ঢাকা 11:17 pm, Thursday, 17 July 2025

বাংলাদেশে সামরিক উপস্থিতির কথা ভাবছে চীন, মার্কিন সতর্কতা

  • Reporter Name
  • Update Time : 06:20:22 pm, Sunday, 25 May 2025
  • 43 Time View

ছবি-সংগৃহিত।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও মিয়ানমারসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সামরিক উপস্থিতির কথা বিবেচনা করছে চীন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন দাবিই করেছে আমেরিকা। মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ) কর্তৃক প্রকাশিত ‘বার্ষিক হুমকি মূল্যায়ন’ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। তবে এসব দেশে চীন কী ধরনের সামরিক উপস্থিতি চাইছে, সে ব্যাপারে প্রতিবেদনে কোনো উল্লেখ নেই। এ নিয়ে চীনের পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের হুমকি নিয়ে প্রতি বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ)। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের প্রতিবেদন। ‘২০২৫ ওয়ার্ল্ডওয়াইড থ্রেট এসেসমেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়া অংশে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে বিভিন্ন হুমকির কথা বলা হলেও বাংলাদেশের কোনো উল্লেখ নেই। তবে প্রতিবেদনের চীন অংশে যেসব হুমকির কথা বলা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী মিয়ানমারও রয়েছে।

চীনের ব্যাপারে সতর্ক করে মার্কিন এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পূর্ব এশিয়ায় প্রধান শক্তিধর দেশ হওয়ার কৌশলগত লক্ষ্য বজায় রেখেছে চীন। তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ড চীনের সঙ্গে একীভূত করা, চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন ও স্থিতিস্থাপকতাকে এগিয়ে নেওয়া এবং মধ্য শতাব্দীর মধ্যে প্রযুক্তিগতভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দেশটি বিশ্ব নেতৃত্বের জন্য আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জও জানাচ্ছে।’

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘কূটনৈতিক, তথ্যগত, সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমেরিকা ও তার মিত্রদের মোকাবিলা করার জন্য চীন তার বৈশ্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইন্দো-প্যাসিফিক ও তার আশপাশের অঞ্চলে আমেরিকা ও তার মিত্রদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। এই প্রতিযোগিতায় চীনকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করতে তিনি নানা উদ্যোগ নিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন সামরিক জোট ও তার নিরাপত্তা অংশীদারত্বের জন্য সমর্থনকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।’

আমেরিকাকে টেক্কা দেওয়ার জন্য চীন কোন কোন অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতির কার্যক্রম শুরু করেছে এবং কোন দেশগুলোতে শুরু করার চিন্তা করছে, তা মার্কিন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনের চীন অংশের ‘গ্লোবাল মিলিটারি অপারেশনস’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘চীনে থেকেই টানা লম্বা সময় কার্যক্রম চালানোর জন্য পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) বা গণমুক্তি বাহিনীর ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করছে দেশটি। এ ছাড়া আরও শক্তিশালী বিদেশি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছে চীন। এই বাহিনীর সেনাদের আরও বেশি দূরত্বে মোতায়েন বজায় রাখার জন্য অবকাঠামো তৈরি করছে। এই প্রচেষ্টা মার্কিন বৈশ্বিক কার্যক্রম কিংবা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চীন সম্ভবত বার্মা (মিয়ানমার), থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কিউবা, কেনিয়া, গিনি, সেশেলস, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলা, নাইজেরিয়া, নামিবিয়া, মোজাম্বিক, গ্যাবন, বাংলাদেশ, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও তাজিকিস্তানে পিএলএ–এর সামরিক উপস্থিতির কথাও বিবেচনা করছে।’

গত ৫ এপ্রিল কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও চীনের পিএলএর একটি প্রতিনিধিদল কম্বোডিয়ার রিম নৌ ঘাঁটিতে যৌথ লজিস্টিকস এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ‘চীনের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, কেন্দ্রটি সন্ত্রাসবাদ দমন, দুর্যোগ প্রতিরোধ, মানবিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণের মতো ক্ষেত্রে যৌথ অভিযান কার্যক্রমকে সহযোগিতা করবে।’

চীনের এ ধরনের কার্যক্রম কেমন হতে পারে, এ নিয়েও প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়। মার্কিন এই প্রতিবেদন বলছে, ‘একটি মিশ্র ব্যবস্থায় চীন এসব কার্যক্রম চালায়। এতে গ্যারিসন বাহিনী (নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থানরত সেনা) ও ঘাঁটি রাখা হয়। এ ছাড়া যেসব দেশে এসব কার্যক্রম চালানো হয়, সেসব দেশের বাহিনীও যুক্ত হয়, সুবিধা পায়। এর বাইরে বাণিজ্যিক অবকাঠামোও থাকে এতে। গত বছর তানজানিয়ায় এমনই করেছে চীন।’

বৈশ্বিক হুমকি নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘গত বছর তানজানিয়ায় একটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত মহড়া পরিচালনা করে পিএলএ, যা আফ্রিকায় চীনের সর্ববৃহৎ সামরিক মহড়া। এই মহড়ায় সমুদ্র ও আকাশপথে ১ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয় এই বাহিনী।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

বাংলাদেশে সামরিক উপস্থিতির কথা ভাবছে চীন, মার্কিন সতর্কতা

Update Time : 06:20:22 pm, Sunday, 25 May 2025

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও মিয়ানমারসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সামরিক উপস্থিতির কথা বিবেচনা করছে চীন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন দাবিই করেছে আমেরিকা। মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ) কর্তৃক প্রকাশিত ‘বার্ষিক হুমকি মূল্যায়ন’ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। তবে এসব দেশে চীন কী ধরনের সামরিক উপস্থিতি চাইছে, সে ব্যাপারে প্রতিবেদনে কোনো উল্লেখ নেই। এ নিয়ে চীনের পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের হুমকি নিয়ে প্রতি বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ)। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের প্রতিবেদন। ‘২০২৫ ওয়ার্ল্ডওয়াইড থ্রেট এসেসমেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়া অংশে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে বিভিন্ন হুমকির কথা বলা হলেও বাংলাদেশের কোনো উল্লেখ নেই। তবে প্রতিবেদনের চীন অংশে যেসব হুমকির কথা বলা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী মিয়ানমারও রয়েছে।

চীনের ব্যাপারে সতর্ক করে মার্কিন এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পূর্ব এশিয়ায় প্রধান শক্তিধর দেশ হওয়ার কৌশলগত লক্ষ্য বজায় রেখেছে চীন। তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ড চীনের সঙ্গে একীভূত করা, চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন ও স্থিতিস্থাপকতাকে এগিয়ে নেওয়া এবং মধ্য শতাব্দীর মধ্যে প্রযুক্তিগতভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দেশটি বিশ্ব নেতৃত্বের জন্য আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জও জানাচ্ছে।’

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘কূটনৈতিক, তথ্যগত, সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমেরিকা ও তার মিত্রদের মোকাবিলা করার জন্য চীন তার বৈশ্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইন্দো-প্যাসিফিক ও তার আশপাশের অঞ্চলে আমেরিকা ও তার মিত্রদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। এই প্রতিযোগিতায় চীনকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করতে তিনি নানা উদ্যোগ নিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন সামরিক জোট ও তার নিরাপত্তা অংশীদারত্বের জন্য সমর্থনকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।’

আমেরিকাকে টেক্কা দেওয়ার জন্য চীন কোন কোন অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতির কার্যক্রম শুরু করেছে এবং কোন দেশগুলোতে শুরু করার চিন্তা করছে, তা মার্কিন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনের চীন অংশের ‘গ্লোবাল মিলিটারি অপারেশনস’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘চীনে থেকেই টানা লম্বা সময় কার্যক্রম চালানোর জন্য পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) বা গণমুক্তি বাহিনীর ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করছে দেশটি। এ ছাড়া আরও শক্তিশালী বিদেশি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছে চীন। এই বাহিনীর সেনাদের আরও বেশি দূরত্বে মোতায়েন বজায় রাখার জন্য অবকাঠামো তৈরি করছে। এই প্রচেষ্টা মার্কিন বৈশ্বিক কার্যক্রম কিংবা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চীন সম্ভবত বার্মা (মিয়ানমার), থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কিউবা, কেনিয়া, গিনি, সেশেলস, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলা, নাইজেরিয়া, নামিবিয়া, মোজাম্বিক, গ্যাবন, বাংলাদেশ, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও তাজিকিস্তানে পিএলএ–এর সামরিক উপস্থিতির কথাও বিবেচনা করছে।’

গত ৫ এপ্রিল কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও চীনের পিএলএর একটি প্রতিনিধিদল কম্বোডিয়ার রিম নৌ ঘাঁটিতে যৌথ লজিস্টিকস এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ‘চীনের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, কেন্দ্রটি সন্ত্রাসবাদ দমন, দুর্যোগ প্রতিরোধ, মানবিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণের মতো ক্ষেত্রে যৌথ অভিযান কার্যক্রমকে সহযোগিতা করবে।’

চীনের এ ধরনের কার্যক্রম কেমন হতে পারে, এ নিয়েও প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়। মার্কিন এই প্রতিবেদন বলছে, ‘একটি মিশ্র ব্যবস্থায় চীন এসব কার্যক্রম চালায়। এতে গ্যারিসন বাহিনী (নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থানরত সেনা) ও ঘাঁটি রাখা হয়। এ ছাড়া যেসব দেশে এসব কার্যক্রম চালানো হয়, সেসব দেশের বাহিনীও যুক্ত হয়, সুবিধা পায়। এর বাইরে বাণিজ্যিক অবকাঠামোও থাকে এতে। গত বছর তানজানিয়ায় এমনই করেছে চীন।’

বৈশ্বিক হুমকি নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘গত বছর তানজানিয়ায় একটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত মহড়া পরিচালনা করে পিএলএ, যা আফ্রিকায় চীনের সর্ববৃহৎ সামরিক মহড়া। এই মহড়ায় সমুদ্র ও আকাশপথে ১ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয় এই বাহিনী।’