ঢাকা 1:09 am, Sunday, 27 July 2025

শহীদ হান্নানের একমাত্র সন্তান বাবার মুখ দেখেনি

ছবি-সংগৃহিত।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের মৈশামুড়া গ্রামের বড় বাড়ির আমিন মিয়ার ছেলে শহীদ হান্নান। তিনি গেল বছর ২০ জুলাই রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় কাজ থেকে বাসায় ফেরার সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই সময় তার স্ত্রী গর্ববতি ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার দুই মাস পরে জন্ম নেয় একমাত্র কন্যা সন্তান উম্মে হানি। এই নবজাতক দুনিয়ার আলো দেখলেও বাবার মুখ দেখেনি। এখন মায়ের সাথে থাকেন নানা বাড়িতে।

শহীদ হান্নান। জন্ম ১৯৯২ সালের ৩০ জানুয়ারি। বাবা আমিন মিয়া (৯৫)। মা রাশিদা বেগম (৭৫)। ৫ ভাই ও এক বোনের মধ্যে হান্নান সবার ছোট। ভাইদের মধ্যে বিল্লাল হোসেন (৫৫), ইমান হোসেন (৪৯), রফিক (৪৩), মান্নান (৪০), বোন বিউটি (৩৭)। একমাত্র বোন বিবাহিত এবং গৃহিনী। ভাইদের মধ্যে ৪ জনই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বেকারিতে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন। হান্নানের শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মৈশামূড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সামাজিকভাবে শহীদ হান্নান বিয়ে করেন ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারিতে বিবি হাওয়া মুক্তাকে (২০)। শ্বশুর ওমান প্রবাসী মো. স্বপন (৫২)। মা নাজমা বেগম (৪৫) গৃহিনী। গ্রামের বাড়ি একই উপজেলার কাশিমপুর উটনী গ্রামে। স্বপন মিয়ার ৩ মেয়ে ও এক ছেলে। মুক্তা ছাড়া বড় মেয়ে সুমাইয়া (২৫) বিবাহিত। ছোট মেয়ে নুসরাত (১৫) নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। একমাত্র ছেলে আহমেদ নাবিল (১০) মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

রফিক ও শহীদ হান্নান দুই ভাই মধ্য বাড্ডা পূর্বাঞ্চল ৯নম্বর রোড ‘আপনজন বেকারী’ নামে প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। ওই প্রতিষ্ঠানে প্রথমে কাজ নেন রফিক। হান্নান গত ৪ বছর পূর্বে ভাইয়ের একই পদে কাজে যুক্ত হন। বেকারীর পাশেই একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা প্লাটে ৪ জন মিলে ভাড়া থাকতেন। সকলেই একই প্রতিষ্ঠানের কর্মী।

হান্নানের মৃত্যুর বিষয়ে বড় ভাই রফিক জানান, প্রতিদিন ভোরে আমার আগেই হান্নান কাজে গিয়ে মালপত্র গুছাতেন। ঘটনার দিন শুক্রবার (১৮ জুলাই) ভোর সাড়ে ৬টায় কাজে যান হান্নান। আমি এর আগেই গিয়ে কাজ শেষ করে বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল ১০টার দিকে হান্নানের রুমমেট রনি ফোন করে জানায় বাটারা থানার সামনের ফুট ওভারব্রিজের নীচে হান্নান গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটলা জেনারেল হসপিটালে সাড়ে ১১টার দিকে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসারত থাকা অবস্থায় ২০ জুলাই ভোর সাড়ে ৪টায় মৃত্যুবরণ করেন হান্নান।

রফিক আরো জানান, তার ভাইয়ের নাভীর নিচে ডান পাশে গুলি লেগে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেরই তার মৃত্যু হয় বলে জানান চিকিৎসক। এরপূর্বে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয় এবং কয়েক ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। গুলি খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আমার ভাই খাবার দেয়ার জন্য খুবই হাহাকার করে।

রফিকের স্ত্রী জান্নাত বলেন, হান্নান খুবই দানশীল ব্যাক্তি ছিলেন। বিয়ের পূর্বে থেকে তার আয়ের একটি অংশ গরীব মানুষকে দান করতেন। যদিও তার বেতন ছিলো ২০-২৫ হাজার টাকা।

বড় ভাই ইমান হোসেন বলেন, আমার ভাইয়ের ডান পায়ের নাভীর নিচেত গুলি লেগে অধিক রক্তক্ষরণ হয়। তাকে ঢাকা মেডিকেলে ৮ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। মৃত্যুর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত হয়। পরে হাসপাতাল থেকে চাঁদপুরে তার লাশ নিয়ে আসা হয়। ওই রাতেই বাড়ির পাশের মসজিদের সামনে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, আমি প্রথমে ঢাকায় কাজ নেই। পরে অন্য ভাইদেরকে একই কাজে যুক্ত করি। আমার ভাই শহীদ হান্নান একটি বসতঘর করার খুবই স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পুরন হয়নি। তবে ভাই হত্যার বিচারে জন্য গত বছর ২৪ আগষ্ট ঢাকা সিএমএম আদালতে মামলার আবেদন করি। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ২ সেপ্টেম্বর বাটারা থানাকে মামলা রুজু করার নির্দেশন। সেখানে পুলিশের আইজিপিসহ ৮কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়।
হান্নানের বাবা আমিন মিয়া বলেন, তার ছেলের সাথে সব শেষ দেখা হয় গেল বছর কোরবানির ঈদের সময়। ছেলে ঢাকা থেকে গরু কিনে বাড়িতে নিয়ে আসে। সব ছেলেরা মিলেই কোরবারি পশু কাটাকাটি করি। সে ছোট হলেও সবচেয়ে বেশি আদরের সন্তান ছিলো। আমার অসুস্থ্যতা ও ওষুধের জন্য সব সময় খরচ দিতেন।

ছেলের সাথে মা রাশিদা বেগমের সব শেষ কথা হয় ১৭ জুলাই। রাশেদা বেগম বলেন, ছেলে ফোন করে বাড়িতে মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চান। একই সময় বাড়ির সবার খোঁজ খবর নেন। আমাদের কোন কিছু লাগবে কীনা তাও জানতে চান। এখন আর খোঁজ নেয়ার কেউ রইল না। কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাশিদা বেগম।

তিনি বলেন, ছেলে শহীদ হওয়ার পর তার স্ত্রী বাবা বাড়িতে থাকেন। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই নানা রোগে আক্রান্ত। সরকারিভাবে সহায়তা আসলেও পাইনি। প্রতিমাসে দুইজনের ঔষধ খরচ লাগে ১০হাজার টাকার বেশি। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।

শহীদ হান্নানের স্ত্রী মুক্তা বলেন, ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সর্বশেষ কথা হয়। তখন আমাদের খোঁজ খবর নেন। তখন তিনি বেকারি থেকে বাসায় যাচ্ছেলিনে। আমার জা জান্নাত বেগম থেকে জানতে পারি আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পূর্বে জানতেন তার কন্যা সনÍান হবে। তিনি বলেছিলেন মেয়েকে যেন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়ানো হয়। বড় হলে অবশ্যই মেয়েকে মাদ্রাসায় পড়ানো হবে। স্বামীর মৃত্যুর পরে শ্বশুর পরিবারের কারো সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আমার শিশু সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ব্যবস্থা এবং তার বাবা হত্যার জন্য অভিযুক্ত ব্যাক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

শহীদ হান্নানের চাচা আব্দুল মতিন বলেন, ভাতিজা হান্নান খুবই সামাজিক ছিলেন। ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পরে সরকারি কাগজপত্রসহ মামলার কাজে আমি সার্বিক সহযোগিতা করেছি। এই কাজে আমাদেরকে বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়েছেন হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক প্রকৌশলী মমিনুল হক।

তিনি আরো বলেন, এই পর্যন্ত শহীদ হান্নান পরিবার আর্থিক সহায়তা হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা, জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে প্রথম পর্বে ২০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় বার ২ লাখ টাকা। জামায়াতে ইসলামী থেকে ২ লাখ টাকা, বিএনপি নেতা প্রকৌশলী মমিনুল হকের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ৫লাখ টাকা এবং সর্বশেষ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পেয়েছে হান্নানের স্ত্রী মুক্তা।(ফোকাস মোহনা)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

শহীদ হান্নানের একমাত্র সন্তান বাবার মুখ দেখেনি

শহীদ হান্নানের একমাত্র সন্তান বাবার মুখ দেখেনি

Update Time : 11:31:29 pm, Saturday, 26 July 2025

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের মৈশামুড়া গ্রামের বড় বাড়ির আমিন মিয়ার ছেলে শহীদ হান্নান। তিনি গেল বছর ২০ জুলাই রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় কাজ থেকে বাসায় ফেরার সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই সময় তার স্ত্রী গর্ববতি ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার দুই মাস পরে জন্ম নেয় একমাত্র কন্যা সন্তান উম্মে হানি। এই নবজাতক দুনিয়ার আলো দেখলেও বাবার মুখ দেখেনি। এখন মায়ের সাথে থাকেন নানা বাড়িতে।

শহীদ হান্নান। জন্ম ১৯৯২ সালের ৩০ জানুয়ারি। বাবা আমিন মিয়া (৯৫)। মা রাশিদা বেগম (৭৫)। ৫ ভাই ও এক বোনের মধ্যে হান্নান সবার ছোট। ভাইদের মধ্যে বিল্লাল হোসেন (৫৫), ইমান হোসেন (৪৯), রফিক (৪৩), মান্নান (৪০), বোন বিউটি (৩৭)। একমাত্র বোন বিবাহিত এবং গৃহিনী। ভাইদের মধ্যে ৪ জনই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বেকারিতে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন। হান্নানের শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মৈশামূড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সামাজিকভাবে শহীদ হান্নান বিয়ে করেন ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারিতে বিবি হাওয়া মুক্তাকে (২০)। শ্বশুর ওমান প্রবাসী মো. স্বপন (৫২)। মা নাজমা বেগম (৪৫) গৃহিনী। গ্রামের বাড়ি একই উপজেলার কাশিমপুর উটনী গ্রামে। স্বপন মিয়ার ৩ মেয়ে ও এক ছেলে। মুক্তা ছাড়া বড় মেয়ে সুমাইয়া (২৫) বিবাহিত। ছোট মেয়ে নুসরাত (১৫) নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। একমাত্র ছেলে আহমেদ নাবিল (১০) মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

রফিক ও শহীদ হান্নান দুই ভাই মধ্য বাড্ডা পূর্বাঞ্চল ৯নম্বর রোড ‘আপনজন বেকারী’ নামে প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। ওই প্রতিষ্ঠানে প্রথমে কাজ নেন রফিক। হান্নান গত ৪ বছর পূর্বে ভাইয়ের একই পদে কাজে যুক্ত হন। বেকারীর পাশেই একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা প্লাটে ৪ জন মিলে ভাড়া থাকতেন। সকলেই একই প্রতিষ্ঠানের কর্মী।

হান্নানের মৃত্যুর বিষয়ে বড় ভাই রফিক জানান, প্রতিদিন ভোরে আমার আগেই হান্নান কাজে গিয়ে মালপত্র গুছাতেন। ঘটনার দিন শুক্রবার (১৮ জুলাই) ভোর সাড়ে ৬টায় কাজে যান হান্নান। আমি এর আগেই গিয়ে কাজ শেষ করে বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল ১০টার দিকে হান্নানের রুমমেট রনি ফোন করে জানায় বাটারা থানার সামনের ফুট ওভারব্রিজের নীচে হান্নান গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটলা জেনারেল হসপিটালে সাড়ে ১১টার দিকে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসারত থাকা অবস্থায় ২০ জুলাই ভোর সাড়ে ৪টায় মৃত্যুবরণ করেন হান্নান।

রফিক আরো জানান, তার ভাইয়ের নাভীর নিচে ডান পাশে গুলি লেগে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেরই তার মৃত্যু হয় বলে জানান চিকিৎসক। এরপূর্বে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয় এবং কয়েক ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। গুলি খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আমার ভাই খাবার দেয়ার জন্য খুবই হাহাকার করে।

রফিকের স্ত্রী জান্নাত বলেন, হান্নান খুবই দানশীল ব্যাক্তি ছিলেন। বিয়ের পূর্বে থেকে তার আয়ের একটি অংশ গরীব মানুষকে দান করতেন। যদিও তার বেতন ছিলো ২০-২৫ হাজার টাকা।

বড় ভাই ইমান হোসেন বলেন, আমার ভাইয়ের ডান পায়ের নাভীর নিচেত গুলি লেগে অধিক রক্তক্ষরণ হয়। তাকে ঢাকা মেডিকেলে ৮ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। মৃত্যুর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত হয়। পরে হাসপাতাল থেকে চাঁদপুরে তার লাশ নিয়ে আসা হয়। ওই রাতেই বাড়ির পাশের মসজিদের সামনে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, আমি প্রথমে ঢাকায় কাজ নেই। পরে অন্য ভাইদেরকে একই কাজে যুক্ত করি। আমার ভাই শহীদ হান্নান একটি বসতঘর করার খুবই স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পুরন হয়নি। তবে ভাই হত্যার বিচারে জন্য গত বছর ২৪ আগষ্ট ঢাকা সিএমএম আদালতে মামলার আবেদন করি। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ২ সেপ্টেম্বর বাটারা থানাকে মামলা রুজু করার নির্দেশন। সেখানে পুলিশের আইজিপিসহ ৮কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়।
হান্নানের বাবা আমিন মিয়া বলেন, তার ছেলের সাথে সব শেষ দেখা হয় গেল বছর কোরবানির ঈদের সময়। ছেলে ঢাকা থেকে গরু কিনে বাড়িতে নিয়ে আসে। সব ছেলেরা মিলেই কোরবারি পশু কাটাকাটি করি। সে ছোট হলেও সবচেয়ে বেশি আদরের সন্তান ছিলো। আমার অসুস্থ্যতা ও ওষুধের জন্য সব সময় খরচ দিতেন।

ছেলের সাথে মা রাশিদা বেগমের সব শেষ কথা হয় ১৭ জুলাই। রাশেদা বেগম বলেন, ছেলে ফোন করে বাড়িতে মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চান। একই সময় বাড়ির সবার খোঁজ খবর নেন। আমাদের কোন কিছু লাগবে কীনা তাও জানতে চান। এখন আর খোঁজ নেয়ার কেউ রইল না। কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাশিদা বেগম।

তিনি বলেন, ছেলে শহীদ হওয়ার পর তার স্ত্রী বাবা বাড়িতে থাকেন। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই নানা রোগে আক্রান্ত। সরকারিভাবে সহায়তা আসলেও পাইনি। প্রতিমাসে দুইজনের ঔষধ খরচ লাগে ১০হাজার টাকার বেশি। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।

শহীদ হান্নানের স্ত্রী মুক্তা বলেন, ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সর্বশেষ কথা হয়। তখন আমাদের খোঁজ খবর নেন। তখন তিনি বেকারি থেকে বাসায় যাচ্ছেলিনে। আমার জা জান্নাত বেগম থেকে জানতে পারি আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পূর্বে জানতেন তার কন্যা সনÍান হবে। তিনি বলেছিলেন মেয়েকে যেন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়ানো হয়। বড় হলে অবশ্যই মেয়েকে মাদ্রাসায় পড়ানো হবে। স্বামীর মৃত্যুর পরে শ্বশুর পরিবারের কারো সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আমার শিশু সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ব্যবস্থা এবং তার বাবা হত্যার জন্য অভিযুক্ত ব্যাক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

শহীদ হান্নানের চাচা আব্দুল মতিন বলেন, ভাতিজা হান্নান খুবই সামাজিক ছিলেন। ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পরে সরকারি কাগজপত্রসহ মামলার কাজে আমি সার্বিক সহযোগিতা করেছি। এই কাজে আমাদেরকে বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়েছেন হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক প্রকৌশলী মমিনুল হক।

তিনি আরো বলেন, এই পর্যন্ত শহীদ হান্নান পরিবার আর্থিক সহায়তা হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা, জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে প্রথম পর্বে ২০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় বার ২ লাখ টাকা। জামায়াতে ইসলামী থেকে ২ লাখ টাকা, বিএনপি নেতা প্রকৌশলী মমিনুল হকের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ৫লাখ টাকা এবং সর্বশেষ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পেয়েছে হান্নানের স্ত্রী মুক্তা।(ফোকাস মোহনা)