ঢাকা ০২:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাজীগঞ্জে কৃষি জমির মাটি বিক্রি, ফসলের উৎপাদন হ্রাসসহ কমে আসছে কৃষি জমি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৫৬:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৬০ Time View

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ :

হাজীগঞ্জে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) প্রকল্পাধীন মাঠের কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায় এবং জলাশয়সহ ভরাট হচ্ছে খানাখন্দ। এতে করে দিন দিন কমছে ফসলের উৎপাদন, বেকার হচ্ছে কৃষক, পরিবেশ হচ্ছে দূষিত। বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া মাঠে ভ্যেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমির টপ সয়েল (উর্বর মাটি) কেটে পিকআপ করে নিতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া কৃষি মাঠ ও কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের সিদলা কৃর্ষি মাঠটির পাশাপাশি অবস্থান। ফুলছোঁয়া মাঠে বিএডিসির কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ‘সোলার এলএলপি সেচ স্কীম’ নামক ৩টি সেচ প্রকল্প রয়েছে। ওই মাঠের একটি জমি থেকে গত এক সপ্তাহ ধরে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। আর এসব মাটি ব্যবহৃত হচ্ছে ইটভাটাসহ জলাশয় ও খানাখন্দ ভরাটে।

এছাড়াও একই মাঠে কয়েক মাস পূর্বে একটি কৃষি জমির মাটি কেটে একাংশ ভরাট করে ভিটে ও পুকুর করা হয়েছে এবং বছর খানেক পূর্বে প্রায় ৫০ শতাংশের একটি জমির চারপাশ বাঁধ দিয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে দিনের পর দিন বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়েছে। আর উত্তোলনকৃত বালু দিয়ে আশপাশের এলাকার কয়েকটি জলাশয় ও খানাখন্দ ভরাট করা হয়েছে। এতে ফসলের উৎপাদন হ্রাসসহ কমে আসছে কৃষি জমি।

কৃষি জমি বিনষ্টের পাশাপাশি মাটি পরিবহণে ভ্যেকু ও পিকআপ ব্যবহারে ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আইন অমান্য করে এমনি কর্মকাণ্ড চলছে হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। সচেতনমহল মনে করেন, দ্রুত এই মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ফসল উৎপাদনে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাই, প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করে তারা বলেন, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

কৃষিবিদরা বলছেন, আইন অমান্য করে আবাদি জমির উপরিভাগের টপসয়েল (উর্বর মাটি) বিক্রি হওয়ায় জমির খনিজ ও জৈব উপাদান বিশেষ করে হিউমাস (জৈব কণা) সমৃদ্ধ মাটির এ অংশ তুলে ফেলার কারণে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। এতে ওইসব জমিতে ফসলের কাক্ষিত উৎপাদন হবে না। এছাড়াও অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার ফলে কমে আসছে ফসলি জমি। তাই, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এ দিকে ফুলছোঁয়া মাঠের কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, বাকিলার নজরুল ইসলাম ও ফয়সালসহ কয়েকজন ফুলছোঁয়া ও সিদলা মাঠের মাটি ও বালু ক্রয়-বিক্রয় এবং ভ্যেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা ও অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি ও বালুর উত্তোলনের ব্যবসা করে থাকেন।

এ বিষয়ে ফয়সালের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে ভ্যেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি সংবাদকর্মীদের জানান, আপনারা নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলেন। পরে নজরুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায়, তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

ফুলছোঁয়া স্ক্রীমের সভাপতি জহির ক্বারী সংবাদকর্মীদের বলেন, যারা মাটি বিক্রি করে এবং ভ্যেকু ও ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমার দোষ পড়বে। তাই, আমি কিছু বলিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মামুন স্যারকে দুইবার ফোন দিয়েছি। তিনি ফোন ধরেননি, ব্যাকও করেন নি।

এ ব্যাপারে বিএডিসির হাজীগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সেচ) মো. মামুন রশিদকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, মাটিকাটা বন্ধে ইউএনও মহোদয়কে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কচুয়ায় ফাউন্ডেশন ফর ডাঃ আব্দুল হাই শিক্ষাবৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

হাজীগঞ্জে কৃষি জমির মাটি বিক্রি, ফসলের উৎপাদন হ্রাসসহ কমে আসছে কৃষি জমি

Update Time : ০৮:৫৬:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ :

হাজীগঞ্জে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) প্রকল্পাধীন মাঠের কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায় এবং জলাশয়সহ ভরাট হচ্ছে খানাখন্দ। এতে করে দিন দিন কমছে ফসলের উৎপাদন, বেকার হচ্ছে কৃষক, পরিবেশ হচ্ছে দূষিত। বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া মাঠে ভ্যেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমির টপ সয়েল (উর্বর মাটি) কেটে পিকআপ করে নিতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া কৃষি মাঠ ও কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের সিদলা কৃর্ষি মাঠটির পাশাপাশি অবস্থান। ফুলছোঁয়া মাঠে বিএডিসির কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ‘সোলার এলএলপি সেচ স্কীম’ নামক ৩টি সেচ প্রকল্প রয়েছে। ওই মাঠের একটি জমি থেকে গত এক সপ্তাহ ধরে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। আর এসব মাটি ব্যবহৃত হচ্ছে ইটভাটাসহ জলাশয় ও খানাখন্দ ভরাটে।

এছাড়াও একই মাঠে কয়েক মাস পূর্বে একটি কৃষি জমির মাটি কেটে একাংশ ভরাট করে ভিটে ও পুকুর করা হয়েছে এবং বছর খানেক পূর্বে প্রায় ৫০ শতাংশের একটি জমির চারপাশ বাঁধ দিয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে দিনের পর দিন বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়েছে। আর উত্তোলনকৃত বালু দিয়ে আশপাশের এলাকার কয়েকটি জলাশয় ও খানাখন্দ ভরাট করা হয়েছে। এতে ফসলের উৎপাদন হ্রাসসহ কমে আসছে কৃষি জমি।

কৃষি জমি বিনষ্টের পাশাপাশি মাটি পরিবহণে ভ্যেকু ও পিকআপ ব্যবহারে ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আইন অমান্য করে এমনি কর্মকাণ্ড চলছে হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। সচেতনমহল মনে করেন, দ্রুত এই মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ফসল উৎপাদনে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাই, প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করে তারা বলেন, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

কৃষিবিদরা বলছেন, আইন অমান্য করে আবাদি জমির উপরিভাগের টপসয়েল (উর্বর মাটি) বিক্রি হওয়ায় জমির খনিজ ও জৈব উপাদান বিশেষ করে হিউমাস (জৈব কণা) সমৃদ্ধ মাটির এ অংশ তুলে ফেলার কারণে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। এতে ওইসব জমিতে ফসলের কাক্ষিত উৎপাদন হবে না। এছাড়াও অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার ফলে কমে আসছে ফসলি জমি। তাই, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এ দিকে ফুলছোঁয়া মাঠের কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, বাকিলার নজরুল ইসলাম ও ফয়সালসহ কয়েকজন ফুলছোঁয়া ও সিদলা মাঠের মাটি ও বালু ক্রয়-বিক্রয় এবং ভ্যেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা ও অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি ও বালুর উত্তোলনের ব্যবসা করে থাকেন।

এ বিষয়ে ফয়সালের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে ভ্যেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি সংবাদকর্মীদের জানান, আপনারা নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলেন। পরে নজরুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায়, তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

ফুলছোঁয়া স্ক্রীমের সভাপতি জহির ক্বারী সংবাদকর্মীদের বলেন, যারা মাটি বিক্রি করে এবং ভ্যেকু ও ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমার দোষ পড়বে। তাই, আমি কিছু বলিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মামুন স্যারকে দুইবার ফোন দিয়েছি। তিনি ফোন ধরেননি, ব্যাকও করেন নি।

এ ব্যাপারে বিএডিসির হাজীগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সেচ) মো. মামুন রশিদকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, মাটিকাটা বন্ধে ইউএনও মহোদয়কে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি।