মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ :
গতকাল সোমবার (১২ মে) ২০২৪ সালের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে হাজীগঞ্জ উপজেলার ২৩টি মাদরাসার মধ্যে পৌরসভাধীন এলাকার দুইটি মাদরাসার ফলাফল চরম বিপর্যয় হওয়ায় অভিভাবক ও সচেতনমহল চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মাদরাসা দুইটি হলো, বলাখাল এম.এন আলিম মাদরাসা ও ধেররা মাদরাসায়ে আবেদীয়া মোজাদ্দেদীয়া দাখিল মাদরাসা।
এছাড়াও এবছর উচ্চগাঁও ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসা, বাকিলা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, রাজাপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা ও মদিনাতুল উলুম ইসলামীয়া দাখিলা মাদরাসা কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করতে পারেনি। দেখা গেছে প্রতি বছর জিপিএ-৫ কম পেলেও এসএসসির তুলনায় দাখিল পরীক্ষার্থীদের পাসের হার বেশি থাকে। কিন্তু এ বছর এর চিত্র বিপরীতমুখী হলো। পরীক্ষার্থী সংখ্যা ও পাসের হার নিম্নমুখী। তবে বেড়েছে জিপিএ-৫।
জানা গেছে, এ বছর (২০২৪) দাখিল পরীক্ষায় উপজেলা থেকে ১১৫৩ জন অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৯০২ জন। পাশের হার ৭৮.২৩ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫১ জন, এ গ্রেড ৩১৫ জন, এ মাইনাস ২৬২ জন, বি গ্রেড ১৭৯ জন ও সি গ্রেড ৯৫ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ২৫১ জন। এ বছর কোন মাদরাসায় শতভাগ পাশের গৌরব অর্জন করতে পারেনি।
অথচ গত বছর (২০২৩) পরীক্ষায় উপজেলা থেকে ১২২৭ জন অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১০২০ জন। পাশের হার ৮৩.১২ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬ জন, এ গ্রেড ৩১৪ জন, এ মাইনাস ৩২২ জন, বি গ্রেড ২৩১ জন, সি গ্রেড ৯৯ জন, ডি গ্রেড ১০ জন ও অকৃতকার্য হয়েছে ২০৭ জন এবং একটি প্রতিষ্ঠান শতভাগ পাশের গৌরব অর্জন করেছে।
দেখা গেছে, গতবছর থেকে এবছর ৭৪ জন পরীক্ষার্থী কমেছে। ফলাফলও কমেছে ৫.১১ শতাংশ। এর মধ্যে পৌরসভার দুইটি মাদরাসার ফলাফলে চরম বিপর্যয় ঘটেছে। এছাড়া আরও ৪টি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত ফলাফল পায়নি। এতে অভিভাবক মহল চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
এক্ষেত্রে পুরনো ইস্যু হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি বৈষম্য, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি, মাধ্যমিকে পরিচালনা পর্ষদসহ প্রতিষ্ঠান প্রধানের যথাযথ দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং অধিকন্তু শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের পাঠদানে উদাসীনতা ও আন্তরিকতার অভাবে মাদরাসা শিক্ষা অনেকটা ধ্বংসের পথে।
এর ব্যতিক্রম হাজীগঞ্জেও নয়। শিক্ষার্থী ও ফলাফলে দিনে দিনে তার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। এর ফলে অধিকাংশ অভিভাবক ও শিক্ষার্থী মাদরাসা শিক্ষার প্রতি ক্রমাগত অনাগ্রহী হচ্ছেন। এতে সচতেনমহলে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় এবং মাদ্রাসার পড়াশোনার মান ও শিক্ষকদের দায় দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
এ বছর পৌরসভাধীন বলাখাল এম.এন আলিম মাদরাসা থেকে ৩৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৭ জন। পাশের হার ৪৩.৬০ শতাংশ। এর মধ্যে এ গ্রেড পেয়েছে ৩ জন, এ মাইনাস ৬ জন, বি গ্রেড ৫ জন ও সি গ্রেড ৩ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ২২ জন। অর্থ্যাৎ পাশের চেয়ে অকৃতকার্যের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। অথচ প্রতিষ্ঠানে ২২ জন শিক্ষক রয়েছেন। গড়ে জনপ্রতি শিক্ষক ২জন শিক্ষার্থীরও কম পেয়েছেন। তারপরও ফল বিপর্যয়। এতে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও আন্তরিকতা নিয়ে।
একই রকম পৌরসভাধীন মাদরাসায়ে আবেদীয়া মোজাদ্দেদীয়া দাখিল মাদরাসায়। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৪১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৯ জন। পাশের হার ৪৬.৩৪ শতাংশ। এর মধ্যে এ গ্রেড পেয়েছে ১ জন, এ মাইনাস ৫ জন, বি গ্রেড ৮ জন ও সি গ্রেড ৫ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ২২ জন। অর্থ্যাৎ এ প্রতিষ্ঠানেও পাশের চেয়ে অকৃতকার্যের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।
অথচ প্রতিষ্ঠানে ১২ জন শিক্ষক রয়েছেন। গড়ে জনপ্রতি শিক্ষক ৩ জনের একটু বেশি শিক্ষার্থী পেয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, মাদরাসায়ে আবেদীয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল রয়েছে। গনিত বিষয়ে একজন নারী শিক্ষকের সাথে অপর গণিত ও গণিত বিষয়ে পাঠদানে আগ্রাহী শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের মধ্যে চরম বিরোধ থাকায় শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে!
অপর দিকে যে চারটি প্রতিষ্ঠান কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করতে পারেনি। তার মধ্যে উচ্চগাঁও ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসা থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ২২ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ১৩ জন। পাশের হার ৬২.৮৬ শতাংশ। বাকিলা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ২২ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ১৩ জন। পাশের হার ৬২.৮৬ শতাংশ।
রাজাপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে ৩৬ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ২৩ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ১৩ জন। পাশের হার ৬৩.৮৯ শতাংশ। মদিনাতুল উলুম ইসলামীয়া দাখিলা মাদরাসা থেকে ৫২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৩৫ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ১৭ জন । পাশের হার ৬৭.৩০ শতাংশ।
এ দিকে ফলাফল বিপর্যয়ে মাদরাসায়ে আবেদীয়া মোজাদ্দেদীয়া দাখিল মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট মোহাম্মদ আলী জানান, একেক সময় একেক রকম শিক্ষার্থী আসে। তাই ফলাফলে কিছুটা ব্যতিক্রম হয়। তিনি বলেন, এবছরের ফলাফলে আমরাও হতাশ। বিষয়টি নিয়ে আমি শিক্ষকদের সাথে বসবো।
বলাখাল এম.এন আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাহবুবুল হাসান জানান, অধিকাংশ শিক্ষার্থী মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের ডাকলে তারাও আসেন না। যার ফলে ফলাফল খারাপ হয়েছে। তিনি বলেন, গভর্ণিং বডি ও শিক্ষকদের মিটিং আহবান করা হয়েছে। আমরা ফল বিপর্যয় থেকে উত্তোরণে কাজ করবো।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং ওই দুইটি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।