ঢাকা ১১:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আজ হাজীগঞ্জ পাক হানাদার মুক্ত দিবস

ছবি-ত্রিনদী

১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর হাজীগঞ্জ পাক হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত হয়েছিল। এদিনে সকাল ৮টায় হাজীগঞ্জ বাজারস্থ হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের সম্মুখে তৎকালীন সাধাণা ঔষধলায়ের সম্মুখে লাল সবুজের পতাকা উত্তোলণ করেন বীরমু্ক্তিযুদ্ধ , ৭১’র তরুণযোদ্ধা হোসেন ইমাম হায়দার।

দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তির সংগ্রামে জেলার মুক্তিকামী জনতা এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে হাজীগঞ্জে কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধের মুখোমুখি হয় মুক্তিযোদ্ধারা। তার মধ্যে অন্যতম ছিলো লাউকরা যুদ্ধ, নাসিরকোটি, হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজার। সেই সময় হাজীগঞ্জে পাকহানাদার বাহিনী অবস্থান করেন টোরাগড়স্থ হামিদিয়া জুট মিলে। সেখান থেকে নৌ ও সড়ক পথে মুক্তিকামী মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন করতো তারা। কথাগুলো যোগ করেন বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজীগঞ্জ উপজেলা কমান্ডের কমান্ডার মো. আনোয়ারউল্যাহ পাটোয়ারি।

তিনি বলেন, লাউকরা ছাড়াও হাজীগঞ্জে আরো কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে এর মধ্যে রঘুনাথপুর, ফুলছোঁয়া, রাজারগাঁও, বলাখাল অন্যতম। এসব যুদ্ধে কয়েকজন শহীদ হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ আ. মতিন। যার মরদেহ পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকারর নিয়ে গিয়েছিলো। তাকে নৃসংশভাবে হত্যা করেছিলো। কয়েকজন বীর শহীদদের মৃতদেহ উদ্ধার করে নাসিরকোটে কবর দেয়া হয়েছে।

৭ এপ্রিল চাঁদপুরে পাক হানাদার বাহিনী দুটি প্লেন থেকে সেলিংয়ের মাধ্যমে প্রথম আক্রমণের সূচনা করে। প্রথম দিনেই হামলায় শহরের বাণিজ্যিক এলাকা পুরান বাজারের এক নারী পথচারী নিহত হন। পর দিন বিকেলে প্রায় ৫ শতাধিক পাকসেনার একটি বহর চাঁদপুর প্রবেশ করে।

শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর সরকারি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়টি অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে পাকিস্তানি সেনারা। আর পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসটি নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই স্কুলের মাঠ থেকে প্রতিদিনের মতো লতুফা বেগম নামে এক বৃদ্ধা গরু-ছাগল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। এ সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা রাতের আহার জোগাড় করার জন্য প্রথম অপারেশন হিসেবে ওই বৃদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করে এবং বৃদ্ধার একটি গরু ও একটি ছাগল নিয়ে যায়।

এপ্রিল থেকে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের চলে দফায় দফায় গোলাগুলি। পরে গঠন করা হয় শান্তিবাহিনী। তারপর নতুন কায়দায় শান্তি বাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় চালাতে থাকে বর্বর অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ। ৩৬ ঘণ্টা যুদ্ধের পর পালিয়ে যায় তারা।

এভাবে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের দোসররা কত লোককে হত্যা করেছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। চাঁদপুর জেলায় (তৎকালীন মহকুমা) সর্বশেষ যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর লাকসাম ও মুদাফ্ফরগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পর। যৌথ বাহিনী হাজীগঞ্জ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর আসতে থাকলে মুক্তিসেনারা হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়।

ভারতীয় গার্ডস রেজিমেন্টের নেতৃত্বে ৩১১তম মাউন্টেন ব্রিগেড ও ইস্টার্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ আক্রমণ চালায়। দিশা না পেয়ে পাকিস্তান ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল রহিম খানের নেতৃত্বে দুটি জাহাজে করে নৌ-পথে ঢাকার উদ্দেশে চাঁদপুর থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় মুক্তি বাহিনী, মিত্র বাহিনীর ট্যাংক ও প্লেন আক্রমণে চির কবর রচনা হয় নদীতে।

চাঁদপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে হাজীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সকাল ১০ টায় আলোচনাসভা ও স্মৃতিচারণ। শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠান

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

হাজীগঞ্জ মুক্ত দিবসের প্রাত্যুষে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে র‌্যালি

আজ হাজীগঞ্জ পাক হানাদার মুক্ত দিবস

Update Time : ০৮:৪২:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর হাজীগঞ্জ পাক হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত হয়েছিল। এদিনে সকাল ৮টায় হাজীগঞ্জ বাজারস্থ হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের সম্মুখে তৎকালীন সাধাণা ঔষধলায়ের সম্মুখে লাল সবুজের পতাকা উত্তোলণ করেন বীরমু্ক্তিযুদ্ধ , ৭১’র তরুণযোদ্ধা হোসেন ইমাম হায়দার।

দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তির সংগ্রামে জেলার মুক্তিকামী জনতা এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে হাজীগঞ্জে কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধের মুখোমুখি হয় মুক্তিযোদ্ধারা। তার মধ্যে অন্যতম ছিলো লাউকরা যুদ্ধ, নাসিরকোটি, হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজার। সেই সময় হাজীগঞ্জে পাকহানাদার বাহিনী অবস্থান করেন টোরাগড়স্থ হামিদিয়া জুট মিলে। সেখান থেকে নৌ ও সড়ক পথে মুক্তিকামী মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন করতো তারা। কথাগুলো যোগ করেন বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজীগঞ্জ উপজেলা কমান্ডের কমান্ডার মো. আনোয়ারউল্যাহ পাটোয়ারি।

তিনি বলেন, লাউকরা ছাড়াও হাজীগঞ্জে আরো কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে এর মধ্যে রঘুনাথপুর, ফুলছোঁয়া, রাজারগাঁও, বলাখাল অন্যতম। এসব যুদ্ধে কয়েকজন শহীদ হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ আ. মতিন। যার মরদেহ পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকারর নিয়ে গিয়েছিলো। তাকে নৃসংশভাবে হত্যা করেছিলো। কয়েকজন বীর শহীদদের মৃতদেহ উদ্ধার করে নাসিরকোটে কবর দেয়া হয়েছে।

৭ এপ্রিল চাঁদপুরে পাক হানাদার বাহিনী দুটি প্লেন থেকে সেলিংয়ের মাধ্যমে প্রথম আক্রমণের সূচনা করে। প্রথম দিনেই হামলায় শহরের বাণিজ্যিক এলাকা পুরান বাজারের এক নারী পথচারী নিহত হন। পর দিন বিকেলে প্রায় ৫ শতাধিক পাকসেনার একটি বহর চাঁদপুর প্রবেশ করে।

শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর সরকারি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়টি অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে পাকিস্তানি সেনারা। আর পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসটি নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই স্কুলের মাঠ থেকে প্রতিদিনের মতো লতুফা বেগম নামে এক বৃদ্ধা গরু-ছাগল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। এ সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা রাতের আহার জোগাড় করার জন্য প্রথম অপারেশন হিসেবে ওই বৃদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করে এবং বৃদ্ধার একটি গরু ও একটি ছাগল নিয়ে যায়।

এপ্রিল থেকে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের চলে দফায় দফায় গোলাগুলি। পরে গঠন করা হয় শান্তিবাহিনী। তারপর নতুন কায়দায় শান্তি বাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় চালাতে থাকে বর্বর অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ। ৩৬ ঘণ্টা যুদ্ধের পর পালিয়ে যায় তারা।

এভাবে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের দোসররা কত লোককে হত্যা করেছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। চাঁদপুর জেলায় (তৎকালীন মহকুমা) সর্বশেষ যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর লাকসাম ও মুদাফ্ফরগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পর। যৌথ বাহিনী হাজীগঞ্জ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর আসতে থাকলে মুক্তিসেনারা হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়।

ভারতীয় গার্ডস রেজিমেন্টের নেতৃত্বে ৩১১তম মাউন্টেন ব্রিগেড ও ইস্টার্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ আক্রমণ চালায়। দিশা না পেয়ে পাকিস্তান ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল রহিম খানের নেতৃত্বে দুটি জাহাজে করে নৌ-পথে ঢাকার উদ্দেশে চাঁদপুর থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় মুক্তি বাহিনী, মিত্র বাহিনীর ট্যাংক ও প্লেন আক্রমণে চির কবর রচনা হয় নদীতে।

চাঁদপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে হাজীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সকাল ১০ টায় আলোচনাসভা ও স্মৃতিচারণ। শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠান