ঢাকা ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জেনে নিন বৃষ্টির সময়, বৃষ্টি শেষে, অতিরিক্ত বৃষ্টি, ঝোড়ো বাতাস ও বজ্রপাতের দোয়া

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:২২:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
  • ৫৯ Time View

বৃষ্টিতে মন প্রফুল্ল হয়। আল্লাহর রহমতে প্রকৃতি পায় স্বস্তি ও উর্বরতা শক্তি। বৃষ্টি আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ বৃষ্টি সম্পর্কে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টির সময় কিছু আমল করতেন।

বৃষ্টির সময় দোয়া

রাসুল (সা.) বৃষ্টির সময় আল্লাহর রহমতের জন্য দোয়া করতেন। বৃষ্টি যেমন আল্লাহর রহমত, তেমনই আবার কখনো গজবও হয়ে উঠতে পারে। রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা সায়্যিবান নাফিআহ।’ ‘হে আল্লাহ! তুমি এ বৃষ্টিকে প্রবহমান ও উপকারী করে দাও। (বুখারি, হাদিস: ১,০৩২)

হজরত আনাস (রা.)–র বরাতে হাদিসে এসেছে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, একবার আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম; তখন বৃষ্টি এল। রাসুল (সা.) তখন তাঁর গায়ের পোশাকের কিছু অংশ সরিয়ে নিলেন, যাতে করে গায়ে বৃষ্টির ছাঁট লাগে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কেন এমনটি করলেন? তিনি বললেন, ‘কারণ বৃষ্টি তার প্রতিপালকের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৮৯৮)

ঝোড়ো বাতাস বইতে দেখলে দোয়া

দমকা হওয়া বইতে দেখলে নবীজি (সা.) উদ্বিগ্ন হতেন। বৃষ্টি শুরু হলে তিনি খুশি হয়ে উঠতেন। হজরত আয়িশা (রা.) বলেছেন, আমি এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমার আশঙ্কা হয়, আমার উম্মতের ওপর কোনো গজব আসে কি না।’ বৃষ্টি দেখলেই তিনি বলতেন, ‘এটি আল্লাহর রহমত।’ (মুসলিম, হাদিস: ১,৯৬৯)

হজরত আয়িশা (রা.)–র বরাতে আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) আকাশে মেঘ দেখলে নফল ইবাদত ছেড়ে দিতেন। তিনি এই বলে দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরি ওয়া খাইরি মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি’। ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে বৃষ্টির উপকারী দিক কামনা করছি। আর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫,১৯৯)

অতিরিক্ত বৃষ্টিতে দোয়া

রাসুল (সা.) একবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে এই দোয়া করেছিলেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়াইলাইনা ওয়া আলাইনা।’ ‘হে আল্লাহ! আমাদের এখানে নয়, আশেপাশে বৃষ্টি বর্ষণ করো।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ১,৫২৭)

প্রবল বৃষ্টি হলে নবী (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিআ; ওয়া মানাবিতিস শাজার।’ (বুখারি, হাদিস: ১,০১৪)

এর অর্থ, ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং গাছ-উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোতে বৃষ্টি দিন।’

বজ্রপাতের দোয়া

আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) বজ্রপাতের সময় কথা বন্ধ রাখতেন। কেবল বলতেন, ‘ওয়া ইউসাব্বিহুর রাদু বিহামদিহি, ওয়াল মালাইকাতু মিন খিয়ফাতিহি।’ (সুরা রাদ, আয়াত: ১৩)

এর অর্থ, ‘বজ্র ও সব ফেরেশতা সন্ত্রস্ত হয়ে তাঁর প্রশংসা পাঠ করে।’

বৃষ্টির সময় দোয়ার ফজিলত

বৃষ্টি আল্লাহর রহমত ও করুণা বর্ষণের সময়, তাই এটি দোয়া কবুলেরও উপযুক্ত সুযোগ। সাহল বিন সাদ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে নবী (সা.) বলেছেন, ‘দুটি দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না। আজানের সময়ের দোয়া এবং বৃষ্টির সময়ের দোয়া।’ (মুস্তাদরাক, হাদিস: ২,৫৩৪; তাবারানি; হাদিস: ৫,৭৫৬; সহিহুল জামে, হাদিস: ৩,০৭৮)

বৃষ্টি শেষে দোয়া করা

বৃষ্টি শেষ হয়ে এলে রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে এই দোয়া পড়ার তাগিদ দিয়েছেন, ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রাহমাতিহ।’ ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস: ১,০৩৮)

বৃষ্টি শেষে রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে একটি বিশেষ দোয়া পড়ার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন, দোয়াটি হলো, ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহ। এর অর্থ, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস: ১,০৩৮)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

ফরিদগঞ্জে ৪০ দিনের কন্যাসন্তান রেখে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

জেনে নিন বৃষ্টির সময়, বৃষ্টি শেষে, অতিরিক্ত বৃষ্টি, ঝোড়ো বাতাস ও বজ্রপাতের দোয়া

Update Time : ০৬:২২:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বৃষ্টিতে মন প্রফুল্ল হয়। আল্লাহর রহমতে প্রকৃতি পায় স্বস্তি ও উর্বরতা শক্তি। বৃষ্টি আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ বৃষ্টি সম্পর্কে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টির সময় কিছু আমল করতেন।

বৃষ্টির সময় দোয়া

রাসুল (সা.) বৃষ্টির সময় আল্লাহর রহমতের জন্য দোয়া করতেন। বৃষ্টি যেমন আল্লাহর রহমত, তেমনই আবার কখনো গজবও হয়ে উঠতে পারে। রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা সায়্যিবান নাফিআহ।’ ‘হে আল্লাহ! তুমি এ বৃষ্টিকে প্রবহমান ও উপকারী করে দাও। (বুখারি, হাদিস: ১,০৩২)

হজরত আনাস (রা.)–র বরাতে হাদিসে এসেছে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, একবার আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম; তখন বৃষ্টি এল। রাসুল (সা.) তখন তাঁর গায়ের পোশাকের কিছু অংশ সরিয়ে নিলেন, যাতে করে গায়ে বৃষ্টির ছাঁট লাগে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কেন এমনটি করলেন? তিনি বললেন, ‘কারণ বৃষ্টি তার প্রতিপালকের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৮৯৮)

ঝোড়ো বাতাস বইতে দেখলে দোয়া

দমকা হওয়া বইতে দেখলে নবীজি (সা.) উদ্বিগ্ন হতেন। বৃষ্টি শুরু হলে তিনি খুশি হয়ে উঠতেন। হজরত আয়িশা (রা.) বলেছেন, আমি এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমার আশঙ্কা হয়, আমার উম্মতের ওপর কোনো গজব আসে কি না।’ বৃষ্টি দেখলেই তিনি বলতেন, ‘এটি আল্লাহর রহমত।’ (মুসলিম, হাদিস: ১,৯৬৯)

হজরত আয়িশা (রা.)–র বরাতে আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) আকাশে মেঘ দেখলে নফল ইবাদত ছেড়ে দিতেন। তিনি এই বলে দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরি ওয়া খাইরি মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি’। ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে বৃষ্টির উপকারী দিক কামনা করছি। আর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫,১৯৯)

অতিরিক্ত বৃষ্টিতে দোয়া

রাসুল (সা.) একবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে এই দোয়া করেছিলেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়াইলাইনা ওয়া আলাইনা।’ ‘হে আল্লাহ! আমাদের এখানে নয়, আশেপাশে বৃষ্টি বর্ষণ করো।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ১,৫২৭)

প্রবল বৃষ্টি হলে নবী (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিআ; ওয়া মানাবিতিস শাজার।’ (বুখারি, হাদিস: ১,০১৪)

এর অর্থ, ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং গাছ-উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোতে বৃষ্টি দিন।’

বজ্রপাতের দোয়া

আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) বজ্রপাতের সময় কথা বন্ধ রাখতেন। কেবল বলতেন, ‘ওয়া ইউসাব্বিহুর রাদু বিহামদিহি, ওয়াল মালাইকাতু মিন খিয়ফাতিহি।’ (সুরা রাদ, আয়াত: ১৩)

এর অর্থ, ‘বজ্র ও সব ফেরেশতা সন্ত্রস্ত হয়ে তাঁর প্রশংসা পাঠ করে।’

বৃষ্টির সময় দোয়ার ফজিলত

বৃষ্টি আল্লাহর রহমত ও করুণা বর্ষণের সময়, তাই এটি দোয়া কবুলেরও উপযুক্ত সুযোগ। সাহল বিন সাদ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে নবী (সা.) বলেছেন, ‘দুটি দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না। আজানের সময়ের দোয়া এবং বৃষ্টির সময়ের দোয়া।’ (মুস্তাদরাক, হাদিস: ২,৫৩৪; তাবারানি; হাদিস: ৫,৭৫৬; সহিহুল জামে, হাদিস: ৩,০৭৮)

বৃষ্টি শেষে দোয়া করা

বৃষ্টি শেষ হয়ে এলে রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে এই দোয়া পড়ার তাগিদ দিয়েছেন, ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রাহমাতিহ।’ ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস: ১,০৩৮)

বৃষ্টি শেষে রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে একটি বিশেষ দোয়া পড়ার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন, দোয়াটি হলো, ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহ। এর অর্থ, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস: ১,০৩৮)