সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে বিআইডাব্লিউটিএর ভিআইপি ঘাটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিলো নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ ‘অতন্দ্র’। এটি দেখার জন্য বিকেলে শিশুসহ শত শত দর্শনার্থী ভীড় জমায়। খুবই সু-শৃঙ্খলভাবে জাহাজটি ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বেলা ২টায় এটি উন্মুক্ত করা হয়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন জাহাজটি ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং জাহাজ সম্পর্কে ধারনা নেন।
অনেকই প্রথমবার এই ধরনের জাহাজ দেখেছেন। দেখে খুবই ভালো লেগেছে। সেনাবাহিনী দেখলেও নৌ বাহিনীর যুদ্ধ কৌশল ও ব্যবস্থাপনা দেখে ভালো লেগেছে জানালেন দর্শনার্থীরা।
শিক্ষক আব্দুল আজিজ বলেন, আমি নৌবাহিনী জাহাজ এই প্রথম দেখেছি। এতে করে নৌবাহিনীর সক্ষমতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা হয়েছে। তবে এই ধরণের জাহাজ শিক্ষার্থীদের দেখা প্রয়োজন।
শহরের তরপুরচন্ডী এলাকার বাসিন্দা ইমাম হোসেন গাজী বলেন, আমি এই প্রথম কোন যুদ্ধ জাহাজ দেখলাম। ইতিহাসের অংশ হিসেবে আমার শিশু কন্যাকেও সাথে নিয়ে এসেছি। দেখে খুবই ভালো লেগেছে। এই ধরণের আয়োজনের জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার বলেন, সশস্ত্রবাহিনী দিবসে এই জাহজাটি ঘাটে আসবে বিদ্যালয়ে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। তাই আমরা কয়েকজন মিলে জাহাজ দেখতে এসেছি। দেখে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারলাম।
শহরের হাসানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণি ছাত্র হাসান বিন আজিজ বলেন, বাবার সাথে জাহাজ দেখতে এসেছেন। দেখে তার খুবই ভালো লেগেছে। জাহাজটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ায় নৌবাহিনীকে ধন্যবাদ জানায় এই শিশু শিক্ষার্থী।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এসেছেন বেশি। কয়েকজন মিলে পুরো জাহাজ ঘুরে দেখেছেন। তাদের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েন সুমাইয়া। সুমাই জানায়, তাদের কয়লাঘাট এলাকায় মসজিদের মাইকে জাহাজটি দেখার জন্য ঘোষণা দেয়া হয়। এতে তাদের জাহাজটি দেখার আগ্রহ বাড়ে এবং বিকেলে চলে আসেন দেখার জন্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোটিশ দেখে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ঘুরতে এসেছেন আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, আমি এই প্রথম দেখলাম যুদ্ধ জাহাজ। সাথে আমার স্ত্রী ও শিশু সন্তানও দেখেছে। যারা জাহাজে রয়েছেন তারা আমাদেরকে জাহাজের বিভিন্ন অংশের কাজের বর্ননা দিয়েছেন। এতে অনেক অজানা বিষয় জানতে পেরেছি।
জাহাজটি সম্পর্কে বর্ননা দিলেন জাহাজের কমান্ডার শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে যুদ্ধ জাহাজ ‘অতন্দ্র’ বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সংযুক্ত হয়। এটি সমুদ্র সীমানায় পাহাড়া দেয়ার পাশপাশি নদী পথে চোরাচালন, দুস্যুপনা, অবৈধভাবে মাদক পরিবহন প্রতিরোধে কাজ করে আসছে। এছাড়াও মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষা অভিযানের সময় কাজ করে জাহাজটি। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে। শুধুমাত্র যুদ্ধকালীন সময় নয়, শান্তিকালীন সময়েও এই জাহাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।
তিনি আরো বলেন, জাহাজটি সর্বসাধার দেখার জন্য ১৯ নভেম্বর বিকেলে চাঁদপুর বিআইডাব্লিউটিএর ভিআইপি ঘাটে আসে। ২২ নভেম্বর চাঁদপুর থেকে নিজ গন্তব্যে রওয়ানা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বানৌজা অতন্দ্র জাহাজ টির দৈর্ঘ্য ৫০.৪ মিটার, প্রস্থ ৭.৫ মিটার, এবং গভীরতা ৪.১ মিটার। এই টহল জাহাজটির ওজন ৩৫০ টন এবং জাহাজটিতে রয়েছে ২টি ৩০৪১ অশ্বশক্তি (২২৭০ কিলোওয়াট) বিশিষ্ট এমটিইউ ডিজেল ইঞ্জিন (জার্মানি), ১টি ১২০ কিলোওয়াট বিশিষ্ট সিএটি জেনারেটর, ১টি ৪৯ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সিএটি ইমারজেন্সি জেনারেটর, জেডএফ ৭৬০০ ট্রান্সমিশন এবং ৪টি শ্যাফট। ফলে জাহাজটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২৪.৫০ নট।
সমুদ্রপৃষ্ঠ অনুসন্ধানের জন্য এটি ১টি ফুরুনো ডিআরএস৪ডব্লিউ রাডার এবং ১টি এফএআর-৩৩২০ চার্ট রাডার দ্বারা সজ্জিত। এছাড়াও জাহাজটি ৪৫ জন সদস্য নিয়ে একনাগাড়ে ৭ দিন অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম।
এর আগে ২০২৩ সালে একই দিবসে নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ ‘অতন্দ্র’ চাঁদপুরের সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিলো।
Reporter Name 



















