ঢাকা ০৬:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আবারও রাখাইনে রাতভর গোলাগুলি ও বিস্ফোরণ, সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:৫৪:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ মার্চ ২০২৪
  • ৬২ Time View

অনলাইন নিউজ ডেস্ক :

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত সোমবার রাতভর গোলাগুলি, গ্রেনেড, বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মংডু শহরের উত্তরে কুমিরখালী, নাকফুরা, বলিবাজার, নাইচাডং, কোয়াচিদং, শিলখালী, কেয়ারিপ্রাং, পেরাংপ্রু এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি, গ্রেনেড বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটে।

এর মধ্যে বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী সীমান্তের ওপারে বিমান উড়তে দেখা গেছে। এ সময় শক্তিশালী বিস্ফোরণে টেকনাফ সীমান্ত কেঁপে ওঠে। আতঙ্কে টেকনাফ পৌর শহর, সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বাসিন্দাদের নির্ঘুম রাত কাটে।

গতকাল বিকেল চারটায় টেকনাফের হোয়াইক্যং খারাংখালী সীমান্ত থেকে ওপারে বিমান ও হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিমান হামলা শুরু করেছে।

টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, আরাকান আর্মিকে লক্ষ্য করে কয়েক দিন ধরে মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে সরকারি বাহিনী। পাল্টা গুলি ছুড়ে জবাব দিচ্ছে আরাকান আর্মি। দুই পক্ষের তুমুল লড়াই এবং শক্তিশালী গ্রেনেড, বোমা ও মর্টার শেলের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে মংডুর দক্ষিণাংশের যোগাযোগব্যবস্থা। স্থলপথে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর টহল সীমিত হয়ে পড়েছে। এ সুযোগে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নিতে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু খাদ্য ও জ্বালানিসংকট দুই পক্ষকে ভোগাচ্ছে।

গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলার জাদিমোরা, চৌধুরীপাড়া, বাজারপাড়া, ওয়াব্রাং, মৌলভীবাজার ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কানজরপাড়া, খারাংখালী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে,লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক। এ সময় নাফ নদীর ওপারে বিকট শব্দে বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে টানা এক ঘণ্টা বিমান ও হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যায়।

খারাংখালীর জেলে জালাল আহমদ (৫৫) বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলি ও বোমা হামলার শুরুতেই প্রায় ২৫ দিন ধরে মাছ ধরতে পারছি না। তাই কোনো রকমে টমেটো ও মরিচভর্তা দিয়ে এক বেলা খাবার খাচ্ছি। শুধু আমি নই, প্রতিদিন এখানে প্রচুর লোকজন এসে বসে থাকেন। তবে আমাদের নিরাপত্তার জন্য বিজিবির সদস্যরা মাছ শিকারে যেতে দিচ্ছেন না।’

টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ওপারের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এপারের টেকনাফ পৌর শহর, দমদমিয়া, জাদিমোরা, হ্নীলা, উনচিপ্রাং, হোয়াইক্যং এলাকার মাটি কেঁপে কেঁপে উঠেছে। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটান অনেকে।

পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ওপারের গোলাগুলি–আতঙ্কে তাঁর ইউনিয়নের অন্তত আট হাজার মানুষ নাফ নদীর তীরের লবণের মাঠ, চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের জমিতে যেতে পারছেন না। গ্রামগুলো মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় যেকোনো মুহূর্তে ওপারের গুলি এপারের ঘরবাড়িতে আঘাত হানতে পারে।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে নাইক্ষ্যংছড়ির জলপাইতলীতে একজন নারীসহ দুজন নিহত হন। গোলাগুলিতে আহত হন আরও ৯ জন।

তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত স্বাভাবিক ছিল। সেখানকার লোকজন ছয় দিন ধরে ওপারের গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ শুনতে পাচ্ছেন না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

মতলবে জমি সংক্রান্ত বিরোধে, প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত ২, থানায় অভিযোগ 

আবারও রাখাইনে রাতভর গোলাগুলি ও বিস্ফোরণ, সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক

Update Time : ১১:৫৪:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ মার্চ ২০২৪

অনলাইন নিউজ ডেস্ক :

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত সোমবার রাতভর গোলাগুলি, গ্রেনেড, বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মংডু শহরের উত্তরে কুমিরখালী, নাকফুরা, বলিবাজার, নাইচাডং, কোয়াচিদং, শিলখালী, কেয়ারিপ্রাং, পেরাংপ্রু এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি, গ্রেনেড বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটে।

এর মধ্যে বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী সীমান্তের ওপারে বিমান উড়তে দেখা গেছে। এ সময় শক্তিশালী বিস্ফোরণে টেকনাফ সীমান্ত কেঁপে ওঠে। আতঙ্কে টেকনাফ পৌর শহর, সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বাসিন্দাদের নির্ঘুম রাত কাটে।

গতকাল বিকেল চারটায় টেকনাফের হোয়াইক্যং খারাংখালী সীমান্ত থেকে ওপারে বিমান ও হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিমান হামলা শুরু করেছে।

টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, আরাকান আর্মিকে লক্ষ্য করে কয়েক দিন ধরে মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে সরকারি বাহিনী। পাল্টা গুলি ছুড়ে জবাব দিচ্ছে আরাকান আর্মি। দুই পক্ষের তুমুল লড়াই এবং শক্তিশালী গ্রেনেড, বোমা ও মর্টার শেলের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে মংডুর দক্ষিণাংশের যোগাযোগব্যবস্থা। স্থলপথে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর টহল সীমিত হয়ে পড়েছে। এ সুযোগে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নিতে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু খাদ্য ও জ্বালানিসংকট দুই পক্ষকে ভোগাচ্ছে।

গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলার জাদিমোরা, চৌধুরীপাড়া, বাজারপাড়া, ওয়াব্রাং, মৌলভীবাজার ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কানজরপাড়া, খারাংখালী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে,লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক। এ সময় নাফ নদীর ওপারে বিকট শব্দে বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে টানা এক ঘণ্টা বিমান ও হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যায়।

খারাংখালীর জেলে জালাল আহমদ (৫৫) বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলি ও বোমা হামলার শুরুতেই প্রায় ২৫ দিন ধরে মাছ ধরতে পারছি না। তাই কোনো রকমে টমেটো ও মরিচভর্তা দিয়ে এক বেলা খাবার খাচ্ছি। শুধু আমি নই, প্রতিদিন এখানে প্রচুর লোকজন এসে বসে থাকেন। তবে আমাদের নিরাপত্তার জন্য বিজিবির সদস্যরা মাছ শিকারে যেতে দিচ্ছেন না।’

টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ওপারের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এপারের টেকনাফ পৌর শহর, দমদমিয়া, জাদিমোরা, হ্নীলা, উনচিপ্রাং, হোয়াইক্যং এলাকার মাটি কেঁপে কেঁপে উঠেছে। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটান অনেকে।

পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ওপারের গোলাগুলি–আতঙ্কে তাঁর ইউনিয়নের অন্তত আট হাজার মানুষ নাফ নদীর তীরের লবণের মাঠ, চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের জমিতে যেতে পারছেন না। গ্রামগুলো মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় যেকোনো মুহূর্তে ওপারের গুলি এপারের ঘরবাড়িতে আঘাত হানতে পারে।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে নাইক্ষ্যংছড়ির জলপাইতলীতে একজন নারীসহ দুজন নিহত হন। গোলাগুলিতে আহত হন আরও ৯ জন।

তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত স্বাভাবিক ছিল। সেখানকার লোকজন ছয় দিন ধরে ওপারের গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ শুনতে পাচ্ছেন না।