ঢাকা 3:49 pm, Thursday, 4 September 2025

মতলবে বিয়ের এক বছর পর স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন

পাঁচ সন্তানের জননী রুপালী বেগম। এক বছর আগে পটুয়াখালীর জামাল গাজী নামের এক ছেলের সাথে টিকটকে পরিচয় হয়। তারপর তারা দুজনে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের এক বছর না যেতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে রুপালী বেগম। পরিবারের দাবী পরকীয়া প্রেমে বাঁধা ও স্বর্ণ গহনা না দেওয়ার কারনে রুপালীকে হত্যা করেছে পাষণ্ড স্বামী জামাল গাজী।

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাধি ইউনিয়নের ঘোরাধারী গ্রামে স্বামী জামাল গাজীর(৪০) হাতে খুন হয়েছে ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের জননী রুপালী বেগম(৩৭)। খুন হওয়া নারীর মৃত দেহ ১১ জুলাই (শুক্রবার) রাতে তাদের নিজ বাড়ীর সেফটি টাংকি থেকে উদ্ধার করছে মতলব দক্ষিণ থানা পুলিশ। উপজেলার উপাদী দক্ষিণ ইউনিয়নের ঘোড়াধারী গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ীতে এ ঘটনাটি ঘটেছে। নিহতের ছেলে টিপু বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছে। রুপালি বেগমের হত্যার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঘোড়াধারী গ্রামের কালু পাটোয়ারীর মেয়ে রুপালী বেগমের সাথে একবছর পূর্বে পটুয়াখালীর মোস্তফা গাজীর ছেলে জামাল গাজীর সঙ্গে ফেইসবুক টিকটকের মাধ্যমে পরিচয় হয়।প্রেমের সম্পর্কের পরে তাদের বিয়ে হয়। রুপালী বেগমের আগের সংসারে ২ ছেলে ৩ মেয়ে রয়েছে। মোঃ জামাল গাজীর সাথে বিয়ের পর থেকেই পরিবারে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। যা এ হত্যাকান্ড ঘটার পূর্ব পর্যন্ত চলমান ছিল। তাদের বাড়ীটি আলাদা অর্থাৎ একক হওয়ায় তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হলেও আশপাশের মানুষ জানতো না। পারিবারিক বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার( ১০ জুলাই) রাতে জামাল গাজী ও স্ত্রী রুপালী বেগমের মধ্যে ঝগড়া ও মারামারি ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে রুপালী বেগমকে হত্যা করে লাশ নিজ বাড়ীর সেফটি ট্যাংকির ভিতর লুকিয়ে রেখে স্বামী জামাল গাজী বাড়ী থেকে পালিয়ে যায়।

নিহত রুপালী বেগমের ছেলে টিপু বলেন, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ২ টা বাজে। অনেক শব্দ শুনে আমার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার মাকে বাবা জামাল গাজী মারতেছে। আমি থামতে বলি। তারপর কিছুক্ষন পর আমি ঘুমিয়ে পরি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মা নাই। মাকে অনেক খোঁজাখুজি করি। কিন্তু পাই না। আমার নানিও কান্না করতে করতে মাকে খুঁজতে থাকে। কোথাও পাই না। শুক্রবার রাতে টয়লেটের টাংকির ঢাকনা একটু ফাঁকা দেখে নানি সম্পূর্ণ ঢাকনা সরায়। নানি ঢাকনা সরাইয়া দেখে আমার মা ময়লার টাংকির মধ্যে মৃত দেহ পরে আছে। ডাক চিৎকার দিলে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। তারপর মতলব দক্ষিণ থানায় খবর দিলে পুলিশ আসে। আমার মাকে ঐ বাপ নামের কলংক জামাল গাজী হত্যা করে পালিয়েছে। মা ছাড়া আমরা ভাই বোনরা এতিম হয়ে গেলাম। এখন আমরা কই থাকমু,কার কাছে থাকমু? আমার মায়ের হত্যার বিচার চাই।

নিহতের স্বজনরা বলেন, ঘুম থেকে উঠে শুনি বোন ও বোনজামাইকে পাওয়া যাচ্ছে না।আমরা প্রথমে মনে করছি বোনজামাই আর বোন কোথাও গেছে। মোবাইলে কল দিয়েও পাই না। সকাল শেষ হয়ে দুপুর হয়ে গেলেও কোনো খোঁজ খবর পাই না। তারপরই আমরা বোনকে খোঁজতে শুরু করি।আমার বোনের আগের স্বামী মারা গেছে। তারপর এই জামালের সাথে টিকটকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরে ওদের বিয়ে হয়। আজ বিয়ের প্রায় এক বছর হয়েছে। প্রায়ই জামাল আমার বোনকে মারধর করতো। গত মাসে আমার বোনের কিছু স্বর্ন গয়না আছে এগুলো নিয়ে ওর স্বামী অনেক ঝামেলা করে। স্বর্ন গয়নাগুলো স্বামীকে দিয়ে দিতে বলে। কিন্তু বোন তা দেয়নি। ঐ জামাল আমার বোনকে হত্যা করে স্বর্ণ গহনা নিয়ে গেছে। এছাড়াও জামালের অন্য মহিলার সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো। সেই অবৈধ সম্পর্ক বোন বাঁধা দিছে। স্বর্ণ গহনার লোভ আর অবৈধ সম্পর্ক বাঁধা দেওয়ায় আজ আমার বোনের মরন হলো। আমার বোনকে বোনজামাই জামাল খুন করে পালিয়ে গেছে। আইনের কাছে আমার বোন হত্যার বিচার চাই।

মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সালেহ আহাম্মদ বলেন, সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে তাদের বাড়ির সেফটি ট্যাংকি থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করা হয় । লাশের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এটি হত্যাকান্ড।

এ ঘটনায় নিহত রূপালী বেগমের বড় ছেলে টিপু পাটোয়ারী বাদী হয়ে জামাল গাজীকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামী গ্রেফতার করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের বিক্ষোভ

মতলবে বিয়ের এক বছর পর স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন

Update Time : 04:25:13 pm, Sunday, 13 July 2025

পাঁচ সন্তানের জননী রুপালী বেগম। এক বছর আগে পটুয়াখালীর জামাল গাজী নামের এক ছেলের সাথে টিকটকে পরিচয় হয়। তারপর তারা দুজনে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের এক বছর না যেতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে রুপালী বেগম। পরিবারের দাবী পরকীয়া প্রেমে বাঁধা ও স্বর্ণ গহনা না দেওয়ার কারনে রুপালীকে হত্যা করেছে পাষণ্ড স্বামী জামাল গাজী।

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাধি ইউনিয়নের ঘোরাধারী গ্রামে স্বামী জামাল গাজীর(৪০) হাতে খুন হয়েছে ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের জননী রুপালী বেগম(৩৭)। খুন হওয়া নারীর মৃত দেহ ১১ জুলাই (শুক্রবার) রাতে তাদের নিজ বাড়ীর সেফটি টাংকি থেকে উদ্ধার করছে মতলব দক্ষিণ থানা পুলিশ। উপজেলার উপাদী দক্ষিণ ইউনিয়নের ঘোড়াধারী গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ীতে এ ঘটনাটি ঘটেছে। নিহতের ছেলে টিপু বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছে। রুপালি বেগমের হত্যার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঘোড়াধারী গ্রামের কালু পাটোয়ারীর মেয়ে রুপালী বেগমের সাথে একবছর পূর্বে পটুয়াখালীর মোস্তফা গাজীর ছেলে জামাল গাজীর সঙ্গে ফেইসবুক টিকটকের মাধ্যমে পরিচয় হয়।প্রেমের সম্পর্কের পরে তাদের বিয়ে হয়। রুপালী বেগমের আগের সংসারে ২ ছেলে ৩ মেয়ে রয়েছে। মোঃ জামাল গাজীর সাথে বিয়ের পর থেকেই পরিবারে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। যা এ হত্যাকান্ড ঘটার পূর্ব পর্যন্ত চলমান ছিল। তাদের বাড়ীটি আলাদা অর্থাৎ একক হওয়ায় তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হলেও আশপাশের মানুষ জানতো না। পারিবারিক বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার( ১০ জুলাই) রাতে জামাল গাজী ও স্ত্রী রুপালী বেগমের মধ্যে ঝগড়া ও মারামারি ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে রুপালী বেগমকে হত্যা করে লাশ নিজ বাড়ীর সেফটি ট্যাংকির ভিতর লুকিয়ে রেখে স্বামী জামাল গাজী বাড়ী থেকে পালিয়ে যায়।

নিহত রুপালী বেগমের ছেলে টিপু বলেন, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ২ টা বাজে। অনেক শব্দ শুনে আমার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার মাকে বাবা জামাল গাজী মারতেছে। আমি থামতে বলি। তারপর কিছুক্ষন পর আমি ঘুমিয়ে পরি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মা নাই। মাকে অনেক খোঁজাখুজি করি। কিন্তু পাই না। আমার নানিও কান্না করতে করতে মাকে খুঁজতে থাকে। কোথাও পাই না। শুক্রবার রাতে টয়লেটের টাংকির ঢাকনা একটু ফাঁকা দেখে নানি সম্পূর্ণ ঢাকনা সরায়। নানি ঢাকনা সরাইয়া দেখে আমার মা ময়লার টাংকির মধ্যে মৃত দেহ পরে আছে। ডাক চিৎকার দিলে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। তারপর মতলব দক্ষিণ থানায় খবর দিলে পুলিশ আসে। আমার মাকে ঐ বাপ নামের কলংক জামাল গাজী হত্যা করে পালিয়েছে। মা ছাড়া আমরা ভাই বোনরা এতিম হয়ে গেলাম। এখন আমরা কই থাকমু,কার কাছে থাকমু? আমার মায়ের হত্যার বিচার চাই।

নিহতের স্বজনরা বলেন, ঘুম থেকে উঠে শুনি বোন ও বোনজামাইকে পাওয়া যাচ্ছে না।আমরা প্রথমে মনে করছি বোনজামাই আর বোন কোথাও গেছে। মোবাইলে কল দিয়েও পাই না। সকাল শেষ হয়ে দুপুর হয়ে গেলেও কোনো খোঁজ খবর পাই না। তারপরই আমরা বোনকে খোঁজতে শুরু করি।আমার বোনের আগের স্বামী মারা গেছে। তারপর এই জামালের সাথে টিকটকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরে ওদের বিয়ে হয়। আজ বিয়ের প্রায় এক বছর হয়েছে। প্রায়ই জামাল আমার বোনকে মারধর করতো। গত মাসে আমার বোনের কিছু স্বর্ন গয়না আছে এগুলো নিয়ে ওর স্বামী অনেক ঝামেলা করে। স্বর্ন গয়নাগুলো স্বামীকে দিয়ে দিতে বলে। কিন্তু বোন তা দেয়নি। ঐ জামাল আমার বোনকে হত্যা করে স্বর্ণ গহনা নিয়ে গেছে। এছাড়াও জামালের অন্য মহিলার সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো। সেই অবৈধ সম্পর্ক বোন বাঁধা দিছে। স্বর্ণ গহনার লোভ আর অবৈধ সম্পর্ক বাঁধা দেওয়ায় আজ আমার বোনের মরন হলো। আমার বোনকে বোনজামাই জামাল খুন করে পালিয়ে গেছে। আইনের কাছে আমার বোন হত্যার বিচার চাই।

মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সালেহ আহাম্মদ বলেন, সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে তাদের বাড়ির সেফটি ট্যাংকি থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করা হয় । লাশের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এটি হত্যাকান্ড।

এ ঘটনায় নিহত রূপালী বেগমের বড় ছেলে টিপু পাটোয়ারী বাদী হয়ে জামাল গাজীকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামী গ্রেফতার করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে।