ঢাকা ১১:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডাকাতি, প্রেম, পরকীয়া নাকি পারিবারিক বিরোধ

হাজীগঞ্জে প্রবাসির মা ও ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত মেয়ে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:২৬:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
  • ৪৭ Time View

ছবি-ত্রিনদী

ডাকিত, প্রেম, পরকীয়া নাকি পারিবারিক বিরোধ কি কারণে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো সত্তোর্ধ্ব বয়সী হামিদা বেগম ও তার নাতী শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাতকে। বিষয়টি প্রথমে ডাকাতি বলে প্রচার হলেও ঘটনাস্থলে গিয়ে ডাকাতির কোন আলামত পাওয়া যায়নি। পুলিশ প্রেম, পরকীয়া, পারিবারিক বিরোধ ৩টি বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে।

সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার ২নং বাকিলা ইউনিয়ন পশ্চিম রাধাসার বকাউল বাড়ীতে নৃশসংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় প্রবাসি ইউসুফের মা হামিদা বেগম ও তার ছেলে আরাফাতকে। এসময় তার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে হালিমা আকতারকেও নির্মমভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

হালিাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। অপর দিকে নিহত হামিদা বেগম ও তার নাতী আরাফাতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

ওই গ্রামের খান বাড়ীর বাবলু জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিহত আরাফাতের মা শাহিন আমাকে ফোন করে তাদের বাড়ীতে ডাকাত ডুকছে, অনেককে কুপিয়েছে বলে ফোন করে। পরে স্থানীয় মসজিদের মাইকে বকাউল বাড়ীর ডাকাত ডুকেছে বলে প্রচার করা হয়। পরে আমিসহ কয়েকজন ওই বাড়ীতে যাই। গিয়ে দেখি প্রবাসি ইউসুফের মায়ের মৃতদেহ খাটের উপর পড়ে আছে। তার ছেলে আরাফাত ও মেয়ে হালিমা নিচে আহত অবস্থায় নিচে পড়ে আছে। তাদের শরীর থেকে রক্ত যাচ্ছে। পরে স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও অন্যদের সহযোগিতায় আহতদের কাঁধে করে রাস্তায় এনে পাশের বাড়ী থেকে অটো নিয়ে হাসপাতালে আসি। আসার পথেই আরাফাত মারা যায়। হাসপাতাল থেকে আরাফাতের বোন হালিমাকে কুমিল্লায় রেফার করা হয়। শুনেছি সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়েছে। তার পিঠে ও বুকে কোপ দেয়া হয়েছে।

অটো চালক জহির জানান, রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। আনু: সাড়ে ১২টার পরে আমার বাড়ীতে আহত আরাফাত ও তার বোন হালিমাকে নিয়ে আসে স্থানীয়রা। পরে আমার ব্যাটারী চালিত অটোতে করে তাদেরকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি।

একই বাড়ীর সাহাবুদ্দিন জানান, ডাকাতির ঘটনায় ফোন পেয়ে আমরা ওই বাড়ীতে যাই। আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ফাতেমা জানান, তার ঘরের তালা ভেঙ্গে তার ঘরেও ডাকাত দল প্রবেশ করেছে। সে অন্য একটি রুমের দরজা আটকিয়ে বিভিন্ন জনকে ফোন করে বাড়ীতে ডাকাতি হচ্ছে বলে জানাচ্ছিল। ডাকাত দল কালো বোরকা পড়া ছিলো।

স্থানীয়রা জানান, বাড়ীতে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ৩টি বিল্ডিং রেখে কেন ডাকাত দল টিনের ঘরে ডুকলো ? ডাকাত দল ডাকাতির উদ্দেশ্য ওই ঘরে প্রবেশ করলে, ঘর থেকে কোন স্বর্ণালংকার খোয়া যায়নি। এমনকি নিহত বৃদ্ধ মহিলা হামিদা বেগমের গলায়ও স্বর্ণের চেইন ও কানে স্বর্ণের দুল আছে।

নিহত আরাফাতের মা শাহিন বেগম জানান, আমি আমার ছোট দেবর কামরুলের বৌ’র ফোন পেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আমার শাশুড়ীর ঘরের দরজায় গিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখি রক্ত রক্ত। আমার শাশুড়ীর মরহেদ ফ্লোরে পড়ে আছে। আর কিছুই বলতে পারবোনা। পরে শুনেছি কারা কারা আমার ছেলে ও মেয়েকে হাসপাতালে নিয়েছে। আমি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত হামিদা বেগমের নাতিন চাঁদপুর সদর উপজেলার বাবুরহাট বাজারের বাবুল মালের মেয়ে তাসলিমা ও কামরুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমাকে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ যাকে সন্দেহ করছে, পশ্চিম রাধাসার গ্রামের ছাড়াবাড়ীর আবদুল হামিদের ছেলে আলম (৩৮) পলাতক রয়েছে।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, একজন লোক বোরকা পড়ে এসেছিলেন। বিষয়টি চুরি, নাকি পারিবারিক বিরোধ বা পরকীয়া, প্রেম সংগঠিত কোন বিষয় আছেকিনা আমরা তদন্ত করে দেখছি। পুলিশ ও পিবিআই গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

এ দিকে মর্মান্তিক ঘটনা শোনার পর পরই ঘটনাস্থলে ছুটে যান হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ কুমার দে, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদ, বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, পিবিআই, এনএসআইসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

বিজয় দিবসের দিনে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করলেন চাঁদপুর-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক

ডাকাতি, প্রেম, পরকীয়া নাকি পারিবারিক বিরোধ

হাজীগঞ্জে প্রবাসির মা ও ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত মেয়ে

Update Time : ০৯:২৬:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

ডাকিত, প্রেম, পরকীয়া নাকি পারিবারিক বিরোধ কি কারণে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো সত্তোর্ধ্ব বয়সী হামিদা বেগম ও তার নাতী শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাতকে। বিষয়টি প্রথমে ডাকাতি বলে প্রচার হলেও ঘটনাস্থলে গিয়ে ডাকাতির কোন আলামত পাওয়া যায়নি। পুলিশ প্রেম, পরকীয়া, পারিবারিক বিরোধ ৩টি বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে।

সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার ২নং বাকিলা ইউনিয়ন পশ্চিম রাধাসার বকাউল বাড়ীতে নৃশসংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় প্রবাসি ইউসুফের মা হামিদা বেগম ও তার ছেলে আরাফাতকে। এসময় তার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে হালিমা আকতারকেও নির্মমভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

হালিাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। অপর দিকে নিহত হামিদা বেগম ও তার নাতী আরাফাতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

ওই গ্রামের খান বাড়ীর বাবলু জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিহত আরাফাতের মা শাহিন আমাকে ফোন করে তাদের বাড়ীতে ডাকাত ডুকছে, অনেককে কুপিয়েছে বলে ফোন করে। পরে স্থানীয় মসজিদের মাইকে বকাউল বাড়ীর ডাকাত ডুকেছে বলে প্রচার করা হয়। পরে আমিসহ কয়েকজন ওই বাড়ীতে যাই। গিয়ে দেখি প্রবাসি ইউসুফের মায়ের মৃতদেহ খাটের উপর পড়ে আছে। তার ছেলে আরাফাত ও মেয়ে হালিমা নিচে আহত অবস্থায় নিচে পড়ে আছে। তাদের শরীর থেকে রক্ত যাচ্ছে। পরে স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও অন্যদের সহযোগিতায় আহতদের কাঁধে করে রাস্তায় এনে পাশের বাড়ী থেকে অটো নিয়ে হাসপাতালে আসি। আসার পথেই আরাফাত মারা যায়। হাসপাতাল থেকে আরাফাতের বোন হালিমাকে কুমিল্লায় রেফার করা হয়। শুনেছি সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়েছে। তার পিঠে ও বুকে কোপ দেয়া হয়েছে।

অটো চালক জহির জানান, রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। আনু: সাড়ে ১২টার পরে আমার বাড়ীতে আহত আরাফাত ও তার বোন হালিমাকে নিয়ে আসে স্থানীয়রা। পরে আমার ব্যাটারী চালিত অটোতে করে তাদেরকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি।

একই বাড়ীর সাহাবুদ্দিন জানান, ডাকাতির ঘটনায় ফোন পেয়ে আমরা ওই বাড়ীতে যাই। আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ফাতেমা জানান, তার ঘরের তালা ভেঙ্গে তার ঘরেও ডাকাত দল প্রবেশ করেছে। সে অন্য একটি রুমের দরজা আটকিয়ে বিভিন্ন জনকে ফোন করে বাড়ীতে ডাকাতি হচ্ছে বলে জানাচ্ছিল। ডাকাত দল কালো বোরকা পড়া ছিলো।

স্থানীয়রা জানান, বাড়ীতে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ৩টি বিল্ডিং রেখে কেন ডাকাত দল টিনের ঘরে ডুকলো ? ডাকাত দল ডাকাতির উদ্দেশ্য ওই ঘরে প্রবেশ করলে, ঘর থেকে কোন স্বর্ণালংকার খোয়া যায়নি। এমনকি নিহত বৃদ্ধ মহিলা হামিদা বেগমের গলায়ও স্বর্ণের চেইন ও কানে স্বর্ণের দুল আছে।

নিহত আরাফাতের মা শাহিন বেগম জানান, আমি আমার ছোট দেবর কামরুলের বৌ’র ফোন পেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আমার শাশুড়ীর ঘরের দরজায় গিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখি রক্ত রক্ত। আমার শাশুড়ীর মরহেদ ফ্লোরে পড়ে আছে। আর কিছুই বলতে পারবোনা। পরে শুনেছি কারা কারা আমার ছেলে ও মেয়েকে হাসপাতালে নিয়েছে। আমি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত হামিদা বেগমের নাতিন চাঁদপুর সদর উপজেলার বাবুরহাট বাজারের বাবুল মালের মেয়ে তাসলিমা ও কামরুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমাকে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ যাকে সন্দেহ করছে, পশ্চিম রাধাসার গ্রামের ছাড়াবাড়ীর আবদুল হামিদের ছেলে আলম (৩৮) পলাতক রয়েছে।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, একজন লোক বোরকা পড়ে এসেছিলেন। বিষয়টি চুরি, নাকি পারিবারিক বিরোধ বা পরকীয়া, প্রেম সংগঠিত কোন বিষয় আছেকিনা আমরা তদন্ত করে দেখছি। পুলিশ ও পিবিআই গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

এ দিকে মর্মান্তিক ঘটনা শোনার পর পরই ঘটনাস্থলে ছুটে যান হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ কুমার দে, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদ, বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, পিবিআই, এনএসআইসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।