ঢাকা 11:36 am, Thursday, 17 July 2025

হাজীগঞ্জে ফল বিপর্যয়ের পর টেবিলে পা রেখে ঘুমানো প্রধান শিক্ষকের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা লাটে তুলে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে দেশগাঁও জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তাহের হোসেন চৌধুরী তাঁর অফিস কক্ষে চেয়ারে হেলান দিয়ে দুই পা টেবিলের উপর রেখে ঘুমাচ্ছেন। ছবি ফেইসবকু থেকে সংগৃহিত।

এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয়ের পর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মো. তাহের হোসেন চৌধুরী নামের এক প্রধান শিক্ষকের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয়েছে তোলপাড়। চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তিনি উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের দেশগাঁও জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা লাটে তুলে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে তিনি তাঁর অফিস কক্ষে চেয়ারে হেলান দিয়ে দুই পা টেবিলের উপর রেখে ঘুমাচ্ছেন। এমন দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর উপজেলা ব্যাপী নানান আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তবে ছবিটির সত্যতা তুলে ধরেন ওই প্রধান শিক্ষক।

তিনি বলেন, ছবিটি ৭/৮ বছর আগের। তখন আমি হঠাৎ করে স্টোকজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। ওই সময়ে বিদ্যালয়ের পিয়ন (অফিস সহায়ক) আমার পা দুটি টেবিলের উপর তুলে দেন।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সারাদেশে একযোগে সকল শিক্ষাবোর্ডের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ফলাফলে উপজেলায় পাশের হার ৬৭.২৯ শতাংশ। অথচ দেশগাঁও জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার মাত্র ৩২.৮৮ শতাংশ।

যা ফলাফলের বিপর্যয়ের দিক থেকে উপজেলার তৃতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৭৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে মাত্র ২৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪৯ জন। পাশ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন, এ গ্রেড ১৬ জন, এ মাইনাস ৬ জন ও সি গ্রেড ১ জন।

এবছর ফলাফল বিপর্যয়ের পাশাপাশি কমেছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও। গতবছর (২০২৪) বিদ্যালয়টি থেকে ৯৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করে ৯২ জন। পাশের হার ৯২ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ জন, এ গ্রেড ২৯ জন, এ মাইনাস ১৭ জন, বি গ্রেড ১৪ জন ও সি গ্রেড ২৮ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ৫ জন।

এদিকে এ বছর ফলাফল বিপর্যয়ে প্রধান শিক্ষক মো. তাহের হোসেন চৌধুরীকে দ্বায়ী করেন অভিভাবকসহ স্থানীয় ও এলাকার লোকজন। তাঁর দুই পা টেবিলের উপর রেখে ঘুমানোর ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এরপর থেকেই তাঁকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

সাইফুর রহমান আখন্দ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহার প্রধান শিক্ষকের ছবিটি পোস্ট করেন। ওই পোস্টে জাফর খান নামের একজন কমেন্ট করেন। তিনি প্রধান শিক্ষককে উদ্দশ্যে করে কমেন্টে লিখেন, ছাত্র জীবনে কতো কষ্ট করে পড়ালেখা করে চাকুরীটা পেয়েছে। এখনি তো একটু সুখে থাকার সময়, তাই আরকি।

মারজাহান আক্তার কমেন্ট করেন, এ জন্যই প্রতিষ্ঠানটি আজ বিলুপ্তির পথে।

বাহার হাবিব উল্যাহ নামের একজন মেঘনাপোস্ট নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে পোস্টকৃত ওই ছবির কমেন্টে লিখেন, এখর তার বক্তরা (ভক্ত) বলবে উনি (ওনি) অসুস্থ হয়েও স্কুলে এসেছেন, ছাত্রদের উন্নতির কথা চিন্তা করে। অথচ বহু বছর আগ থেকেই শুনেছি বখাটে এবং মামলাবাজ উনি ঘুষ দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে নেন।

অপর দিকে ফারহানা পাটওয়ারী লিখেন, এট ওনার স্টক (স্টোক) করার সময়ের ছবি।

মো. নূর আলম পাটওয়ারী লিখেন, উনি তখন অসুস্থ ছিল স্টক (স্টোক) করার কারণে। আমরা অনেকেই গেছিলাম ওনাকে দেখতে। আর ফেল করছে, এখানে স্যারদের কোন দ্বায়ভার নেই। পোলাপান (শিক্ষার্থী) বাসায় বসে পড়াশুনা করে না। সারাদিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে।

কয়েকজন অভিভাবক, স্থানীয় ও এলাকাবাসী জানান, প্রধান শিক্ষক গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে বিদ্যালয়টিতে প্রভাব বিস্তার করেছেন। তিনি তাঁর ইচ্ছেমতো বিদ্যালয়টিতে আসা-যাওয়া করতেন। ওই সময়ে তার ভয়ে প্রতিবাদ করাতো দূরের কথা, কেউ মুখ খোলার সাহস করেনি।

যার ফলে শিক্ষার মান দিনে দিনে নিন্মগতি, শিক্ষার্থী হ্রাস এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়া এবং একই সাথে হ্রাস পাচ্ছে পাসের হার। এ ব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

হাজীগঞ্জে ফল বিপর্যয়ের পর টেবিলে পা রেখে ঘুমানো প্রধান শিক্ষকের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল

Update Time : 09:35:05 am, Thursday, 17 July 2025

এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয়ের পর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মো. তাহের হোসেন চৌধুরী নামের এক প্রধান শিক্ষকের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয়েছে তোলপাড়। চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তিনি উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের দেশগাঁও জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা লাটে তুলে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে তিনি তাঁর অফিস কক্ষে চেয়ারে হেলান দিয়ে দুই পা টেবিলের উপর রেখে ঘুমাচ্ছেন। এমন দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর উপজেলা ব্যাপী নানান আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তবে ছবিটির সত্যতা তুলে ধরেন ওই প্রধান শিক্ষক।

তিনি বলেন, ছবিটি ৭/৮ বছর আগের। তখন আমি হঠাৎ করে স্টোকজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। ওই সময়ে বিদ্যালয়ের পিয়ন (অফিস সহায়ক) আমার পা দুটি টেবিলের উপর তুলে দেন।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সারাদেশে একযোগে সকল শিক্ষাবোর্ডের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ফলাফলে উপজেলায় পাশের হার ৬৭.২৯ শতাংশ। অথচ দেশগাঁও জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার মাত্র ৩২.৮৮ শতাংশ।

যা ফলাফলের বিপর্যয়ের দিক থেকে উপজেলার তৃতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৭৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে মাত্র ২৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪৯ জন। পাশ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন, এ গ্রেড ১৬ জন, এ মাইনাস ৬ জন ও সি গ্রেড ১ জন।

এবছর ফলাফল বিপর্যয়ের পাশাপাশি কমেছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও। গতবছর (২০২৪) বিদ্যালয়টি থেকে ৯৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করে ৯২ জন। পাশের হার ৯২ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ জন, এ গ্রেড ২৯ জন, এ মাইনাস ১৭ জন, বি গ্রেড ১৪ জন ও সি গ্রেড ২৮ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ৫ জন।

এদিকে এ বছর ফলাফল বিপর্যয়ে প্রধান শিক্ষক মো. তাহের হোসেন চৌধুরীকে দ্বায়ী করেন অভিভাবকসহ স্থানীয় ও এলাকার লোকজন। তাঁর দুই পা টেবিলের উপর রেখে ঘুমানোর ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এরপর থেকেই তাঁকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

সাইফুর রহমান আখন্দ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহার প্রধান শিক্ষকের ছবিটি পোস্ট করেন। ওই পোস্টে জাফর খান নামের একজন কমেন্ট করেন। তিনি প্রধান শিক্ষককে উদ্দশ্যে করে কমেন্টে লিখেন, ছাত্র জীবনে কতো কষ্ট করে পড়ালেখা করে চাকুরীটা পেয়েছে। এখনি তো একটু সুখে থাকার সময়, তাই আরকি।

মারজাহান আক্তার কমেন্ট করেন, এ জন্যই প্রতিষ্ঠানটি আজ বিলুপ্তির পথে।

বাহার হাবিব উল্যাহ নামের একজন মেঘনাপোস্ট নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে পোস্টকৃত ওই ছবির কমেন্টে লিখেন, এখর তার বক্তরা (ভক্ত) বলবে উনি (ওনি) অসুস্থ হয়েও স্কুলে এসেছেন, ছাত্রদের উন্নতির কথা চিন্তা করে। অথচ বহু বছর আগ থেকেই শুনেছি বখাটে এবং মামলাবাজ উনি ঘুষ দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে নেন।

অপর দিকে ফারহানা পাটওয়ারী লিখেন, এট ওনার স্টক (স্টোক) করার সময়ের ছবি।

মো. নূর আলম পাটওয়ারী লিখেন, উনি তখন অসুস্থ ছিল স্টক (স্টোক) করার কারণে। আমরা অনেকেই গেছিলাম ওনাকে দেখতে। আর ফেল করছে, এখানে স্যারদের কোন দ্বায়ভার নেই। পোলাপান (শিক্ষার্থী) বাসায় বসে পড়াশুনা করে না। সারাদিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে।

কয়েকজন অভিভাবক, স্থানীয় ও এলাকাবাসী জানান, প্রধান শিক্ষক গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে বিদ্যালয়টিতে প্রভাব বিস্তার করেছেন। তিনি তাঁর ইচ্ছেমতো বিদ্যালয়টিতে আসা-যাওয়া করতেন। ওই সময়ে তার ভয়ে প্রতিবাদ করাতো দূরের কথা, কেউ মুখ খোলার সাহস করেনি।

যার ফলে শিক্ষার মান দিনে দিনে নিন্মগতি, শিক্ষার্থী হ্রাস এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়া এবং একই সাথে হ্রাস পাচ্ছে পাসের হার। এ ব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।