বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি উপজেলা বিএনপির গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপি।
হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের ব্যানারে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় হাজীগঞ্জে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি লায়ন ইঞ্জি. মমিনুল হক।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ঘরে বা মসজিদে যেখানেই থাকেন, মামলার আসামি হচ্ছেন। সুতরাং রাস্তায় নেমে আসামি হন। আর নভেম্বর পর্যন্ত মাঠে থাকেন, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। তাদের সময় শেষ হয়ে আসছে। জাতি তাদের বিচার করবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ও আমাদের নেতা তারেক জিয়া যে নির্দেশনা দিবে, আপনারা মাঠে থেকে তা বাস্তবায়ন করবেন। আমি আপনাদের পাশি আছি এবং থাকবো।
ইঞ্জি. মমিনুল হক বলেন, পাকিস্তানী আর্মীদের সময়ে আমরা ঘরে ঘুমিয়েছি। আর স্বাধীন দেশে পুলিশের কারণে আমরা ঘরে ঘুমাতে পারছিনা। এখন আমরা পরাধীন। তারা স্ত্রীকে বলেছে, তোর স্বামীকে লেংটা করে পিটাবো। এটা পুলিশের কেমন আচরণ? তারা-তো শিক্ষিত লোক। শিক্ষিত লোকেরা কিভাবে বাঝে আচরণ করে এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়?
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জে ২টি ও শাহরাস্তিতে একটি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় আমাদের ১১ জনসহ মোট ১৭ জন নেতাকর্মী জেলহাজতে রয়েছেন। নেতাকর্মীরা যেনো সহজেই জামিন না পায়, সেজন্য ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতায় আইনে এই মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে সিইসির সাথে আঁতাত করে ভোট বিহীন একটি কুকুর মার্কা নির্বাচন দিয়ে আওয়ামী লীগ পুনারায় ক্ষমতায় এসে, দেশের মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে। জনগণ আওয়ামী লীগকে আর বিশ্বাস করেন।
শেখ হাসিনা নিজেকে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে বলে, ধোঁকা দিয়ে ভোটবিহীণ নির্বাচন করে আবারো ক্ষমতায় আসতে চাই আওয়ামীলীগ। এবার তাদেরকে দেশের জনগণ সেই সুযোগ দেবেনা।
তিনি বলেন, হরতাল ও অবরোধে আমাদের নেতাকর্মীরা কোন ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি করেছে একটা প্রমাণও দেখাতে পারবেন না। সেদিন আমি বাড়িতে ছিলাম। সেন্দ্রায় আমাদের ছেলেদের উপর হামলা করা হয়। তারা প্রতিবাদ জানায়। পরে পুলিশের সহযোগিতায় আবারো আমাদের ছেলেদের উপর হামলা করে তাদেরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। একইভাবে ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসার সামনে কিছু লোক পুলিশের ছত্রছায়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে। অথচ মামলায় আমাদের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
জাতীয় ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) মহাসচিবের (সাধারণ সম্পাদক) কথায় লিডারশীপের পরিচয় পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, ক্ষমতা হারালে তাদের ৫ লক্ষ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি মনে করি তারা এমন কাজ করছে বলেই, আজ এমন আশংকা করছেন। তাদের দলের লোকদেরকে পুলিশ স্পাই বানিয়ে রেখেছে, তাদের কারনে আমাদের নেতাকর্মীরা রাতে ঘরে ঘুমাতে পারেনা। যেমনি ২০১৮ সালেও পারিনি।
তিনি আরো বলেন, মাওলানা ভাসানিকে ঠকিয়ে আওয়ামী-মুসলীম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ করেছে। মানুষকে ঠকানোর জন্য ৭৪ সালে কালো আইন করেছে। এই আইন বাতিলের জন্য আমরা বহুদিন ধরে আন্দোলন করেছি। আবারো দেশের মানুষকে ঠকানোর জন্য সেই আইনকে ব্যবহার করে আমাদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে। আল্লাহ্, একজন আছেন। স্বৈরশাসনের অবসান হবে এবং জাতিই শেখ হাসিনার বিচার করবে।
সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে ইঞ্জি. মমিনুল হক বলেন, আপনারা বিবেক মাথায় রেখে নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন। আপনারাও এই দেশের মানুষ। এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই, সরকারের পক্ষে কাজ করবেন না।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম.এ রহিম পাটওয়ারীর উপস্থাপনায় এ সময় লায়ন ইঞ্জি. মমিনুল হক জেলে থাকা ১৭জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করেন। তারা হলেন, হাজীগঞ্জ পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম ভুট্টু, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের আহবায়ক আকতার হোসেন দুলাল, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মো. মজিবুর রহমান, যুগ্ম আহবায়ক আরজেল হোসেন দিনার।
হাজীগঞ্জ পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মাইনুল হোসেন সৌরভ, পৌর শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ হোসেন লারা, পৌর ১০নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি শাহআলম, যুবনেতা ইমাম হোসেন, মাহবুব সানি, বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের যুবনেতা তোফায়েল হোসেন, সদর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মোস্তফা প্রধানীয়া।
ঢাকায় যারা জেলহাজতে রয়েছেন। তারা হলেন, হাজীগঞ্জহ সদর ইউনিয়নের যুবনেতা মো. সুমন, বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের যুবনেতা মো. খোকন, কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের যুবনেতা এমরান মিয়াজী, ছাত্রনেতা আল-আমিন, শাহরাস্তি সূচিপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আব্রাহাম ফাহাদ।
সংবাদ সম্মেলনে হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেন শেখ, সাংগঠনিক সম্পাদক এম.এ নাফের শাহ, পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল খায়ের মজুমদার, শাহরাস্তি উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মাসুদ, হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মো. বিল্লাল হোসেন বেলাল, হাজীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক হুমায়ুন কবির সুমন, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব জুয়েল রানা তালুকদারসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে বিএনপি নেতার অভিযোগের বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যারা যারা অপরাধের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ কখনো এমন কথা বলেনি এবং বলবেও না।