পারিবারিক কলহের জেরে নিজ গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া দুই সন্তানের জননী মিতু বেগম (১৮) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচ দিন পর মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকালে মারা গেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের উত্তর হাসা মিজি বাড়িতে। মৃত মিতু ওই বাড়ির আহসান উল্লাহর ছেলে রাকিবের স্ত্রী।
ঘটনার পর মিতুর মা পারভীন বেগম বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, যৌতুক হিসেবে দুই লাখ টাকা দাবি করেন রাকিব ও তার মা হাসিনা বেগম। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা মিতুকে মারধর করে এবং হত্যার উদ্দেশ্যে কেরোসিন ঢেলে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন বিকেলে স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মিতু নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকার বার্ন ইউনিটে পাঠান। সেখানে পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শেষ পর্যন্ত তিনি মারা যান।
ঘটনার পর মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকরা রাকিবুলের বাড়িতে গেলে ঘরে তালা অবস্থায় পাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান, মিতুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই রাকিবুল ও তার পরিবারের সদস্যরা গা ডাকা দিয়েছেন।
মিতুর বাবার বাড়ি চান্দ্রা ইউনিয়নের মধ্য মদনা গাজী বাড়িতে গেলে তার নানু, বোন রাবেয়া ও চাচা জানান, প্রায় তিন বছর আগে পারিবারিকভাবে রাকিবুলের সঙ্গে মিতুর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য মিতুর ওপর নির্যাতন চলছিল। একপর্যায়ে রাকিবুলকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেওয়া হয়, যা পরে সে বিক্রি করে দেয়। এরপরও সে বাবার বাড়ি থেকে আরও টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে।
তারা আরও জানান, সম্প্রতি রাকিবুল শ্বশুরের কাছে দুই লাখ টাকা বা একটি অটোরিকশা দাবি করে। তা না দেওয়ায় গত ১৬ অক্টোবর বিকেলে সে মিতুকে বেদম মারধর করে এবং বলে, ‘তুই মরে যা, এই নে কেরোসিন, তুই নিজেই আগুন দিয়ে মর।’ এরপর মিতু নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় শাশুড়ি হাসিনা বেগম সবকিছু দেখলেও বাধা দেননি।
মিতু মৃত্যুর আগে তার পরিবারের কাছে জানান, স্বামী রাকিব তাকে মারধর করে ঘরে আটকে রাখে। এরপর দোকান থেকে কেরোসিন এনে দিয়ে বলে, ‘তুই ফাঁসি না দিয়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে মর।’ এরপর রাকিব নিজেই তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজ তার পরিবারের হাতে রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম জানান, অগ্নিদগ্ধ মিতু ঢাকার বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।