স্ত্রীর কিডনিতে প্রাণে বেঁচে যাওয়া স্বামী সুস্থ হয়ে জড়ালেন পরকীয়ায়—এমন নিষ্ঠুর স্বামীর আচরণে সমাজমাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়। স্ত্রীর একপাক্ষিক বক্তব্য শুনে কেউ কেউ ফেলেছেন আবেগের অশ্রু। হ্যাশট্যাগ দিয়ে কেউ কেউ মজাও করেছেন, ‘পুরুষ তাহলে কীসে আটকায়।’ এবার এমন নিষ্ঠুর পাষণ্ড কৃতজ্ঞতাবোধহীন স্বামীর খোঁজে গণমাধ্যমকর্মীরা। দেখাও মিলেছে তার। তবে মোহাম্মদ তারেক নামে সেই স্বামী তুললেন ভিন্ন সুর।
সাভারের উম্মে সাহেদীনা টুনির বিরুদ্ধেই পরকীয়ার অভিযোগ স্বামী মোহাম্মদ তারেকের। কিডনি দানের বিষয়টিও যে শুধু স্বামীর প্রতি ভালোবাসা থেকে, বিষয়টি তা নয়। স্বামীর বাড়ির দোতলা অংশ লিখে দেওয়ার শর্তেই কিডনি প্রদানে সম্মত হন টুনি—স্ত্রীর প্রতি এমনই অভিযোগ মোহাম্মদ তারেকের।
একটি গণমাধ্যমে ভিডিও সাক্ষাৎকারে তারেক বলেন, টুনি যখন কিডনি দেওয়ার পরিবর্তে বাড়ির দোতলা লিখে দিতে বলল, তখন আমি সেটা রেজিস্ট্রি করে দিলাম। দোতলা পুরোটাই লিখে দিলাম, যেটার দাম এখন ৬০ লাখ টাকার মতো। তখন সে কিডনি দিলো, ওর মা-বোন তখন অনেক নিষেধ করছিল, তারপরেও সে কিডনি দিলো। কারণ, তখন আমাদের সম্পর্ক অনেক ভালো।
অপারেশন শেষে কয়েক মাসের মধ্যেই টুনির মন-মানসিকতা পরিবর্তন হতে লাগল। মোবাইলের দিকে এত আকর্ষণ যে, টিকটকের ভেতর সে যখন ঢুকল তারপর থেকে একের পর একজনের সঙ্গে সে প্রেম করে। একজন থাইল্যান্ড থেকে চলে আসছে, তার বৌ ছিল, ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।
তারেকের অভিযোগ—একদিন রাত ১০টার দিকে আমার স্ত্রীকে খুঁজে পাচ্ছি না। না পেয়ে স্ত্রীর পারলার, বাসার ছাদসহ অন্যান্য জায়গা খুঁজে তাকে কোথাও পাচ্ছি না। পরে তিন তলার রাজীব নামে এক ভাড়াটিয়াকে আমার সন্দেহ হলো—ওর সাথে তো টুনি কথাবার্তা বলে। ওদের ফ্ল্যাটের দরজাটা ভেড়ানো, একবারে ছিটকিনি দেওয়া ছিল না। দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখি, আমার স্ত্রী ওই লোকের (রাজীব) সাথে শুয়ে আছে। তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না। তাৎক্ষণিক তিন-চারটা চড় দিই এবং রাজীব দৌড়ে পালিয়ে যায়। এটা দুই মাস আগের কথা। আমার স্ত্রীর পরিবার এ বিষয়গুলো সব জানে, তারা কেউ কিছু বলে না।
আপনার নামেও তো আপনার স্ত্রী পরকীয়ার অভিযোগ এনেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ তারেক বলেন, সে যদি আমার পরকীয়া কোনো প্রমাণ দিতে পারে আমি ফাঁসি নিতে রাজি আছি। আর তার (স্ত্রী টুনি) মোবাইলে এক মাসের হিস্ট্রি ঘেঁটেই আপনি বেশ কিছু পরকীয়ার আলামত পাবেন। অনেকেই (বিশেষজ্ঞ) তো মোবাইল ঘাটে। এটি আমি শতভাগ চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি।
অনলাইন জুয়া খেলার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা উল্লেখ করে তারেক বলেন, জুয়া কেমনে খেলতে হয় আমি জানি না। অসুস্থ থাকায় কোনো কাজবাজ করতে পারছিলাম না। কিছু একটা করব বলে ভাবছিলাম। আমার ১৮ বছরের ছেলেকে ডেকে বললাম, বাবা, আমাকে অনলাইনে এমন কিছু শিখিয়ে দাও, যেখান থেকে আমি আর্ন করতে পারি। ছেলে আমাকে একটি গেমস দেখাল। যেটি খেলে কয়েন জমা করা যায়, সেই কয়েন নাকি ডলারে রূপান্তর করা যায়। সেটি কোনো জুয়া না।
তারেক বলেন, ‘আমাকে জেলে যেতে হলো। যৌতুকের মামলায় টানা ৪০ দিন জেলে ছিলাম। এরপর নারী নির্যাতন মামলা। ওদের প্ল্যান ছিল আমাকে জেলে মেরে দেবে। আমি কিডনির ওষুধ না খেলে কিন্তু মারা যাব। আমাকে যখন বাসা থেকে পুলিশ নিয়ে গেছে এটা কিন্তু কেউ জানত না। আমার মাকে তারা অনেক আগেই তাড়াইছে। ফলে আমার মা জানতে পারল না। আমার ছোটভাইটা আমাকে জামিন করাল।’
নিজের পরকীয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘টুনিরই অভিযোগ আমি শারীরিকভাবে অক্ষম, তাহলে আমি কিভাবে আরেকজন মেয়ের সঙ্গে থাকব? এসব তার বানানো।’
এ ছাড়া আপনার জানেন, কিডনি রোগী স্ত্রীর সাথে বেশী সময় কাজ করতে পারেনা। সে বলে আমি তাকে তৃপ্তি দিতে পারিনা, তাই সে পর পরুষের সাথে তৃপ্তি নিচ্ছে। আপনি বলুন, স্বামী জীবীত থাকলে স্ত্রী কি এমন কথা বলতে পারে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে কলেজপড়ুয়া তরুণী উম্মে সাহেদীনা টুনির সঙ্গে মালয়েশিয়া প্রবাসী যুবক তারেকের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পরই তারেক ও টুনির সংসার আলো করে আসে একটি পুত্রসন্তান। নাম রাখা হয় আজমাইন দিব্য। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। তবে ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারেক।