ঢাকা 9:20 am, Wednesday, 20 August 2025

জয়শরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

প্রধান শিক্ষকের অনিয়মে ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা!

  • Reporter Name
  • Update Time : 09:33:33 am, Tuesday, 21 November 2023
  • 15 Time View

ছবি-ত্রিনদী

হাজীগঞ্জের গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়শরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম (ক্লাস) বন্ধ রেখে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার (১৯ নভেম্বর) পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থীর বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য বাকি ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া এদিন বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি, এমন অভিযোগ পেয়ে সংবাদকর্মীরা বেলা দুইটার দিকে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেন জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডটিতে পতাকা নেই। অথচ বিদ্যালয়ে খোলা থাকাবস্থায় ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উড়ানোর নিয়ম রয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনি পরীক্ষা উপলক্ষে সকল শ্রেণির ক্লাস বন্ধ রেখে রোববার বেলা ১১টার দিকে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল মমিন। এরপর শিক্ষার্থীদের বিদায় শেষে সহকারী শিক্ষকদের ছুটি দিয়ে তিনি নিজেও বাড়িতে চলে যান।

নিয়মানুযায়ী স্কুলের ক্লাসের সময় প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থীর বিদায় অনুষ্ঠানের রোববার স্কুলটির অন্যান্য সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষকের নানান অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিদ্যালয়ের পাশে বাড়ি হওয়ায় তিনি তাঁর ইচ্ছে ও খেয়ালখুশি মতো বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে থাকেন। এতে বঞ্চিত হচ্ছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।

প্রধান শিক্ষকের এমন অব্যবস্থাপনায় অভিভাবকরা সন্তানদের বিদ্যালটিতে ভর্তি করাতে অনিহা প্রকাশ করেন। যার ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষার্থী একেবারে কম। প্রধান শিক্ষকের দেয়া তথ্য মতে বিদ্যালয়টিতে ৬৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে কাগজে কলমে ৬৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে।

এই ৬৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষকসহ সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। অর্থ্যাৎ গড়ে ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। যেখানে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা। তারপরেও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নেই। শিক্ষা অফিসের তদারকির অভাবেই এমন ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এদিকে সংবাদকর্মী আসার খবর পেয়ে লুঙ্গি পরিধান অবস্থায় বিদ্যালয়ের পাশে একটি চা দোকানে এসে বসেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল মমিন। এসময় সংবাদকর্মীদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর জাতীয় পতাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি এক্সিডেন্ট। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. ইসমাঈল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, অভিভাবক বা স্থানীয়দের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর পতাকা উত্তোলন করা হয়নি, বিষয়টি দুঃখজনক। বিষয়ে তিনি প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলবেন বলে জানান।

এ সময় তিনি আরো বলেন, আমি আগস্টে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও শিক্ষার মানোন্নয়নসহ বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছি। এজন্য বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, শিক্ষক, অভিভাবক, স্থানীয় ও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
এ ব্যাপারে ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুর রহমান সংবাদকর্মীদের জানান, তিনি তাৎখনিক বিদ্যালয়টি খোলা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ছুটির বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা হয়নি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, বিষয়টি দেখার জন্য তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

শাহরাস্তিতে জুলাই আন্দোলনে আহতদের গেজেটে ভুয়া নাম অন্তর্ভুক্তির ছড়াছড়ি

জয়শরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

প্রধান শিক্ষকের অনিয়মে ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা!

Update Time : 09:33:33 am, Tuesday, 21 November 2023

হাজীগঞ্জের গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়শরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম (ক্লাস) বন্ধ রেখে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার (১৯ নভেম্বর) পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থীর বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য বাকি ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া এদিন বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি, এমন অভিযোগ পেয়ে সংবাদকর্মীরা বেলা দুইটার দিকে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেন জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডটিতে পতাকা নেই। অথচ বিদ্যালয়ে খোলা থাকাবস্থায় ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উড়ানোর নিয়ম রয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনি পরীক্ষা উপলক্ষে সকল শ্রেণির ক্লাস বন্ধ রেখে রোববার বেলা ১১টার দিকে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল মমিন। এরপর শিক্ষার্থীদের বিদায় শেষে সহকারী শিক্ষকদের ছুটি দিয়ে তিনি নিজেও বাড়িতে চলে যান।

নিয়মানুযায়ী স্কুলের ক্লাসের সময় প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থীর বিদায় অনুষ্ঠানের রোববার স্কুলটির অন্যান্য সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষকের নানান অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিদ্যালয়ের পাশে বাড়ি হওয়ায় তিনি তাঁর ইচ্ছে ও খেয়ালখুশি মতো বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে থাকেন। এতে বঞ্চিত হচ্ছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।

প্রধান শিক্ষকের এমন অব্যবস্থাপনায় অভিভাবকরা সন্তানদের বিদ্যালটিতে ভর্তি করাতে অনিহা প্রকাশ করেন। যার ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষার্থী একেবারে কম। প্রধান শিক্ষকের দেয়া তথ্য মতে বিদ্যালয়টিতে ৬৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে কাগজে কলমে ৬৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে।

এই ৬৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষকসহ সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। অর্থ্যাৎ গড়ে ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। যেখানে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা। তারপরেও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নেই। শিক্ষা অফিসের তদারকির অভাবেই এমন ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এদিকে সংবাদকর্মী আসার খবর পেয়ে লুঙ্গি পরিধান অবস্থায় বিদ্যালয়ের পাশে একটি চা দোকানে এসে বসেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল মমিন। এসময় সংবাদকর্মীদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর জাতীয় পতাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি এক্সিডেন্ট। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. ইসমাঈল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, অভিভাবক বা স্থানীয়দের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর পতাকা উত্তোলন করা হয়নি, বিষয়টি দুঃখজনক। বিষয়ে তিনি প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলবেন বলে জানান।

এ সময় তিনি আরো বলেন, আমি আগস্টে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও শিক্ষার মানোন্নয়নসহ বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছি। এজন্য বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, শিক্ষক, অভিভাবক, স্থানীয় ও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
এ ব্যাপারে ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুর রহমান সংবাদকর্মীদের জানান, তিনি তাৎখনিক বিদ্যালয়টি খোলা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ছুটির বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা হয়নি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, বিষয়টি দেখার জন্য তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন।