ঢাকা ০১:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মতলব উত্তরে দুর্বৃত্তদের ছোড়া অ্যাসিডে দগ্ধ হওয়ার ১০ মাস পর এক গৃহবধূর মৃত্যু

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:১৪:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৫৯ Time View

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া অ্যাসিডে দগ্ধ হওয়ার ১০ মাস ৫ দিন পর এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার বিকেলে তিনি মারা যান। মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল হক মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মারা যাওয়া মিলি আক্তার (২০) মতলব উত্তরের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম সুজাতপুর গ্রামের আয়ুব আলীর মেয়ে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সে সময় তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সন্তানের জন্ম দেন।

মিলি আক্তারের মা রাশেদা বেগম বলেন, মিলিকে পার্শ্ববর্তী মমরুজকান্দি গ্রামের সফিকুল ইসলাম ওরফে মানিক নামের এক তরুণ প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন। পরে মিলির অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে সফিকুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এদিকে বিয়ের পর স্বামী বিদেশ থাকায় মিলি বাবার বাড়িতে বসবাস করতেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় সফিকুল ইসলাম তাঁর আরেক বন্ধু মমরুজকান্দি গ্রামের জাহিদকে সঙ্গে নিয়ে মিলিকে অ্যাসিড নিক্ষেপ করেন। এতে মিলির মুখ, বুক, পিঠ ও হাত ঝলসে যায়। এ সময় মিলির মা রাশেদা বেগমেরও (৫৫) হাত ও ঊরু ঝলসে যায়।

রাশেদা বেগম আরও বলেন, পরে তাঁদের মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে মিলিকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে মিলিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। ১০ মাস ৫ দিন পর সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় মিলির বাবা আইয়ুব আলী বাদী হয়ে সফিকুল ইসলাম ও জাহিদকে আসামি করে মতলব উত্তর থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান বলেন, অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী শফিকুল ইসলাম এবং তাঁর সহযোগী জাহিদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। পরে দুজনই চাঁদপুরের ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেন। মামলার অভিযোগপত্রও আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিলি আক্তারের বাবা আইয়ুব আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘শেষমেশ আমার মেয়েটাকে বাঁচানো গেল না। আমাদের সকলকে ফাঁকি দিয়ে সে পরপারে চলে গেল। তাকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম। অনেক টাকাও খরচ করেছি। কোনো লাভ হলো না। মেয়েকে হারিয়ে আমি এখন সর্বস্বান্ত। আমার সব শেষ হইয়া গেল। যারা তারে অ্যাসিড মারছে তাদের ফাঁসি চাই।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কচুয়া পৌরসভার কোয়া নূর ই মদিনা জামে মসজিদের ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন

মতলব উত্তরে দুর্বৃত্তদের ছোড়া অ্যাসিডে দগ্ধ হওয়ার ১০ মাস পর এক গৃহবধূর মৃত্যু

Update Time : ১১:১৪:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া অ্যাসিডে দগ্ধ হওয়ার ১০ মাস ৫ দিন পর এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার বিকেলে তিনি মারা যান। মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল হক মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মারা যাওয়া মিলি আক্তার (২০) মতলব উত্তরের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম সুজাতপুর গ্রামের আয়ুব আলীর মেয়ে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সে সময় তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সন্তানের জন্ম দেন।

মিলি আক্তারের মা রাশেদা বেগম বলেন, মিলিকে পার্শ্ববর্তী মমরুজকান্দি গ্রামের সফিকুল ইসলাম ওরফে মানিক নামের এক তরুণ প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন। পরে মিলির অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে সফিকুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এদিকে বিয়ের পর স্বামী বিদেশ থাকায় মিলি বাবার বাড়িতে বসবাস করতেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় সফিকুল ইসলাম তাঁর আরেক বন্ধু মমরুজকান্দি গ্রামের জাহিদকে সঙ্গে নিয়ে মিলিকে অ্যাসিড নিক্ষেপ করেন। এতে মিলির মুখ, বুক, পিঠ ও হাত ঝলসে যায়। এ সময় মিলির মা রাশেদা বেগমেরও (৫৫) হাত ও ঊরু ঝলসে যায়।

রাশেদা বেগম আরও বলেন, পরে তাঁদের মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে মিলিকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে মিলিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। ১০ মাস ৫ দিন পর সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় মিলির বাবা আইয়ুব আলী বাদী হয়ে সফিকুল ইসলাম ও জাহিদকে আসামি করে মতলব উত্তর থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান বলেন, অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী শফিকুল ইসলাম এবং তাঁর সহযোগী জাহিদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। পরে দুজনই চাঁদপুরের ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেন। মামলার অভিযোগপত্রও আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিলি আক্তারের বাবা আইয়ুব আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘শেষমেশ আমার মেয়েটাকে বাঁচানো গেল না। আমাদের সকলকে ফাঁকি দিয়ে সে পরপারে চলে গেল। তাকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম। অনেক টাকাও খরচ করেছি। কোনো লাভ হলো না। মেয়েকে হারিয়ে আমি এখন সর্বস্বান্ত। আমার সব শেষ হইয়া গেল। যারা তারে অ্যাসিড মারছে তাদের ফাঁসি চাই।’