপূর্ব সমাধান খুঁজে পান।

এই প্রযুক্তি অত্যন্ত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা ও ইমেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে বীর্যের নমুনা বিশ্লেষণ করে। এক ঘণ্টারও কম সময়ে ৮০ লাখের বেশি ছবি তুলে এআই বিশ্লেষণ করে এটি এবং এমন শুক্রাণু খুঁজে বের করে, যা চোখে দেখা যায় না বা মানুষের দ্বারা চেনা সম্ভব হয় না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যে নমুনা থেকে দুদিন চেষ্টা করেও কোনো শুক্রাণু খুঁজে পাওয়া যায়নি, এসটিএআর সিস্টেম সেখানে এক ঘণ্টায় ৪৪টি শুক্রাণু শনাক্ত করেছে।

পরে এই প্রযুক্তির সাহায্যে শনাক্ত তিনটি শুক্রাণু দিয়েই আইভিএফ করে স্ত্রীর ডিম্বাণু নিষিক্ত করা হয়। অবশেষে তিনি গর্ভবতী হন। আশা করা হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বরেই তিনি তাঁর সন্তানের জন্ম দেবেন।

 

গর্ভধারণ করা সেই নারী একটি ই-মেইল বার্তায় সিএনএনকে বলেছেন, ‘প্রথম দুই দিন আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি যে আমি সত্যিই গর্ভবতী। আজও প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ভাবি, এটা কি সত্যি?’

এআই এখন শুধু স্ত্রীদের ডিম্বাণুর গুণমান যাচাই বা ভ্রূণের স্বাস্থ্য বিশ্লেষণেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরুষ বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রেও আশার আলো দেখাচ্ছে।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ফার্টিলিটি সেন্টারের পরিচালক জেভ উইলিয়ামস জানিয়েছেন, যাঁদের শরীরে মাত্র দুই-তিনটি শুক্রাণু থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রেও এসটিএআর সিস্টেম সেই কয়েকটিকে শনাক্ত করতে পারে এবং সেগুলো ব্যবহার করে নিষিক্তকরণ সম্ভব হয়।

এদিকে পুরুষের বীর্য থেকে শুক্রাণু নিঃশেষ করে দেওয়া অ্যাজুসপারমিয়ার চিকিৎসা এখনো অনেক কঠিন। বেশির ভাগ সময়ই অস্ত্রোপচার করে শুক্রাণু সংগ্রহ করতে হয়, যা ব্যথাদায়ক ও ক্ষতিকর হতে পারে। হরমোন চিকিৎসা অনেক সময় কাজ করে না। এ ক্ষেত্রে এআইনির্ভর এসটিএআর পদ্ধতি একটি অপেক্ষাকৃত সহজ, নিরাপদ ও কার্যকর বিকল্প হতে পারে।

এই পদ্ধতির খরচ আনুমানিক ৩ হাজার ডলারের নিচে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা তিন লাখ টাকার কম-বেশি হতে পারে। তবে বর্তমানে এটি শুধু কলাম্বিয়া সেন্টারেই পাওয়া যাচ্ছে। এই পদ্ধতিকে আরও সম্প্রসারণ করতে চান গবেষকেরা। এই দলের অন্যতম সদস্য এমি আইভাজাদেহ এটিকে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, ‘এআই নতুন করে শুক্রাণু তৈরি করছে না, বরং যা লুকিয়ে রয়েছে, সেটিই খুঁজে দিচ্ছে। এটি মানুষের দক্ষতাকে প্রতিস্থাপন নয়, বরং শক্তিশালী করছে।’

তবে সবাই এতটা আশাবাদী নন। কিছু গবেষকের মতে, এখনো এর ফলাফল আরও গবেষণা ও যাচাইয়ের দাবি রাখে। তারপরও ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন সমস্যাগুলোর একটিকে সমাধান করতে এআই যেভাবে ভূমিকা রাখছে, তা নিঃসন্দেহে বিজ্ঞান ও মানবতার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

ভিপি নূর ও দলীয় নেতাকর্মীদের সুস্থতা কামনায় হাজীগঞ্জে দোয়া ও মিলাদ

১৮ বছর চেষ্টা করেও দম্পতির সন্তান হয়নি, এআই সম্ভব করল মাত্র ১ ঘণ্টায়

Update Time : 10:34:12 pm, Thursday, 3 July 2025

এক দম্পতি ১৮ বছর ধরে সন্তান লাভের নানা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। বহুবার তাঁরা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) করেও ফল পাননি। শেষ পর্যন্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সাহায্যে সেই দম্পতি প্রথমবারের মতো সন্তান লাভ করতে যাচ্ছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সিএনএন জানিয়েছে, ওই দম্পতির মধ্যে স্বামীটি ‘অ্যাজুসপারমিয়া’ নামে এক বিরল অসুখে ভুগছেন। এটি এমন এক শারীরিক অবস্থা, যেখানে বীর্যে কোনো দৃশ্যমান শুক্রাণু থাকে না। একজন সুস্থ পুরুষের বীর্যে শত শত কোটি শুক্রাণু থাকে, কিন্তু অ্যাজুসপারমিয়াতে তা প্রায় শূন্য হয়ে যায়। ফলে সাধারণ আইভিএফও তাঁদের ক্ষেত্রে কাজ করছিল না।

অবশেষে সেই দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ফার্টিলিটি সেন্টারে যান। সেখানকার একটি নতুন এআইনির্ভর প্রযুক্তি ‘এসটিএআর’ (স্পার্ম ট্রেকিং অ্যান্ড রিকভারি) ব্যবহার করে চিকিৎসকেরা তাঁদের জন্য একটি অভূতপূর্ব সমাধান খুঁজে পান।

এই প্রযুক্তি অত্যন্ত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা ও ইমেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে বীর্যের নমুনা বিশ্লেষণ করে। এক ঘণ্টারও কম সময়ে ৮০ লাখের বেশি ছবি তুলে এআই বিশ্লেষণ করে এটি এবং এমন শুক্রাণু খুঁজে বের করে, যা চোখে দেখা যায় না বা মানুষের দ্বারা চেনা সম্ভব হয় না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যে নমুনা থেকে দুদিন চেষ্টা করেও কোনো শুক্রাণু খুঁজে পাওয়া যায়নি, এসটিএআর সিস্টেম সেখানে এক ঘণ্টায় ৪৪টি শুক্রাণু শনাক্ত করেছে।

পরে এই প্রযুক্তির সাহায্যে শনাক্ত তিনটি শুক্রাণু দিয়েই আইভিএফ করে স্ত্রীর ডিম্বাণু নিষিক্ত করা হয়। অবশেষে তিনি গর্ভবতী হন। আশা করা হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বরেই তিনি তাঁর সন্তানের জন্ম দেবেন।

 

গর্ভধারণ করা সেই নারী একটি ই-মেইল বার্তায় সিএনএনকে বলেছেন, ‘প্রথম দুই দিন আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি যে আমি সত্যিই গর্ভবতী। আজও প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ভাবি, এটা কি সত্যি?’

এআই এখন শুধু স্ত্রীদের ডিম্বাণুর গুণমান যাচাই বা ভ্রূণের স্বাস্থ্য বিশ্লেষণেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরুষ বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রেও আশার আলো দেখাচ্ছে।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ফার্টিলিটি সেন্টারের পরিচালক জেভ উইলিয়ামস জানিয়েছেন, যাঁদের শরীরে মাত্র দুই-তিনটি শুক্রাণু থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রেও এসটিএআর সিস্টেম সেই কয়েকটিকে শনাক্ত করতে পারে এবং সেগুলো ব্যবহার করে নিষিক্তকরণ সম্ভব হয়।

এদিকে পুরুষের বীর্য থেকে শুক্রাণু নিঃশেষ করে দেওয়া অ্যাজুসপারমিয়ার চিকিৎসা এখনো অনেক কঠিন। বেশির ভাগ সময়ই অস্ত্রোপচার করে শুক্রাণু সংগ্রহ করতে হয়, যা ব্যথাদায়ক ও ক্ষতিকর হতে পারে। হরমোন চিকিৎসা অনেক সময় কাজ করে না। এ ক্ষেত্রে এআইনির্ভর এসটিএআর পদ্ধতি একটি অপেক্ষাকৃত সহজ, নিরাপদ ও কার্যকর বিকল্প হতে পারে।

এই পদ্ধতির খরচ আনুমানিক ৩ হাজার ডলারের নিচে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা তিন লাখ টাকার কম-বেশি হতে পারে। তবে বর্তমানে এটি শুধু কলাম্বিয়া সেন্টারেই পাওয়া যাচ্ছে। এই পদ্ধতিকে আরও সম্প্রসারণ করতে চান গবেষকেরা। এই দলের অন্যতম সদস্য এমি আইভাজাদেহ এটিকে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, ‘এআই নতুন করে শুক্রাণু তৈরি করছে না, বরং যা লুকিয়ে রয়েছে, সেটিই খুঁজে দিচ্ছে। এটি মানুষের দক্ষতাকে প্রতিস্থাপন নয়, বরং শক্তিশালী করছে।’

তবে সবাই এতটা আশাবাদী নন। কিছু গবেষকের মতে, এখনো এর ফলাফল আরও গবেষণা ও যাচাইয়ের দাবি রাখে। তারপরও ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন সমস্যাগুলোর একটিকে সমাধান করতে এআই যেভাবে ভূমিকা রাখছে, তা নিঃসন্দেহে বিজ্ঞান ও মানবতার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।