ঢাকা 11:33 pm, Saturday, 26 July 2025

দাপ্তরিক অনুমতি ছাড়াই ইউনিয়নের প্রশাসনকি কর্মকর্তার দায়িত্বে ১৩ হিসাব সহকারী

চাঁদপুরের আট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ শূন্য। এসব পদে কোন ধরণের দাপ্তরিক চিঠি ছাড়াই দায়িত্ব পালন করছেন হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ প্রাপ্তরা। মৌখিক অনুমতির মাধ্যমে হিসাব সহকারীরা এখন প্রশাসনিক কর্মকর্তার চেয়ারে। শুধুই তাই নয়, তাদের নামে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংকের যৌথ হিসাব। স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর বলছে-এভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য অবশ্যই দাপ্তরিক চিঠি দিতে হবে।

একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে এসব তথ্য।

স্থানীয় সরকারি বিভাগের দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদ শূন্য হলে এই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কাজ করবেন পাশবর্তী ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-২ শাখা থেকে ৫০৭ স্মারকে সর্বশেষ ২০২০ সালের চিঠিতে বলা হয়েছে হিসাব সহাকরী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা কখনোই ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করতে পারবে না।

এদিকে ২০১৯ সালের ৬৪৫ স্মারকের চিঠিতে হিসাব সহকারীদের কর্মবন্টন সংক্রান্ত বিস্তারিত বলা রয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তার অনপুস্থিতিতে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগপ্রাপ্তরাও কাজ করতে পারবেন। কিন্তু তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনার বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি। একই সাথে ২০২৪ সালের ৪ জুলাই প্রকাশিত গেজেটে ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক হিসাবের সকল আয়-ব্যয় চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। জেলায় ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার ১৩ শূন্য পদে এই ধরণের নিয়ম অনুসরণ না করে মৌখিক অনুমতিতে হিসাব সহকারীরা দায়িত্বসহ ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করছেন।

সরেজিমন জেলার কচুয়া উপজেলার সদর দক্ষিণ ইউনিয়ন ও পাথৈর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখাগেছে হিসাব সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার চেয়ারে বসে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তার নির্দিষ্ট কক্ষ থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে না।

কচুয়া সদর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী নাছির হোসেন সোহেল বলেন, আমরা এই পদে থাকলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের পদোন্নিতর জন্য উচ্চ আদালতে রীট করা হয়েছে। তিনি কেন তার নিজস্ব কক্ষ ব্যবহার না করে অস্থায়ী দায়িত্ব হিসেবে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষ ব্যবহার করছেন এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি রেগে যান। বলেন চেয়ার কোন সমস্যা নয়। তিনিও চেয়ারম্যানসহ তার নিজ নামে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করছেন। ইউনিয়ন পরিষদের সকল উন্নয়ন বরাদ্দ এবং জেনারেল একাউন্টের টাকা এসব হিসাবে জমা হয়।

একই অবস্থা ২নম্বর পাথৈর ইউনিয়ন পরিষদে। সেখানে গিয়ে দেখাগেছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আক্কাছ মোল্লার বাড়িতে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পরিষদের কোন ভবন নেই। এই পরিষদের গত দুই মাসে আগে হিসাব সহকারী হিসেবে যোগ দিয়েছেন মো. আলমগীর হোসেন। তার নামে যৌথ একাউন্ট নম্বরে নাম পরিবর্তন করে হিসাব পরিচালনা করা হচ্ছে।
এই পরিষদের চেয়ারম্যান আক্কাছ মোল্লা বলেন, আমি নিজে চেয়ারম্যান হিসেবে নতুন। এখানে যিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি অন্য ইউয়িনে বদলি হয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে শূন্যপদের কথা জানানো হলে তিনি হিসাব সহকারীকে যোগদান করার জন্য বলেন। তবে তিনি (হিসাব সহকারী) কাজে অতটা অভিজ্ঞ না। পূর্বে প্রশাসনিক কর্মকর্তার সহায়তা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করা হয় হিসাব সহকারী কীভাবে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করছেন এবং তার একাউন্ট পরিচালনার বিষয়ে দাপ্তরিক কোন চিঠি আছে কীনা। চেয়ারম্যান বলেন, কোন চিঠি নেই। ইউএনও মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন। ইউএনও বলেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা অফিস থেকে বলা হয়েছে এভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য। দাপ্তারিক কোন অনুমতির বিষয়ে জানেন না এই চেয়ারম্যানের।

পাশবর্তী হাজীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদ শূন্য হলে আমি ইউএনওর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জেলা প্রশাসক বরার চিঠি দিয়েছি। আপাতত হিসাব সহকারী দায়িত্ব পালন করছেন। উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করতে অব্যশই হিসাব সহকারীর নামে একাউন্টে নাম পরিবর্তন করতে হবে। তবে আমাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে কোন চিঠি দেয়া হয়নি।

এই ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখাগেছে হিসাব সহকারীর নাম মুন্নি আক্তার। তিনি কয়েকমাস পূর্বে এই পরিষদ থেকে বদলি হয়েছেন। নতুন করে আসা হিসাব সহকারী ইউসুফ সরকার রুবেল কাজ করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা চেয়ারে বসে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি নিজের চেয়ার রেখে এই চেয়ারে কেন? তিনি বলেন এমনিতে বসেছি। অথচ ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশ করেই তাকে এই কক্ষে পাওয়াগেছে।

খোঁজ নিয়ে ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, জেলার ৮ উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তার শূন্য পদে হিসাব সহকারীদের কোন ধরণের দাপ্তরিক অনুমতি ছাড়া প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন স্থানীয় সরকারি বিভাগের উপসচিব মো. গোলাম জাকারিয়া।

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন, হিসাব সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন আমি অবগত। তবে তাদেরকে দাপ্তরিক কোন অনমতি দেয়া হয়নি। এই বিষয়ে আপনি স্থানীয় সরকার উপপরিচালকের সাথে কথা বলেন।

কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরী বলেন, হিসাব সহকারী যখন প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন, তখন ব্যাংক একাউন্ট কে পরিচালনা করবে! তাকে দিয়ে করাতে হবে। দাপ্তরিক অনুমতি দেয়া হয়নি বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, এই বিষয়ে বক্তব্য প্রয়োজন হলে জেলার স্থানীয় সরকারি বিভাগে কথা বলেন।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. গোলাম জাকারিয়া বলেন, জেলায় ১৩টি প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কিন্তু হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের লোকজন উচ্চ আদালতে রীট করেন তাদেরকে এই পদে পদোন্নিত দেয়ার জন্য। যার ফলে এই পদে নিয়োগ হয়নি। তাদের রীট উচ্চ আদালত স্থগিত করে রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে শূন্য পদে হিসাব সহকারীদের দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়েছে এবং হিসাব সহকারীদের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকলে তারা দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি বলেন, ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনার বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কোথাও উল্লেখ নেই। এই ১৩ পদে দায়িত্ব পালনের জন্য আমরা কোন দাপ্তরিক চিঠি দেইনি। তবে হিসাব সহকারী হিসেবে বদলির চিঠি দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদ-২ এর কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. নুরে আলম বলেন, কোন ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসনিক কর্মকর্তা না থাকলে পাশবর্তী ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। কিন্তু হিসাব সহকারী থাকলে তিনিই প্রশাসনিক কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে নিয়মিত কাজ সম্পাদন করবেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে দাপ্তরিক চিঠি ও নিয়ম অনুসরণ করে দায়িত্ব দিতে হবে। মৌখিক নয়, শূন্য পদে স্থানীয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়ে দায়িত্ব দিতে পারবেন, তবে দাপ্তরিক চিঠি লাগবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

শহীদ হান্নানের একমাত্র সন্তান বাবার মুখ দেখেনি

দাপ্তরিক অনুমতি ছাড়াই ইউনিয়নের প্রশাসনকি কর্মকর্তার দায়িত্বে ১৩ হিসাব সহকারী

Update Time : 11:13:44 pm, Saturday, 26 July 2025

চাঁদপুরের আট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ শূন্য। এসব পদে কোন ধরণের দাপ্তরিক চিঠি ছাড়াই দায়িত্ব পালন করছেন হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ প্রাপ্তরা। মৌখিক অনুমতির মাধ্যমে হিসাব সহকারীরা এখন প্রশাসনিক কর্মকর্তার চেয়ারে। শুধুই তাই নয়, তাদের নামে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংকের যৌথ হিসাব। স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর বলছে-এভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য অবশ্যই দাপ্তরিক চিঠি দিতে হবে।

একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে এসব তথ্য।

স্থানীয় সরকারি বিভাগের দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদ শূন্য হলে এই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কাজ করবেন পাশবর্তী ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-২ শাখা থেকে ৫০৭ স্মারকে সর্বশেষ ২০২০ সালের চিঠিতে বলা হয়েছে হিসাব সহাকরী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা কখনোই ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করতে পারবে না।

এদিকে ২০১৯ সালের ৬৪৫ স্মারকের চিঠিতে হিসাব সহকারীদের কর্মবন্টন সংক্রান্ত বিস্তারিত বলা রয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তার অনপুস্থিতিতে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগপ্রাপ্তরাও কাজ করতে পারবেন। কিন্তু তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনার বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি। একই সাথে ২০২৪ সালের ৪ জুলাই প্রকাশিত গেজেটে ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক হিসাবের সকল আয়-ব্যয় চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। জেলায় ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার ১৩ শূন্য পদে এই ধরণের নিয়ম অনুসরণ না করে মৌখিক অনুমতিতে হিসাব সহকারীরা দায়িত্বসহ ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করছেন।

সরেজিমন জেলার কচুয়া উপজেলার সদর দক্ষিণ ইউনিয়ন ও পাথৈর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখাগেছে হিসাব সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার চেয়ারে বসে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তার নির্দিষ্ট কক্ষ থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে না।

কচুয়া সদর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী নাছির হোসেন সোহেল বলেন, আমরা এই পদে থাকলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের পদোন্নিতর জন্য উচ্চ আদালতে রীট করা হয়েছে। তিনি কেন তার নিজস্ব কক্ষ ব্যবহার না করে অস্থায়ী দায়িত্ব হিসেবে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষ ব্যবহার করছেন এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি রেগে যান। বলেন চেয়ার কোন সমস্যা নয়। তিনিও চেয়ারম্যানসহ তার নিজ নামে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করছেন। ইউনিয়ন পরিষদের সকল উন্নয়ন বরাদ্দ এবং জেনারেল একাউন্টের টাকা এসব হিসাবে জমা হয়।

একই অবস্থা ২নম্বর পাথৈর ইউনিয়ন পরিষদে। সেখানে গিয়ে দেখাগেছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আক্কাছ মোল্লার বাড়িতে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পরিষদের কোন ভবন নেই। এই পরিষদের গত দুই মাসে আগে হিসাব সহকারী হিসেবে যোগ দিয়েছেন মো. আলমগীর হোসেন। তার নামে যৌথ একাউন্ট নম্বরে নাম পরিবর্তন করে হিসাব পরিচালনা করা হচ্ছে।
এই পরিষদের চেয়ারম্যান আক্কাছ মোল্লা বলেন, আমি নিজে চেয়ারম্যান হিসেবে নতুন। এখানে যিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি অন্য ইউয়িনে বদলি হয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে শূন্যপদের কথা জানানো হলে তিনি হিসাব সহকারীকে যোগদান করার জন্য বলেন। তবে তিনি (হিসাব সহকারী) কাজে অতটা অভিজ্ঞ না। পূর্বে প্রশাসনিক কর্মকর্তার সহায়তা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করা হয় হিসাব সহকারী কীভাবে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করছেন এবং তার একাউন্ট পরিচালনার বিষয়ে দাপ্তরিক কোন চিঠি আছে কীনা। চেয়ারম্যান বলেন, কোন চিঠি নেই। ইউএনও মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন। ইউএনও বলেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা অফিস থেকে বলা হয়েছে এভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য। দাপ্তারিক কোন অনুমতির বিষয়ে জানেন না এই চেয়ারম্যানের।

পাশবর্তী হাজীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদ শূন্য হলে আমি ইউএনওর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জেলা প্রশাসক বরার চিঠি দিয়েছি। আপাতত হিসাব সহকারী দায়িত্ব পালন করছেন। উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করতে অব্যশই হিসাব সহকারীর নামে একাউন্টে নাম পরিবর্তন করতে হবে। তবে আমাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে কোন চিঠি দেয়া হয়নি।

এই ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখাগেছে হিসাব সহকারীর নাম মুন্নি আক্তার। তিনি কয়েকমাস পূর্বে এই পরিষদ থেকে বদলি হয়েছেন। নতুন করে আসা হিসাব সহকারী ইউসুফ সরকার রুবেল কাজ করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা চেয়ারে বসে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি নিজের চেয়ার রেখে এই চেয়ারে কেন? তিনি বলেন এমনিতে বসেছি। অথচ ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশ করেই তাকে এই কক্ষে পাওয়াগেছে।

খোঁজ নিয়ে ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, জেলার ৮ উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তার শূন্য পদে হিসাব সহকারীদের কোন ধরণের দাপ্তরিক অনুমতি ছাড়া প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন স্থানীয় সরকারি বিভাগের উপসচিব মো. গোলাম জাকারিয়া।

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন, হিসাব সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন আমি অবগত। তবে তাদেরকে দাপ্তরিক কোন অনমতি দেয়া হয়নি। এই বিষয়ে আপনি স্থানীয় সরকার উপপরিচালকের সাথে কথা বলেন।

কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরী বলেন, হিসাব সহকারী যখন প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন, তখন ব্যাংক একাউন্ট কে পরিচালনা করবে! তাকে দিয়ে করাতে হবে। দাপ্তরিক অনুমতি দেয়া হয়নি বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, এই বিষয়ে বক্তব্য প্রয়োজন হলে জেলার স্থানীয় সরকারি বিভাগে কথা বলেন।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. গোলাম জাকারিয়া বলেন, জেলায় ১৩টি প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কিন্তু হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের লোকজন উচ্চ আদালতে রীট করেন তাদেরকে এই পদে পদোন্নিত দেয়ার জন্য। যার ফলে এই পদে নিয়োগ হয়নি। তাদের রীট উচ্চ আদালত স্থগিত করে রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে শূন্য পদে হিসাব সহকারীদের দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়েছে এবং হিসাব সহকারীদের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকলে তারা দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি বলেন, ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনার বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কোথাও উল্লেখ নেই। এই ১৩ পদে দায়িত্ব পালনের জন্য আমরা কোন দাপ্তরিক চিঠি দেইনি। তবে হিসাব সহকারী হিসেবে বদলির চিঠি দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদ-২ এর কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. নুরে আলম বলেন, কোন ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসনিক কর্মকর্তা না থাকলে পাশবর্তী ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। কিন্তু হিসাব সহকারী থাকলে তিনিই প্রশাসনিক কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে নিয়মিত কাজ সম্পাদন করবেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে দাপ্তরিক চিঠি ও নিয়ম অনুসরণ করে দায়িত্ব দিতে হবে। মৌখিক নয়, শূন্য পদে স্থানীয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়ে দায়িত্ব দিতে পারবেন, তবে দাপ্তরিক চিঠি লাগবে।