চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে দুই মেয়েসহ এক গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনায় স্বামী প্রবাস ফেরত আরিফ হোসেন রাঢ়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরিফ হোসেন রাঢ়ীর বিরুদ্ধে ওই গৃহবধূর বাবা মোস্তফা কোতয়াল আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়েরের পর পুলিশ বুধবার তাকে গ্রেফতার করেছে।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সকালে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদু:খিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামে সকালে গৃহবধূ ফাতেমা আক্তার সীমা তার দুই শিশু কন্যা হলো আরিফ (৪) ও আরিয়াকে (২) নিয়ে আত্মহত্যা করেন। স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত সন্দেহে সোমবার উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে ফাতেমা আক্তার সীমা তার দুই সন্তানসহ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, বুধবার দুপুরে গৃহবধূ ফাতেমা আক্তার সীমার পিতা মোস্তফা কোতয়াল বাদী হয়ে জামাতা প্রবাসী আরিফ হোসেন রাঢ়ীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করে দ্রুত উপজেলার চরদু:খিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রাম থেকে আরিফ হোসেন রাঢ়ীকে গ্রেফতার করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শরিফুল ইসলাম জানান, আরিফ হোসেন রাঢ়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাকে রিমান্ডে আনা হবে।
ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মো. সাইদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার ঘটনার সংবাদ শুনে আমি নিজেসহ একদল পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সেই সময়ে আরিফ হোসেন রাঢ়ীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এর থেকে সে আমাদের নজরেই ছিল। বুধবার ৩০৬ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর পরই তাকে আটক করা হয়।
উল্লেখ্য, পার্শ্ববর্তী হাইমচর উপজেলার চরকৃষ্ণপুর গ্রামের মোস্তফা কোতোয়ালের মেয়ে ফাতেমা আক্তার সীমার সঙ্গে ৭ বছর পূর্বে ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদু:খিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের পুটিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম রাঢ়ীর ছেলে আরিফ হোসেন রাঢ়ীর সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে দুই শিশু কন্যা হলো আরিফ ও আরিয়া। দুবাই প্রবাসী আরিফ হোসেন রাঢ়ী গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে আসে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দুইদিন পর প্রবাসে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।
তবে প্রতিবেশীদের ধারনা মা ও দুই মেয়ের এই মৃত্যু রহস্যজনক। পরকীয়া সন্দেহে মা দুই মেয়ের মৃত্যু নিশ্চিতের পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন, না স্বামী আরিফ হোসেন রাঢ়ী নিজেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনার রহস্য বের করা উচিত। কারণ লোকজন জানায়, প্রবাসী আরিফ হোসেন রাঢ়ীর সঙ্গে তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সীমার সোমবার রাতে কথা কাটাকাটি হয়। এর পরই সকালে এই ঘটনা ঘটে।
ফাতেমা আক্তার সীমার মা শাহিনুর বেগম জানান, মেয়ে ও দুই নাতনীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছি। সোমবার রাতেও মেয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছি। তদন্তের মাধ্যমেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে বলে বিশ্বাস করি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান জানান, মঙ্গলবার সকালে আরিফ রাঢ়ীর ঘরের বিছানায় মা ও দুই মেয়ের লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। এ ছাড়া ঘরের ফ্যানের সঙ্গে একাধিক দড়ি ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। ঘটনা কি এবং কেন ঘটেছে তা তদন্ত সাপেক্ষে রহস্য বের হবে।