ঢাকা 10:40 pm, Sunday, 22 June 2025

চাঁদপুরে হাঁড়কাপানো শীতে জুবুথুবু মানুষ, বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ

  • Reporter Name
  • Update Time : 02:50:58 pm, Sunday, 8 January 2023
  • 3 Time View

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্:

চাঁদপুরে কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও বৃষ্টির মতো নেমে আসা কুয়াশায় হাড়কাঁপানো শীত জেঁকে বসেছে। গত ৭২ ঘন্টার মধ্যে দু-একবার সূর্যের দেখা মিললেও, ছিল না তেজ। দিনব্যাপী কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে চারদিক। তবে দিনের বেলা একটু হালকা হলেও বাকি সময় মাঠ-ঘাট ঢেকে থাকছে ঘন কুয়াশায়। প্রয়োজনের বাহিরে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এতে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল ও যানবাহনের সংখ্যা কমে গেছে। এমন চিত্র সব উপজেলায় দেখা গেছে।

শীতের তীব্রতায় স্বাভাবিক কর্মমতা হারিয়েছে শ্রমজীবি ও ছিন্নমূল মানুষেরা। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করছে সহায়-সম্বলহীন লোকজন। এমন পরিস্থিতিতে অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। সেই সাথে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগ। বিশেষ করে যারা এ্যাজমা ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভুগছেন, তাদের নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছেন। কাঁথা-কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘরেই শুয়ে-বসে দিন পার করছেন তারা।

বিভিন্ন স্থান ঘুরে এবং লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশায় জবুথুবু হয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলের মানুষ। রাস্তাঘাটে লোকজন ও যানবাহনের চলাচল কমে গেছে। দিনের বেলায় সূর্য্যের আলো ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছায় না এবং দিন ও রাতে সমান তালে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম কোণের হিমেল হাওয়া বইতে থাকে। আর বিকেল গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা হয়, তখন ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে চারদিক।

রাত হলেই বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়তে থাকে। এই কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে সকাল ১০টা পর্যন্ত। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন নিম্নবিত্ত শ্রেণীর শ্রমজীবী মানুষেরা। কর্মের তাগিয়ে যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন, তারা বেশ বেকায়দায় পড়ছেন। সকলেরই গায়েই ছিল গরম কাপড়। তারপরও কনকনে শীত এবং হিমেল হাওয়ায় যেন শীত নিবারণ হচ্ছে না। তাই দিনের বেলা ও সন্ধ্যায় খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন অনেকে।

এই শীতে সবচে বেশি কাবু হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ। কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও বৃষ্টির মতো নেমে আসা কুয়াশায় তাদের যেন দূর্ভোগের শেষ নেই। চরে গাছপালা না থাকায় এবং নদী ভাঙনের কারণে ভাঙা ঘরবাড়িতে হু হু করে হিম বাতাস ঢোকে। কোনো রকমে কাঁথা-কাপড় মুড়িয়ে শীত পার করতে হচ্ছে। মাগরিবের আযানের পর কাউকে হাট-বাজারে বা পাড়া-মহল্লার দোকানে দেখা যায়না।

শীতে হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরম কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের ভীড়। বিশেষ করে বাজারের হকার্স মার্কেটগুলো এবং ফুটপাত ও ভ্যান গাড়িতে বিক্রি করা গরম কাপড়ের দোকানে প্রচুর ক্রেতার সমাগম। সেখানে ৫০ টাকা থেকে ২৫০/৩০০/৪০০ টাকার মধ্যে ভারী গরম কাপড় পাওয়া যায়। যার ফলে নিন্ম আয় ও শ্রমজীবি মানুষেরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী শীতের পোশাক কিনতে ওইসব দোকানগুলোতে ছুটছেন।
এদিকে শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন বাড়ছে শীত ও ঠাণ্ডাজনিত রোগ।

ইতিমধ্যে চাঁদপুর সদর হাসপাতালসহ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। হাসপাতালগুলোর আউটডোর এবং ইনডোর ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যায় বেশি। একজন অভিভাবক বলেন, প্রচন্ড শীত ও বাতাসের কারণে বাচ্চাটার শ্বাসকষ্ট ও জ¦র দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বাংলাদেশে শীতকালীন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি দেখা দেয়। এর মধ্যে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাটাইসিস, ব্রংকিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, বাত, আর্থাইটিস, চামড়ার শুষ্কতা অন্যতম। আবার তীব্র শীতে বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। তাই এসব রোগ থেকে সুরায় শীত এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসক পরামর্শ নিতে হবে।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মাওলা বলেন, তীব্র শীতে বয়স্কদের হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। কারণ, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শরীরের তাপ উৎপাদন মতা কমতে থাকে। এতে বয়স্ক রোগীর শরীর ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে আসে এবং হাত-পা কুঁকড়ে যায়। এমনকি শরীর অবশ হয়ে আসতে থাকে। তাই শীতকালীন রোগসহ হাইপোথার্মিয়া রোগ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই শীত এড়িয়ে চলতে হবে।

এ সময় তিনি বলেন, শরীর গরম রাখতে গরম পোশাক পরিধান করতে হবে, গরম পানি খেতে হবে। এমনকি গোসলের সময় কুসুম বা হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু এসব রোগে বয়স্ক ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাই তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। বয়স্করা যে রুমে থাকেন, প্রয়োজনে সেই রুমে হিটার ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

করোনায় সারাদেশে ৫ জনের মৃত্যু

চাঁদপুরে হাঁড়কাপানো শীতে জুবুথুবু মানুষ, বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ

Update Time : 02:50:58 pm, Sunday, 8 January 2023

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্:

চাঁদপুরে কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও বৃষ্টির মতো নেমে আসা কুয়াশায় হাড়কাঁপানো শীত জেঁকে বসেছে। গত ৭২ ঘন্টার মধ্যে দু-একবার সূর্যের দেখা মিললেও, ছিল না তেজ। দিনব্যাপী কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে চারদিক। তবে দিনের বেলা একটু হালকা হলেও বাকি সময় মাঠ-ঘাট ঢেকে থাকছে ঘন কুয়াশায়। প্রয়োজনের বাহিরে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এতে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল ও যানবাহনের সংখ্যা কমে গেছে। এমন চিত্র সব উপজেলায় দেখা গেছে।

শীতের তীব্রতায় স্বাভাবিক কর্মমতা হারিয়েছে শ্রমজীবি ও ছিন্নমূল মানুষেরা। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করছে সহায়-সম্বলহীন লোকজন। এমন পরিস্থিতিতে অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। সেই সাথে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগ। বিশেষ করে যারা এ্যাজমা ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভুগছেন, তাদের নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছেন। কাঁথা-কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘরেই শুয়ে-বসে দিন পার করছেন তারা।

বিভিন্ন স্থান ঘুরে এবং লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশায় জবুথুবু হয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলের মানুষ। রাস্তাঘাটে লোকজন ও যানবাহনের চলাচল কমে গেছে। দিনের বেলায় সূর্য্যের আলো ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছায় না এবং দিন ও রাতে সমান তালে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম কোণের হিমেল হাওয়া বইতে থাকে। আর বিকেল গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা হয়, তখন ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে চারদিক।

রাত হলেই বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়তে থাকে। এই কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে সকাল ১০টা পর্যন্ত। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন নিম্নবিত্ত শ্রেণীর শ্রমজীবী মানুষেরা। কর্মের তাগিয়ে যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন, তারা বেশ বেকায়দায় পড়ছেন। সকলেরই গায়েই ছিল গরম কাপড়। তারপরও কনকনে শীত এবং হিমেল হাওয়ায় যেন শীত নিবারণ হচ্ছে না। তাই দিনের বেলা ও সন্ধ্যায় খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন অনেকে।

এই শীতে সবচে বেশি কাবু হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ। কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও বৃষ্টির মতো নেমে আসা কুয়াশায় তাদের যেন দূর্ভোগের শেষ নেই। চরে গাছপালা না থাকায় এবং নদী ভাঙনের কারণে ভাঙা ঘরবাড়িতে হু হু করে হিম বাতাস ঢোকে। কোনো রকমে কাঁথা-কাপড় মুড়িয়ে শীত পার করতে হচ্ছে। মাগরিবের আযানের পর কাউকে হাট-বাজারে বা পাড়া-মহল্লার দোকানে দেখা যায়না।

শীতে হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরম কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের ভীড়। বিশেষ করে বাজারের হকার্স মার্কেটগুলো এবং ফুটপাত ও ভ্যান গাড়িতে বিক্রি করা গরম কাপড়ের দোকানে প্রচুর ক্রেতার সমাগম। সেখানে ৫০ টাকা থেকে ২৫০/৩০০/৪০০ টাকার মধ্যে ভারী গরম কাপড় পাওয়া যায়। যার ফলে নিন্ম আয় ও শ্রমজীবি মানুষেরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী শীতের পোশাক কিনতে ওইসব দোকানগুলোতে ছুটছেন।
এদিকে শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন বাড়ছে শীত ও ঠাণ্ডাজনিত রোগ।

ইতিমধ্যে চাঁদপুর সদর হাসপাতালসহ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। হাসপাতালগুলোর আউটডোর এবং ইনডোর ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যায় বেশি। একজন অভিভাবক বলেন, প্রচন্ড শীত ও বাতাসের কারণে বাচ্চাটার শ্বাসকষ্ট ও জ¦র দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বাংলাদেশে শীতকালীন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি দেখা দেয়। এর মধ্যে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাটাইসিস, ব্রংকিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, বাত, আর্থাইটিস, চামড়ার শুষ্কতা অন্যতম। আবার তীব্র শীতে বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। তাই এসব রোগ থেকে সুরায় শীত এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসক পরামর্শ নিতে হবে।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মাওলা বলেন, তীব্র শীতে বয়স্কদের হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। কারণ, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শরীরের তাপ উৎপাদন মতা কমতে থাকে। এতে বয়স্ক রোগীর শরীর ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে আসে এবং হাত-পা কুঁকড়ে যায়। এমনকি শরীর অবশ হয়ে আসতে থাকে। তাই শীতকালীন রোগসহ হাইপোথার্মিয়া রোগ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই শীত এড়িয়ে চলতে হবে।

এ সময় তিনি বলেন, শরীর গরম রাখতে গরম পোশাক পরিধান করতে হবে, গরম পানি খেতে হবে। এমনকি গোসলের সময় কুসুম বা হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু এসব রোগে বয়স্ক ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাই তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। বয়স্করা যে রুমে থাকেন, প্রয়োজনে সেই রুমে হিটার ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।