ঢাকা 2:35 am, Thursday, 4 September 2025

শিবিরের প্রকাশনায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা, ছাত্রদলের প্রতিবাদ

  • Reporter Name
  • Update Time : 08:14:49 pm, Wednesday, 29 January 2025
  • 50 Time View

ছবি-ত্রিনদী

ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদ’ নামক মাসিক পত্রিকার ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত আহমেদ আফঘানি কর্তৃক রচিত ‘যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি’ নামক প্রবন্ধে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

 

ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আহমেদ আফঘানির প্রবন্ধে বলা হয় ‘অনেক মুসলিম না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করুন।’ এই ছাত্র সংবাদ পত্রিকাটি ছাত্রশিবির কর্তৃক প্রকাশিত ও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি কর্তৃক সম্পাদিত একটি প্রকাশনা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাধীনতার দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পরে এসেও নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করা এবং ‘পাপকাজ মনে করে’ ক্ষমা প্রার্থনা করা একটি গর্হিত এবং ন্যক্কারজনক ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কোনো ধর্মযুদ্ধ ছিল না। এটি ছিল অত্যাচারী, জালিম, দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যার বিরুদ্ধে মজলুম বাংলাদেশিদের প্রতিরোধের যুদ্ধ। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণের কারণে মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি সত্যিকারের জনযুদ্ধ। দীর্ঘ চব্বিশ বছরের সীমাহীন অত্যাচার, অবিচার আর অপশাসনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পাকিস্তানি প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী অত্যন্ত নির্মমভাবে রাতের আঁধারে এদেশের ঘুমন্ত নিরীহ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে নিরস্ত্র জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এভাবেই শুরু হয়েছে আমাদের অস্তিত্বের সংগ্রাম, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। কেউ ভুল করে কিংবা না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে এই বক্তব্য একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের ধৃষ্টতা ও নিজেদের পরাজয়ের গ্লানি চাপা দেওয়ার অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। ছাত্রশিবিরের এরূপ কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রচারণার কারণে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বুদ্ধিবৃত্তিক পুনর্বাসনের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে।

এতে বলা হয়, ছাত্রশিবির একদিকে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে ‘স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখব’ স্লোগান দিয়ে র‌্যালি করে, আবার অন্যদিকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়াকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করবে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, এটি সুস্পষ্ট দ্বিচারিতা। এই দ্বিচারিতার ফলে প্রমাণিত হয় প্রকাশ্যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করার কৌশল গ্রহণ করলেও ভেতরে ভেতরে ছাত্রশিবিরের পূর্বসূরী ছাত্রসংঘের মতো মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের মনোভাবই তারা ধারণ করে।

ছাত্রদল নেতারা বলেন, লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত বলে ছাত্রশিবির তাদের দলীয় প্রকাশনার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী ন্যারেটিভ প্রচারের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, ছাত্রশিবিরের প্রকাশনার এডিটরিয়াল পলিসি স্বাধীনতাবিরোধী ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে। আমরা ছাত্রশিবিরকে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে। একই সঙ্গে ছাত্রশিবিরকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বয়ান প্রচার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করার দায়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। অবিলম্বে ছাত্রশিবিরকে এ ঘটনায় নিজেদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ছাত্রদলের নেতারা আরও বলেন, ছাত্রশিবির যদি এই ন্যক্কারজনক মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বয়ানকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনা থেকে প্রত্যাহারপূর্বক জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি ছাত্রশিবিরের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের বিক্ষোভ

শিবিরের প্রকাশনায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা, ছাত্রদলের প্রতিবাদ

Update Time : 08:14:49 pm, Wednesday, 29 January 2025

ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদ’ নামক মাসিক পত্রিকার ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত আহমেদ আফঘানি কর্তৃক রচিত ‘যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি’ নামক প্রবন্ধে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

 

ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আহমেদ আফঘানির প্রবন্ধে বলা হয় ‘অনেক মুসলিম না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করুন।’ এই ছাত্র সংবাদ পত্রিকাটি ছাত্রশিবির কর্তৃক প্রকাশিত ও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি কর্তৃক সম্পাদিত একটি প্রকাশনা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাধীনতার দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পরে এসেও নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করা এবং ‘পাপকাজ মনে করে’ ক্ষমা প্রার্থনা করা একটি গর্হিত এবং ন্যক্কারজনক ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কোনো ধর্মযুদ্ধ ছিল না। এটি ছিল অত্যাচারী, জালিম, দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যার বিরুদ্ধে মজলুম বাংলাদেশিদের প্রতিরোধের যুদ্ধ। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণের কারণে মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি সত্যিকারের জনযুদ্ধ। দীর্ঘ চব্বিশ বছরের সীমাহীন অত্যাচার, অবিচার আর অপশাসনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পাকিস্তানি প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী অত্যন্ত নির্মমভাবে রাতের আঁধারে এদেশের ঘুমন্ত নিরীহ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে নিরস্ত্র জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এভাবেই শুরু হয়েছে আমাদের অস্তিত্বের সংগ্রাম, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। কেউ ভুল করে কিংবা না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে এই বক্তব্য একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের ধৃষ্টতা ও নিজেদের পরাজয়ের গ্লানি চাপা দেওয়ার অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। ছাত্রশিবিরের এরূপ কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রচারণার কারণে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বুদ্ধিবৃত্তিক পুনর্বাসনের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে।

এতে বলা হয়, ছাত্রশিবির একদিকে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে ‘স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখব’ স্লোগান দিয়ে র‌্যালি করে, আবার অন্যদিকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়াকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করবে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, এটি সুস্পষ্ট দ্বিচারিতা। এই দ্বিচারিতার ফলে প্রমাণিত হয় প্রকাশ্যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করার কৌশল গ্রহণ করলেও ভেতরে ভেতরে ছাত্রশিবিরের পূর্বসূরী ছাত্রসংঘের মতো মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের মনোভাবই তারা ধারণ করে।

ছাত্রদল নেতারা বলেন, লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত বলে ছাত্রশিবির তাদের দলীয় প্রকাশনার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী ন্যারেটিভ প্রচারের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, ছাত্রশিবিরের প্রকাশনার এডিটরিয়াল পলিসি স্বাধীনতাবিরোধী ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে। আমরা ছাত্রশিবিরকে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে। একই সঙ্গে ছাত্রশিবিরকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বয়ান প্রচার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করার দায়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। অবিলম্বে ছাত্রশিবিরকে এ ঘটনায় নিজেদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ছাত্রদলের নেতারা আরও বলেন, ছাত্রশিবির যদি এই ন্যক্কারজনক মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বয়ানকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনা থেকে প্রত্যাহারপূর্বক জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি ছাত্রশিবিরের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলবে।