মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে হাজীগঞ্জে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জি. মমিনুল হক।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ফলো করলে আপনি সেইফ (নিরাপদ) থাকবেন। উনি আমাদের ঢাকা মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বলেছেন, যারা লাঠি নিয়ে আসবে তাদের হাত কেটে ফেলতে হবে। যারা আগুন নিয়ে আসবে, তাদেরকে পোড়া দিয়ে ফেলতে হবে। উনি দেশের সর্বোচ্চ প্রধান, ওনার কথাই শেষ কথা।
অথচ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের প্রধান, নীতি আদর্শের উপর সরকার পরিচালনা করেন। কিন্তু এখন নীতি আদর্শ বলতে কিছু নাই। যেন-তেন মানুষকে হেরসেমেন্ট করতেছে। আপনারা (দলীয় নেতাকর্মী) প্রাইম মিনিস্টারের (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্য শুনেন। ওনার বক্তব্য শুনলে, আপনারা সেইপ (নিরাপদ) থাকবেন।
তিনি বলেন, আমরা বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কর্মী, ১৫ বছর সংগ্রামে আছি। ওনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের নেত্রীর প্রতি ও দলের প্রতি নিস্ব:প্রেশন করে আসছেন। দেশের অর্থনীতি একবারে শেষ প্রান্তে নিয়ে আসছে। সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ করার ভাষা থাকেনা। ভাষাটা আমাদের, আমরা যারা রাজনৈতিক কর্মী, আমরাই মাঠে থাকি।
হাজীগঞ্জ থানা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঞ্জি. মমিনুল হক বলেন, হাজীগঞ্জ থানার ওসি আছেন। তিনি অহরহ প্রতি ইউনিয়নে একজন সাব-ইন্সপেক্টর সহকারে ৩/৪ জন সিপাহি পাঠায়। এরা রাত্রে একটা/দেড়টার দিকে যায়। বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে অকর্থ ভাষায় গালাগালি করে এবং অর্থনৈতিক বিষয়টা তাদের মূল টার্গেটে থাকে।
তিনি বলেন, এভাবে রাজনৈতিক নেতাদের ঘুমন্ত অবস্থায় নির্লিপ্তভাবে আক্রমণ করা, তার বাড়িতে হানা দেওয়া। এতে যদি কোন রকম এক্সিডেন্ট ঘটে, এটা সরাসরি বিএনপির উপর চাপিয়ে দিতে চায়। আপনারা (নেতৃবৃন্দ) যদি একমত হন, আমরা খুব সহসায় এসপি (পুলিশ সুপার) সাহেবের বরাবর একটা দরখাস্ত দিতে চাই।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ রাত্রিকালে আমাদের নেতা-কর্মীদের উপর নির্দয় আচরণ করে। এগুলাই আমরা এসপি সাহেবকে লিখিত এবং টাইম নির্ধারণ করে দিতে চাই। তিনি যদি ৩০ দিনের ভিতরে এর কোন বিহিত/ব্যবস্থা না করেন, তাহলে আমরা স্বেচ্ছায় কারাবরণ মতো কর্মসূচী হাতে নিবো। যেখানে ৫/১০ হাজার লোক আমরা স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবো। কারণ, রাত্রে অর্ঘুমে থেকে পুলিশ পাহারা দেওয়ার চেয়ে জেলে থাকা অনেক ভালো।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কুমিল্লায় বিভাগীয় প্রোগ্রামে আমাদের উপদেষ্টা মোশারফ হোসেন সাহেব বলেছেন, এই প্রোগ্রামকে কেন্দ্র করে তোমার নির্বাচনী (চাঁদপুর-৫) এলাকায় বাহিরে সারা বাংলাদেশের কোথাও কোন লোক এরেস্ট হয়নি। তাহলে এখানকার (হাজীগঞ্জ) ওসি অযোক্তিক মাত্রায় বাড়াবাড়ি করে। একজন ওসির লগে (সাথে) যদি বুঝে খাওয়ার যোগ্যতা না থাকে, তাহলে আপনাদের রাজনীতি করে লাভটা কি..?
সুতরাং এদের বিষয়ে যদি আপনারা একমত না হন, তাহলে আপনারা ভালো থাকতে পারবেন না। সেজন্য উপজেলা ও পৌর বিএনপি একটি চিঠি এসপি সাহেবকে দিয়ে আসবেন, সাংবাদিক সম্মেলন করবেন এবং ৩০ দিন সময় দিয়ে আসবেন। এর মধ্যে কোন বিহিত/ব্যবস্থা না নিলে আমরা স্বেচ্ছায় কারাবরণের দিকে যাবো।
এ সময় সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে ইঞ্জি. মমিনুল হক বলেন, আপনারা এগুলো লেখেন, আমরাতো চোর না, রাজনৈতিক কর্মী। আমরাও ক্ষমতায় ছিলাম। আমরা-তো আওয়ামী লীগের সাথে এমন আচরণ করিনি। এটা আওয়ামী লীগের রাষ্ট্র না পুলিশের রাষ্ট্র হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে কিভাবে রাজনীতি করবো?
উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ¦ ইমাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শণ কর হয়।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম.এ রহিম পাটওয়ারীর উপস্থাপনায় এ সময় উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল খায়ের মজুমদার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম ভুট্টু, বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেন স্বপন, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক হুমায়ুন কবির সুমন, উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক এস.এম ফয়সাল হোসেন, উপজেলা ও পৌর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মৎস্যজীবি দলসহ অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।