ঢাকা 9:50 pm, Thursday, 20 November 2025

মিশ্র খামারে স্বপ্ন পুরণের পথে কচুয়ার প্রবাস ফেরত আবু নাছেরের

মালয়েশিয়ায় বহু বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে নিজের এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন আবু নাছের মিয়াজী। সেই স্বপ্নই আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে ‘আল হামিদ এগ্রো ফার্ম’-এ। কচুয়া উপজেলার ৮নং কাদলা ইউনিয়নের কাদলা গ্রামের বিলের মাঝখানে কচুয়া সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বিস্তীর্ণ প্রকৃতির মাঝে গড়ে উঠেছে এই ব্যতিক্রমী মিশ্র খামার।

জানা যায়, ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠার পর তিন বছরের ব্যবধানে আল হামিদ এগ্রো ফার্মে যুক্ত হয়েছে নানা সম্ভাবনাময় উৎপাদন। ফার্মে বর্তমানে রয়েছে–শতাধিক গাড়ল, প্রায় ২ হাজারেরও বেশি হাঁস, ভেড়া প্রায় ১০০টি, ছাগল, দুটি পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছ এবং বিদেশি প্রজাতির নারিকেল ও সুপারি গাছ। এই বৈচিত্রপূর্ণ চাষাবাদ ও পশুপালনের কারণে খামারটি এখন এলাকাবাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিদিনই অনেকে খামারটি দেখতে আসেন। প্রবাস থেকে ফিরে নিজ এলাকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যই ছিল আবু নাছের মূল অনুপ্রেরণা। গাড়ল পালন এখন পুরো কাদলা এলাকায় আলোচনার বিষয়। আগের ভেড়ার জায়গা দখল করে নিয়েছে গাড়ল। আকারে বড়, মাংস উৎপাদন বেশি, দ্রুত বংশবৃদ্ধি–এসব কারণে গাড়ল পালনকে ভবিষ্যতে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখছেন উদ্যোক্তা।

স্থানীয়রা জানান, আবু নাছের মিয়াজীর এই উদ্যোগ কাদলা ইউনিয়নসহ পুরো কচুয়া উপজেলার তরুণদের মধ্যে নতুন উদ্যম সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তার খামার দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন নিজস্ব উদ্যোগে কৃষি ও পশুপালন খাতে বিনিয়োগ করতে।

উদ্যোক্তা আবু নাছের মিয়াজী বলেন, দেশে ফিরে ভেবেছিলাম এমন কিছু করব, যাতে আমার এলাকার মানুষ কাজ পায়। বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা নারিকেল ও সুপারি গাছ এখন অনেকটাই বড় হয়েছে। গাড়ল, হাঁস, মাছ–সব মিলিয়ে একটি বড় এবং আধুনিক খামার গড়ে তুলতে চাই। বর্তমানে খামারে ১০–১২ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। খাবার সরবরাহ, মাছের ট্যাংকের তদারকি, গাছের পরিচর্যা–সব কিছুই চলে নিয়মমাফিক।

তিনি আরোও জানান, “প্রবাসে থেকে সবসময় ভাবতাম নিজের দেশে কিছু করার। দেশে ফিরে সিদ্ধান্ত নিলাম স্বপ্নের খামার গড়ে তুলব। এখন আল্লাহর রহমতে ভালোই চলছে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা আছে। ছাগলের পাশাপাশি হাঁসের ডিম উৎপাদন এবং ছানা বিক্রয়ের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে চাহিদা বাড়ছে। সঠিক পরিচর্যা, খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও রোগ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছেন তিনি।

ফার্মের ম্যানেজার বশির উল্যাহ রোকন বলেন,উদ্যোক্তা আবু নাছির মিয়াজীর পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে খামারটি এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এলাকার কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যেই তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

শ্রমিকেরাও খামারের সাফল্যে গর্বিত। তারা জানান, আমরা এখানে কাজ করে সন্তুষ্ট। নিয়মিত পারিশ্রমিকে পরিবারের খরচ চলে যায়। প্রতিদিন গাড়লকে ঘাস, ধানসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়াই।

 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: সাওকাত হোসেন সুমন বলেন, কচুয়া উপজেলায় প্রথমবারের মতো গাড়ল পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন আবু নাছের। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এতে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে। সরকারি পর্যায়ে ভ্যাকসিনসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

মিশ্র খামারে স্বপ্ন পুরণের পথে কচুয়ার প্রবাস ফেরত আবু নাছেরের

মিশ্র খামারে স্বপ্ন পুরণের পথে কচুয়ার প্রবাস ফেরত আবু নাছেরের

Update Time : 09:48:30 pm, Thursday, 20 November 2025

মালয়েশিয়ায় বহু বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে নিজের এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন আবু নাছের মিয়াজী। সেই স্বপ্নই আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে ‘আল হামিদ এগ্রো ফার্ম’-এ। কচুয়া উপজেলার ৮নং কাদলা ইউনিয়নের কাদলা গ্রামের বিলের মাঝখানে কচুয়া সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বিস্তীর্ণ প্রকৃতির মাঝে গড়ে উঠেছে এই ব্যতিক্রমী মিশ্র খামার।

জানা যায়, ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠার পর তিন বছরের ব্যবধানে আল হামিদ এগ্রো ফার্মে যুক্ত হয়েছে নানা সম্ভাবনাময় উৎপাদন। ফার্মে বর্তমানে রয়েছে–শতাধিক গাড়ল, প্রায় ২ হাজারেরও বেশি হাঁস, ভেড়া প্রায় ১০০টি, ছাগল, দুটি পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছ এবং বিদেশি প্রজাতির নারিকেল ও সুপারি গাছ। এই বৈচিত্রপূর্ণ চাষাবাদ ও পশুপালনের কারণে খামারটি এখন এলাকাবাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিদিনই অনেকে খামারটি দেখতে আসেন। প্রবাস থেকে ফিরে নিজ এলাকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যই ছিল আবু নাছের মূল অনুপ্রেরণা। গাড়ল পালন এখন পুরো কাদলা এলাকায় আলোচনার বিষয়। আগের ভেড়ার জায়গা দখল করে নিয়েছে গাড়ল। আকারে বড়, মাংস উৎপাদন বেশি, দ্রুত বংশবৃদ্ধি–এসব কারণে গাড়ল পালনকে ভবিষ্যতে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখছেন উদ্যোক্তা।

স্থানীয়রা জানান, আবু নাছের মিয়াজীর এই উদ্যোগ কাদলা ইউনিয়নসহ পুরো কচুয়া উপজেলার তরুণদের মধ্যে নতুন উদ্যম সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তার খামার দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন নিজস্ব উদ্যোগে কৃষি ও পশুপালন খাতে বিনিয়োগ করতে।

উদ্যোক্তা আবু নাছের মিয়াজী বলেন, দেশে ফিরে ভেবেছিলাম এমন কিছু করব, যাতে আমার এলাকার মানুষ কাজ পায়। বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা নারিকেল ও সুপারি গাছ এখন অনেকটাই বড় হয়েছে। গাড়ল, হাঁস, মাছ–সব মিলিয়ে একটি বড় এবং আধুনিক খামার গড়ে তুলতে চাই। বর্তমানে খামারে ১০–১২ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। খাবার সরবরাহ, মাছের ট্যাংকের তদারকি, গাছের পরিচর্যা–সব কিছুই চলে নিয়মমাফিক।

তিনি আরোও জানান, “প্রবাসে থেকে সবসময় ভাবতাম নিজের দেশে কিছু করার। দেশে ফিরে সিদ্ধান্ত নিলাম স্বপ্নের খামার গড়ে তুলব। এখন আল্লাহর রহমতে ভালোই চলছে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা আছে। ছাগলের পাশাপাশি হাঁসের ডিম উৎপাদন এবং ছানা বিক্রয়ের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে চাহিদা বাড়ছে। সঠিক পরিচর্যা, খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও রোগ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছেন তিনি।

ফার্মের ম্যানেজার বশির উল্যাহ রোকন বলেন,উদ্যোক্তা আবু নাছির মিয়াজীর পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে খামারটি এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এলাকার কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যেই তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

শ্রমিকেরাও খামারের সাফল্যে গর্বিত। তারা জানান, আমরা এখানে কাজ করে সন্তুষ্ট। নিয়মিত পারিশ্রমিকে পরিবারের খরচ চলে যায়। প্রতিদিন গাড়লকে ঘাস, ধানসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়াই।

 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: সাওকাত হোসেন সুমন বলেন, কচুয়া উপজেলায় প্রথমবারের মতো গাড়ল পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন আবু নাছের। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এতে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে। সরকারি পর্যায়ে ভ্যাকসিনসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।