ঢাকা 2:48 am, Wednesday, 20 August 2025

হাজীগঞ্জে শিশু সন্তান নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে মায়ের আত্মহত্যা

  • Reporter Name
  • Update Time : 08:03:50 pm, Wednesday, 24 April 2024
  • 13 Time View

ছবি-ত্রিনদী

তালাক দেয়ার পর স্বামীর কাছ থেকে কোন সুরাহা না পেয়ে দেড় বছর বয়সী শিশু সন্তান আব্দুর রহমানকে সাথে নিয়ে তাহমিনা আক্তার (২৪) নামে নারী চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া চট্টগ্রামগামী সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) বেলা আড়াইটার দিকে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের হাজীগঞ্জ কাজীগাঁও এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

তাহমিনা হাজীগঞ্জ উপজেলার ধড্ডা গ্রামের দেওয়াঞ্জি বাড়ীর মো. রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তার মুনতাহা (৫) নামে কন্যা সন্তানও আছে। ২০১৯ সালে একই উপজেলার সন্না গ্রামের হাওলাদার বাড়ীর মো. নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মো. মাসুদুজ্জামান হাওলাদারের সাথে সামাজিকভাবে তাহমিনার বিয়ে হয়।

আত্মহত্যার ঘটনার পর হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এরপর বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেন চাঁদপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানা পুলিশ।

চাঁদপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদু রহমান বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে সুরাতহাল তৈরী করা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, তাহমিনা আজকে তার ব্যাক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর আগে তাহমিনা গত ২৮ মার্চ তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের পর স্বামী দেশে আসলেও কোন সুরাহা না পাওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন বলে স্থানীয়দের ধারণা।

অভিযোগ থেকে জানাগেছে, তাহমিনা আক্তার বিয়ের পর থেকেই তার বাবার বাড়িতে থাকতেন। কারণ বিয়ের পরে বাবার কাছ থেকে ৫লাখ টাকা ধার নিয়ে স্বামীকে কুয়েত পাঠান। স্বামী প্রবাসে থাকা অবস্থায় তাহমিনার সাথে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মোবাইল ফোনে বাক বিতন্ডা হয়। তার স্বামী তাকে বাবার বাড়ী থেকে অন্যত্র থাকতে বলে। যে কারণে সে হাজীগঞ্জ মকিবাদ চৌধুরী পাড়া দুই সন্তানকে নিয়ে বাসা বাড়া করে থাকতেন। সেখানে থাকা অবস্থায় স্বামী তাকে নানা অপবাদ দিয়ে মোবাইল ফোনে অকথ্য ভাষায় গাল মন্দ করতেন এবং তাদের ভরণ পোষণ দিতেন না। যে কারণে স্বামী প্রবাসে থাকা অবস্থায় তাকে তালাক দেন।

এদিকে গত ১৮ এপ্রিল তাহমিনার স্বামী মো. মাসুদুজ্জামান হাওলাদার দেশে আসেন এবং মোবাইল ফোনে তাকে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করেন। তাকে পুনরায় তার সংসারে যাওয়ার জন্য বলেন। যদি স্বামীর সংসারে না যান তাহলে তাদের স্বামী-স্ত্রীর বিভিন্ন ছবি সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ি দিবেন বলে হুমকি দেন মাসুদুজ্জামান।

তাহমিনা আক্তার হাজীগঞ্জ থানায় গত ২৮ মার্চ অভিযোগ দেয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমানকে।

এসআই আব্দুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি সুরাহার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ অভিযুক্ত মাসুদুজ্জামান পরিবারের সাথে বসার চেষ্টার করা হয়। কিন্তু তারা রাজি হননি। এরপর গত এক সপ্তাহ পূর্বে মাসুদ্দুজামান দেশে আসেন। কিন্তু সে বাড়ীতে না এসে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকেন। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে কোন সুরাহা করা সম্ভব হয়নি। জানতে পারি সে আবার প্রবাসে চলেগেছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

শাহরাস্তিতে জুলাই আন্দোলনে আহতদের গেজেটে ভুয়া নাম অন্তর্ভুক্তির ছড়াছড়ি

হাজীগঞ্জে শিশু সন্তান নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে মায়ের আত্মহত্যা

Update Time : 08:03:50 pm, Wednesday, 24 April 2024

তালাক দেয়ার পর স্বামীর কাছ থেকে কোন সুরাহা না পেয়ে দেড় বছর বয়সী শিশু সন্তান আব্দুর রহমানকে সাথে নিয়ে তাহমিনা আক্তার (২৪) নামে নারী চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া চট্টগ্রামগামী সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) বেলা আড়াইটার দিকে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের হাজীগঞ্জ কাজীগাঁও এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

তাহমিনা হাজীগঞ্জ উপজেলার ধড্ডা গ্রামের দেওয়াঞ্জি বাড়ীর মো. রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তার মুনতাহা (৫) নামে কন্যা সন্তানও আছে। ২০১৯ সালে একই উপজেলার সন্না গ্রামের হাওলাদার বাড়ীর মো. নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মো. মাসুদুজ্জামান হাওলাদারের সাথে সামাজিকভাবে তাহমিনার বিয়ে হয়।

আত্মহত্যার ঘটনার পর হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এরপর বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেন চাঁদপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানা পুলিশ।

চাঁদপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদু রহমান বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে সুরাতহাল তৈরী করা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, তাহমিনা আজকে তার ব্যাক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর আগে তাহমিনা গত ২৮ মার্চ তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের পর স্বামী দেশে আসলেও কোন সুরাহা না পাওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন বলে স্থানীয়দের ধারণা।

অভিযোগ থেকে জানাগেছে, তাহমিনা আক্তার বিয়ের পর থেকেই তার বাবার বাড়িতে থাকতেন। কারণ বিয়ের পরে বাবার কাছ থেকে ৫লাখ টাকা ধার নিয়ে স্বামীকে কুয়েত পাঠান। স্বামী প্রবাসে থাকা অবস্থায় তাহমিনার সাথে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মোবাইল ফোনে বাক বিতন্ডা হয়। তার স্বামী তাকে বাবার বাড়ী থেকে অন্যত্র থাকতে বলে। যে কারণে সে হাজীগঞ্জ মকিবাদ চৌধুরী পাড়া দুই সন্তানকে নিয়ে বাসা বাড়া করে থাকতেন। সেখানে থাকা অবস্থায় স্বামী তাকে নানা অপবাদ দিয়ে মোবাইল ফোনে অকথ্য ভাষায় গাল মন্দ করতেন এবং তাদের ভরণ পোষণ দিতেন না। যে কারণে স্বামী প্রবাসে থাকা অবস্থায় তাকে তালাক দেন।

এদিকে গত ১৮ এপ্রিল তাহমিনার স্বামী মো. মাসুদুজ্জামান হাওলাদার দেশে আসেন এবং মোবাইল ফোনে তাকে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করেন। তাকে পুনরায় তার সংসারে যাওয়ার জন্য বলেন। যদি স্বামীর সংসারে না যান তাহলে তাদের স্বামী-স্ত্রীর বিভিন্ন ছবি সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ি দিবেন বলে হুমকি দেন মাসুদুজ্জামান।

তাহমিনা আক্তার হাজীগঞ্জ থানায় গত ২৮ মার্চ অভিযোগ দেয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমানকে।

এসআই আব্দুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি সুরাহার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ অভিযুক্ত মাসুদুজ্জামান পরিবারের সাথে বসার চেষ্টার করা হয়। কিন্তু তারা রাজি হননি। এরপর গত এক সপ্তাহ পূর্বে মাসুদ্দুজামান দেশে আসেন। কিন্তু সে বাড়ীতে না এসে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকেন। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে কোন সুরাহা করা সম্ভব হয়নি। জানতে পারি সে আবার প্রবাসে চলেগেছেন।