মায়ের পরকীয়ার বলি অবুঝ শিশু সাহেল। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে শিশু সাহাল (৩) হত্যার নেপথ্যে মূল কারণ হিসেবে পুলিশ মায়ের পরকীয়াকে দায়ী করেছে। প্রতিবেশী হাছান মিয়ার সঙ্গে ছিল শিশু সাহালের মায়ের পরকীয়া সম্পর্ক। এই পরকীয়ার বলি হতে হলো শিশুটিকে। এক পরকীয়া প্রেমিক আরেক পরকীয়া প্রেমিককে ফাঁসাতে হত্যা করে শিশুটিকে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে শিশু সাহাল হত্যার রহস্য পাওয়া গেল। ঘটনায় শিশুর দাদি নাসিমা বেগম (৫০) মঙ্গলবার রাতে প্রেমিক হাছানকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
গত সোমবার রাতে শিশু সাহাল তার মায়ের বাসা থেকে নিখোঁজ হয়। পরে শিশুটির মা রাতেই থানায় জিডি করেন। পরে পুলিশ এদিন গভীর রাতে অনুসন্ধান করে প্রতিবেশী হাছানের বাসার ওয়ারড্রব থেকে মৃত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ সময় শিশু সাহালের মুখে টেপ লাগানো ছিল। ঘটনাটি ঘটেছে শহরের পঞ্চবটি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়। উপজেলার কালিকাপ্রসাদ এলাকার কাতার প্রবাসী সানাউল্লাহ বাবুর ছেলে সাহাল। তার মায়ের নাম মোমেনা বেগম। ঘটনার পরপরই পুলিশ প্রেমিক হাছানকে গ্রেফতার করে। পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করার পর মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত করে। ঘটনায় মামলা করেন দাদি।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে শিশু সাহাল হত্যার পেছনে রহস্য হলো মায়ের দুটি পরকীয়া। প্রেমিক হাছান নির্মমভাবে হত্যা করে শিশুটিকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী এক মহিলা যুগান্তর প্রতিনিধিকে বলেন, পরিবারটির বাড়ি কালিকাপ্রসাদ হলেও শিশুর বাবা সানাউল্লাহ বাবু কাতার প্রবাসী হওয়ায় তারা পঞ্চবটিতে ভাড়া থাকত। বাসায় মা-ছেলে ছাড়া কেউ থাকত না। প্রতিবেশী হাছান মিয়ার বাড়ি আশুগঞ্জের তল্লা গ্রামে। তার বাবার নাম এরশাদ আলী। সে মাঝেমধ্যে অটোরিকশা চালাত। আবার কখনো গার্ডের কাজ করত। তার স্ত্রী না থাকায় একাই বাসা ভাড়া নিয়ে পঞ্চবটি থাকত। স্বামীর অবর্তমানে শিশুর মা মোমেনা বেগম পাশের বাসার হাছানের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।
আরেক প্রতিবেশী জানান, ইদানীং কোনো কারণে মোমেনা বেগম হাছানকে বাদ দিয়ে অন্য একটি ছেলের প্রেমের পড়ে। এ কারণে মোমেনা বেগম গত কয়েক দিন যাবত হাছানের সঙ্গে যোগাযোগ করছিল না। ঘটনাটি হাছান জানতে পেরে মোমেনার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে রাগে ক্ষোভে ঘটনার দিন রুমের বারান্দা থেকে শিশু নাহালকে অপহরণ করে নিজ বাসায় নিয়ে গলাটিপে বা নাকমুখে টেপ লাগিয়ে তাকে হত্যা করার পর ওয়ারড্রবে লুকিয়ে রাখে। হাছান ভেবেছিল পরদিন রাতে সাহালকে কোনো স্থানে ফেলে দেবে। পুলিশের হাতে হত্যার ঘটনা ধরা পড়বে সে কখনো ভাবেনি। এসব পরকীয়ার কাহিনী এলাকার লোকজনের মুখে মুখে ঘুরপাক করছে; কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না, কথা বলতে চায় না।
তবে যুগান্তর প্রতিনিধি বুধবার এলাকায় ঘুরে ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার নেপথ্যে কাহিনী বের করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভৈরব থানার এসআই মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা হাছানের বাসা থেকে লাশ উদ্ধারের পর তাকে গ্রেফতার করি। আমরা শিশুর মাকেও মঙ্গলবার আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি তবে পরকীয়ার কথা তিনি স্বীকার করেননি। তবে স্থানীয়দের কাছ থেকে পরকীয়ার বিষয়টি অবগত হয়েছি। হাছান ঘটনার পর আবোল-তাবোল কথা বলেছে। তাকে রিমান্ডে এনে আবারো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পরকীয়ার বিষয়টি তদন্ত করব। ঘটনায় শিশুটির দাদি বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মাকে সন্দেহজনক মনে করেছি বলে বাদী করা হয়নি জানান তিনি।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহিন মিয়া জানান, শিশু হত্যার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ অধিকতর তদন্ত করবে। মাকে আমরা ছেড়ে দিলেও পুলিশ যখন ডাকবে তখন আসার শর্তে তাকে ছেড়েছি। পরকীয়ার প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।