কয়েক যুগ পূর্বের সম্পত্তিগত বিরোধের জের ধরে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা মেহের উত্তর ইউনিয়নে বাড়ীর সম্পর্কের চাচা মো. সেলিম মজুমদারকে (৫০) মারধরের অভিযোগ ওই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ভাতিজা মো. জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি সেলিম মজুমদারের স্ত্রী ফরিদা ইয়াছমীন শাহরাস্তি থানায় চেয়ারমন্যাসহ ৪জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৮জনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চত করেন কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন। মামলার বিবাদীরা হলেন-মো. জহিরুল ইসলাম, মো. মনির হোসেন, সাইফুল ইসলাম ও খোরশেদ আলম।
বাদী ও বিবাদীর সাথে কথা বলে এবং ঘটনার বিবরনে জানাগেছে, মূলত বাদী বিবাদীর মধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ। তাদের সম্পত্তি বিএস খতিয়ানে সঠিকভাবে উঠেনি। এসব কারণে বাদী-বিবাদী ছাড়া আরেক পক্ষের সাথে মামলা হয়। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সম্পত্তির আপোষ বন্টক হয়নি। এরই মধ্যে গত ৩ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক বিকাল পৌনে ৫টার দিকে বিরোধকৃত সম্পত্তিতে থাকা পল্লী বিদ্যুতের টাওয়ারের নীচে সম্পত্তির গাছ কাটার ক্ষতিপূরন দিতে চায় কর্তৃপক্ষ। ওই টাকা অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের পিতা খোরশেদ আলমসহ পরিবারের লোকজন গ্রহন করতে বাধা দেন এবং উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ঠিক ওই মুহুর্তে চেয়ারম্যান জহিরুল তার চাচা সেলিম মজুমদারকে লাথি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দেয় এবং হত্যার উদ্দেশ্যে গলাচেপে শ^াসরোধ করে। পরে মামলার বাদীসহ অন্যরা এগিয়ে এসে সেলিম মজুমদারকে প্রাণে রক্ষা করেন। এমন অভিযোগ বাদী ফরিদা ইয়াছমীনের।
ঘটনার সত্যতা বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় বাদী ফরিদা ইয়াছমীনের সাথে। তাকে প্রশ্ন করা হয় আপনার স্বামীকে মামলায় উল্লেখিত ১২ আসামী একই সঙ্গে মেরেছে? তিনি হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন। কিন্তু তিনি ১২জনের মারধরের শিকার হয়ে কিভাবে ঘটনাস্থল বানিয়াচোঁ গ্রামের নিজ বাড়ীর সামনে দুই ঘন্টা অবস্থান করেন এবং এরপর হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন। এসব বিষয়ে তিনি সঠিক উত্তর দিতে পারেননি এবং উনি সম্পত্তিগত বিরোধে প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
মামলায় অভিযুক্ত প্রধান আসামী চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, আমার আপন বাবা-চাচারা ৩ ভাই এবং সেলিম মজুমদার একজন। অর্থাৎ আমার দুই দাদার ৪ ছেলে। আমাদের সম্পত্তিগত বিরোধ দীর্ঘ বছরের। এটি হয়েছে বিএস খতিয়ান সঠিক না থাকায়। আমার বাবা-চাচাদের মধ্যে ওয়ারিশদের সম্পত্তি পরিশোধসহ সমস্যা আছে।
তিনি আরো জানান, আমার বাবার চাচাত ভাই সেলিম মজুমদার বিএস খতিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং আমরা তার সঙ্গে মামলার পক্ষভুক্ত থাকা সত্ব্ওে উনার নিজ নামে অনেক সম্পত্তি দলিল করেছেন। যেসব সম্পত্তি আমাদের দখলে। সেলিম মজুমদার বহিরাগত সন্ত্রাসি প্রকৃতির লোক দিয়ে সেসব সম্পত্তি দখল করতে চায়। আমার বাবা একজন নিরীহ মানুষ। বাবার সাথেও চাচা সেলিম মজুমদার অনেক বার খারাপ আচরণ এবং গায়ে হাত তুলেছেন। ঘটনার দিন আমি চাচাকে মারধর করিনি। আপনারা আমার অবর্তমানে এলাকায় এসে খোঁজ নিয়ে দেখেন এমন কোন ঘটনা হয়েছে কিনা? সত্য হলে আমি শাস্তি পেতে প্রস্তুত। মূলত আমার চাচা সেলিম মজুমদারের ছেলে মেজিস্ট্রেট। যে কারণে আজকে আমাদের বাড়িতে পুলিশ এবং মামলা। তার প্রভাবে এসব ঘটনা গত ১ বছর বেড়েছে।
শাহরাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, মামলাটি এফআইআর হয়েছে। তদন্ত করছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জনি কান্তি। মামলাটি তদন্ত শেষ হলে এই বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে। এখন কিছুই বলা যাবে না।